অনলাইন ডেস্ক:
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে দেশের প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও পুলিশের মতো শিক্ষাব্যবস্থায়ও বড় পরিবর্তন আসছে। আগামী বছরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত হচ্ছে ঐতিহাসিক গ্রাফিতি এবং বাদ পড়ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও উক্তি। এ ছাড়া বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসে বিভিন্ন ব্যক্তির ভূমিকা সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হবে, যাতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাসে সকলের অবদান তুলে ধরা যায়। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নিশ্চিত করেছে— এই পরিবর্তনগুলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ ও ইতিবাচক মূল্যবোধ গড়ে তুলবে।
প্রথমত, জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করা হবে। দ্বিতীয়ত, বইয়ের প্রচ্ছদে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও উক্তি বাদ দেওয়া হবে। তৃতীয়ত, বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসে প্রত্যেকের ভূমিকা সঠিকভাবে সন্নিবেশিত হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান জানিয়েছেন, ইতিহাসে প্রত্যেকের ভূমিকা সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার ইতিহাসে যাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, তাদের বিষয় যুক্ত হবে। তিনি জানান, আগামী বছরের পাঠ্যপুস্তক ২০২৪ সালের বিদ্যমান পাঠ্যক্রম অনুযায়ী নয়, বরং ২০১২ সালের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী হবে।
গণঅভ্যুত্থানের চেতনা বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে দেয়াল চিত্রকে ব্যবহার করা হয়েছে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছাত্ররা গ্রাফিতি আঁকতে শুরু করেছে, যেখানে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং অধিকার নিশ্চিত করার দাবির প্রতিফলন দেখা যায়।
এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জুলাই মাসের গ্রাফিতি সব বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হবে না, কিছু কিছু বইয়ে এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হবে। বর্তমানে ঘটনা সাম্প্রতিক হওয়ায় লেখার জন্য সময় কম, তাই কিছু বইয়ের ব্যাক কাভারে গ্রাফিতি রাখা হবে।
শেখ হাসিনার উক্তিগুলো বইয়ের পেছনে থেকে বাদ দেওয়া হবে। অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেছেন, “এসব অপ্রাসঙ্গিক। শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক ধারণার উদ্রেক না হয়, সে কারণে এগুলো বাদ দেওয়া হচ্ছে।”
বইয়ের পেছনে চিরন্তন কিছু বাণী যুক্ত করা হবে। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা বেশি গুরুত্ব পেয়েছে, কিন্তু এতে অন্যদের ভূমিকা সঠিকভাবে উপস্থাপন হয়নি। আগামী বইয়ে জিয়াউর রহমানসহ অন্যদের ভূমিকা যুক্ত হবে। এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যাদের ভূমিকা রয়েছে, তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হবে।”
গণঅভ্যুত্থানে নিহত আবু সাঈদ এবং মীর মাহফুজুর রহমানের বিষয়েও পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির আলোচনা হয়েছে, তবে মন্ত্রণালয় থেকে এখনও অনুমোদন আসেনি। তিনি জানান, সিদ্ধান্ত এলেই বলা যাবে। এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, “ছাপাখানায় কিছু বই চলে গেছে, কিছু বই এখনও যাওয়ার অপেক্ষায় আছে।”
আগামী বছরের পাঠ্যবইয়ে যাতে কোনো গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতি আঘাত না করা হয়, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, “দেশের মূল্যবোধ, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু থাকবে না। এসব পরিবর্তন নিশ্চিত করতে এনসিটিবি কাজ করছে, যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুস্থ ও ইতিবাচক মূল্যবোধ গড়ে ওঠে।’
সূত্র: বিবিসি
Leave a Reply