আমিনুল ইসলাম, ফুলবাড়ি প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বাদাম খেতে ডগা কাটা ও পাতা ছিদ্রকারী বিষাক্ত পোঁকার হানায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষক। খেত রক্ষায় কীটনাশক প্রয়োগ করেও সন্তোষজনক ফলাফল পাচ্ছেন না তারা।
সরেজমিন শুক্রবার বিকালে উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চরগোরকমন্ডল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ওই এলাকার কষকেরা চরের জমিতে ব্যাপক বাদামের চাষ করেছেন। সবুজ বাদাম খেতে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। দুর থেকে সবুজ বাদাম খেতে দেখলে মন জুরানোর কথা। কিন্তু কাছে গিয়ে দেখলে মুহূর্তেই মন খারাপ হয়ে পড়ে। দেখা যায়,কৃষকের কষ্টের ফসলে বিষাক্ত পোঁকার হানা। প্রতিটি বাদামের কচি ডগা ও পাতা ছিদ্র করছে । এক পর্যায়ে পাতায় পচন ধরে মরে যাচ্ছে গাছ। এভাবে বিঘার পর বিঘা বাদাম খেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অনেক বাদাম চাষী নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, দুর্যোগকালীন সময়ে কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পরামর্শ তো দূরের কথা দেখাই পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে তারা স্থানীয় কীটনাশক ব্যবসায়ীদের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে ঔষুধ প্রয়োগ করেছেন। ফসল রক্ষায় ঔষধ ছাড়াও কৃষকেরা নিড়ানী, পানি ও সার প্রয়োগ করছেন।তবে এতে প্রকাশিত ফল পাননি।
উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গোরকমন্ডল গ্ৰামের বাদাম চাষি হানিফ উদ্দিন, রসুল মিয়া, আকবর আলী ও চান্দু মিয়া বলেন, আমরা প্রতি বছর লাভের আশায় হাঁড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে বাদাম চাষ করি। আবাদ ভালো হলে বিঘা প্রতি ৮-৯ মণ বাদাম পাওয়া যায়। বাদামের বাজার মুল্যও ভালো হলে লাভবান হই। এ কারনে এবারও বাদাম চাষ করি। খেতেও ভালো হয়েছে। কিন্তু গত ১০ থেকে ১৫ দিন থেকে হঠাৎ করে খেতে বিষাক্ত পোঁকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকা কচি মগডাল কেটে নষ্ট করছে। নতুন গজিয়ে ওঠা পাতাগুলো ছিদ্র করে জালের মতো করেছে। কাটা পাতায় পছন ধরেছে। বস্তি গোড়কমন্ডল গ্ৰামের কৃষক নুরুল আমিন বলেন, স্থানীয় কীটনাশক বিক্রেতার পরামর্শে ঔষধ প্রয়োগ করে অনেক চেষ্টা করছি । মগডাল কাটা ও পাতায় পচন রোধ হচ্ছে না। বাদাম নিয়ে খুবই চিন্তিত।
গোড়কমন্ডল নামাটারীর বাদাম চাষি লাভলু মিয়া বলেন, চার বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি। পাট, ভুট্রার চেয়ে বাদামে পরিশ্রম ও খরচ কম। এ জন্য আমাদের চরাঞ্চলের অনেক কৃষক বাদাম চাষ করেছেন। হঠাৎ করে আমার খেতের বাদাম গাছের মগডাল গুলো মরে ঝরে যাচ্ছে।এরপর দেখি মগডালে বিষাক্ত পোঁকা আক্রমণ করেছে। ফসল রক্ষার্থে কীটনাশক স্প্রে করেছি। কোনো ঔষধ ও কাজ করছে না। ফসল রক্ষা করতে না পারলে অনেক বড় লোকসান পড়বো।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, এ বছর উপজেলায় ৭ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছে। বাদাম চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ মাঠ পর্যায়ে শস্য উৎপাদনকারী চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছেন। তবে চরগোরকমন্ডলের বাদাম চাষিরা তাদের বাদাম খেতের সমস্যার বিষয়টি কৃষি বিভাগের কাউকে জানায়নি। তারপরও ওই সব কৃষকদের ফসল রক্ষার্থে মাঠে গিয়ে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
Leave a Reply