আমিনুল ইসলাম,ফুলবাড়ী প্রতিনিধি:
মানিক রহমান একজন আজন্ম স্বপ্নবাজ। হাতহীন বালকের কদম জোড়াতেও নানা প্রতিবন্ধকতা। কোনো প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারছে না। জোর কদমে এগিয়ে চলছে তার স্বপ্ন যাত্রা। শরীর দিয়ে মানুষের বড় ছোট নির্ধারণ করা যায় না। কোথায় আছে মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। স্বপ্ন পূরণ আর বেশি দূরে নয়। অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে সে এবারও পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পরীক্ষার সদ্য সমাপ্ত ফলাফলে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। সে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।এর আগে ২০২২ সালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পায়। শুধু তাই নয় পিইসি ও জেএসসিতে পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাসসহ ট্যালেন্ট পুলে বৃত্তি লাভ করে। তার ধারাবাহিক সাফল্যে বাবা-মা প্রতিবেশী শিক্ষক-সতীর্থ সহ এলাকাবাসী খুশি।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামে মানিক রহমানের বাড়ি। ওষুধ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও মা সহকারী অধ্যাপক মরিয়ম বেগমের জ্যেষ্ঠ পুত্র। শুধু পা দিয়ে লেখা নয়। মোবাইল ও কম্পিউটার চালানো, ইন্টারনেট ব্রাউজিং এ পারদর্শী। এছাড়াও নাটক, কৌতুক, ব্যান্ড ও ভাওয়াইয়া সঙ্গীতে সমান পারদর্শী। সদা হাস্যোজ্জ্বল ও কৌতুক নিয়ে মেতে ওঠা মানিক সহপাঠীদের কাছে খুব প্রিয়। ভবিষ্যতে সে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। স্বপ্ন পূরণে সবার দোয়া কামনা করে সে।
মানিকের বাবা মিজানুর রহমান ও মা মরিয়ম বেগম জানান, আমাদের দুই ছেলে । মানিক বড়। ছোট ছেলে মাহীম। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। মানিক শারিরীক প্রতিবন্ধী এটা আমরা মনে করি না। জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকলেও ছোট থেকে আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। সমাজে অনেক সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলে-মেয়েদের চেয়েও মানিক পিএসসি ও জেএসসি ও এসএসসিতে আশাব্যঞ্জক ফলাফল করেছে । এটা আমাদের গর্ব। সবাই ছেলেটার জন্য দোয়া করবেন। সে যেন সুস্থ সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকতে পারে। তার স্বপ্নপূরণ হয়। সমাজে উদাহরণ হতে পারে।
মানিক রহমান বলেন, আমার দুটো হাত না থাকলেও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং সবার দোয়া ও ভালোবাসায় ভাল ফলাফল করতে পেরেছি। দোয়া করবেন যেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বাবা-মাসহ সবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।
সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন,শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও মানিক রহমান আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। সে যেমন তার মা বাবার কাছে হীরা মানিক। ঠিক আমাদের কাছেও। তার ভালো ফলাফলের জন্য প্রতিষ্ঠানের সবাই মুগ্ধ। দোয়া করি তার স্বপ্নগুলো যেন পুরণ হয়।
Leave a Reply