1. editor1@kurigramsongbad.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
  2. sifat@kurigramsongbad.com : sifat :
  3. siteaccess@pixelsuggest.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
সাম্প্রতিক :
রংপুরে বাসচাপায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত: নিহতদের একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী লালমনিরহাট জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনিছুর, সদস্য সচিব হাসান কুড়িগ্রামে শহীদ রাশেদুলের কবর নদীতে বিলীনের শঙ্কা, সংরক্ষণের দাবি পরিবার ও এলাকাবাসীর” জমি দরের কারসাজি ফাঁস রৌমারীতে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকিরের পিটিআই প্রকল্প বাতিল কুড়িগ্রামে ভেজাল আইসক্রিম কারখানায় অভিযান: ৫২ বস্তা পণ্য ধ্বংস, মালিককে জরিমানা ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত: ইসি জকসু গঠনতন্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত চেয়েছে জবি প্রশাসন বাজেট না বাড়লে যমুনা অভিমুখে লং মার্চ: জবি শিক্ষক শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ জেলা প্রশাসক

শিক্ষার অগ্রদূত: রোস্তম আলী বিএ.বিএড-এর শিক্ষার আলো ছড়ানোর গল্প

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৫৬ বার পড়া হয়েছে

ফরিদুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি: 

কোদালকাটির প্রান্তরে, যেখানে নদীর কল্লোলে জীবন দোলা খায়, সেখানে এক মহান ব্যক্তিত্বের জন্ম হয়েছিল—রোস্তম আলী বিএ.বিএড। তিনি ছিলেন এক স্বপ্নদ্রষ্টা, যার হৃদয়ে ছিল মানবতার সেবা এবং শিক্ষার প্রতি এক গভীর ভালোবাসা। তাঁর জীবনের প্রতিটি ধাপ ছিল একটি শিক্ষামূলক যাত্রা, যেখানে তিনি শিক্ষা এবং মানবতার জন্য নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন।

তাঁর গল্প শুধু এক শিক্ষকের কাহিনী নয়; এটি একটি সংগ্রামের গল্প, যেখানে তিনি সমাজকে পরিবর্তনের পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। রোস্তম আলী আজ শুধু কোদালকাটির নয়, বরং পুরো বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এক আদর্শ ব্যক্তিত্ব, যিনি প্রতিদিন নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষা ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আলো নিয়ে হাজির হন।

শৈশব ও শিক্ষাজীবন: ১৯৩৮ সালের ৫ জানুয়ারি, কোদালকাটির বুকে জন্ম নেন রোস্তম আলী, যেনো শিক্ষার মশাল হাতে ধরতে প্রস্তুত এক আলোকবর্তিকা। পিতা জয়েন উদ্দিন মুন্সি ও মাতা লালজান বাওয়ার কনিষ্ঠ সন্তান হিসেবে শুরু হয় তাঁর পথচলা। আট ভাইবোনের মধ্যে ছোট হলেও তাঁর স্বপ্ন ছিল বিশাল। কোদালকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর শিক্ষার শুরু। এরপর ১৯৪৬ সালে, মরিচাকান্দী এম ই স্কুল থেকে (আজকের রাজিবপুর সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়) ষষ্ঠ শ্রেণী শেষ করে ভর্তি হন দেওয়ানগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৫৪ সালে মেট্রিক পাস করেন। শিক্ষার প্রতি তার গভীর আকর্ষণ তাকে গাইবান্ধা কলেজে নিয়ে যায়, যেখানে তিনি ইন্টারমিডিয়েট ও বিএ পাস করেন।

শুধু এখানেই থেমে থাকেননি রোস্তম আলী। শিক্ষার তৃষ্ণা তাকে পৌঁছে দেয় ময়মনসিংহের বিএড কলেজে, যেখানে তিনি ১৯৬৬ সালে বিএড ডিগ্রি অর্জন করেন। এ যেন তার শিক্ষার মুকুটে জুড়ে দেয়া এক সোনালী পালক। রাজিবপুরে তিনিই প্রথম বিএড ডিগ্রিধারী, এবং তার এই অর্জন গোটা এলাকার মানুষের কাছে আশার আলো হয়ে ফুটে ওঠে।

কর্মজীবন: রোস্তম আলীর কর্মজীবন শুরু হয় টাপুর চর জুনিয়র স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে, যেখানে তিনি কষ্টে গড়া শিক্ষার জগতের মূল ভিত্তি স্থাপন করেন। কিন্তু এখান থেকে সরে গিয়ে বৈরাতী জুনিয়র স্কুলে যোগ দেন। সেখানে কিছুদিন পরে মীর্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি পান। তবে এলাকার মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলোকরেখা ছড়াতে তিনি স্থানীয় যাদুর চর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। স্থানীয় জনগণ ও রাজিবপুর এর তৎকালীন চেয়ারম্যান মরহুম ছলিম উদ্দিন আহমেদের অনুরোধে রাজিবপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত সেখানে অবদান রাখতে থাকেন।

কোদালকাটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা:
এলাকার মানুষের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তা করে রোস্তম আলী কোদালকাটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। একদিন, স্থানীয় চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ্ব রফিয়ল হক যখন এসএসসি পাস মেয়ের অভাবের কথা জানালেন, তখন রোস্তম আলী উপলব্ধি করেন যে, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। এলাকার লোকজনের মধ্যে মিটিং অনুষ্ঠিত হলে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করলেও মরহুম হারু শেখ দেওয়ানী, ফয়জাল হক মেম্বার ও বাদশা মেম্বারের সাহসে তিনি একটি টিনশেডের ঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। রাজশাহী বোর্ডের পরিচিতি কাজে লাগিয়ে, দ্রুত অনুমোদন নিয়ে কোদালকাটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। তিনি ছিলেন সেই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক, যেখানে শিক্ষার আলো ছড়াতে তিনি সমর্পিত ছিলেন। ২০০৩ সালে এই বিদ্যালয় থেকেই কর্ম জীবনের ইতি টানেন তিনি।

সাজাইয়ের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: ১৯৬৯ সালে সাজাইয়ের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা, রোস্তম আলীর আরেকটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এলাকার এমপি মরহুম পাপু মিয়া যখন তার নির্বাচনী এলাকার জন্য ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন, তখন তিনি তার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানান। প্রথমে প্রতিশ্রুতি দিলেও পরবর্তী তে তার কথার বরখেলাপ করেন। তবে রোস্তম আলী বিএ.বিএড ও থেকে যাওয়ার পাত্র নন। সংসদ সদস্য পাপু মিয়া কে প্রতিশ্রুতি পালন করতে একপ্রকার বাধ্য করেন। রোস্তম আলী নিরলস চেষ্টা করেন, এবং এলাকার মানুষের মধ্যে শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে, সাজাইয়ের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সফল হন। এই বিদ্যালয়টি স্থানীয় শিশুদের জন্য এক নতুন আশা নিয়ে আসে, যেখানে তাঁরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করে এবং ভবিষ্যতের পথ তৈরি করে।

এছাড়াও, রোস্তম আলী মধ্য চর সাজাই রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায়ও ভূমিকা রাখেন। এলাকার সন্তানদের শিক্ষার জন্য তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করে বিদ্যালয়টি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান দিয়ে নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। তাঁর দৃষ্টিতে, শিক্ষা ছিল একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যা এলাকার যুবকদের জীবনের বাস্তবতার সঙ্গে জড়িত করতে সক্ষম।

চর সাজাই দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা: তার গ্রাম চর সাজাইয়ে বেশ বড় একটা ফ্লাট শেল্টার (আশ্রয়ন কেন্দ্র) ছিলো। সেটি নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়লে কুড়িগ্রাম ৪ আসনের তৎকালীন এমপি মরহুম গোলাম হোসেন সেটি লিজ দেওয়ার জন্য নির্দেশ। তখন রোস্তম আলী কোদালকাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ্ব রফিয়ল হক কে বলে লিজ দেওয়া সেই আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে একটি ঘর নিয়ে শুরু করেন চর সাজাই দাখিল মাদ্রাসা।
শিক্ষার ক্ষেত্রে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি যে গুরুত্ব দিয়েছেন, তা এলাকার মানুষের মনে চিরকালীন প্রভাব ফেলেছে। চর সাজাই দাখিল মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে আজকের প্রজন্ম নতুন সুযোগের সন্ধান পাচ্ছে, যা তাঁদের জীবনের গতি পরিবর্তন করছে।

সংগ্রাম ও স্বপ্ন: রোস্তম আলীর জীবনের প্রতিটি ধাপ ছিল সংগ্রামের এক মহাকাব্য। তিনি সমাজের অন্ধকারে আলোর বাতিঘর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, যেখানে শিক্ষা ছিল তাঁর প্রধান অস্ত্র। তিনি জানতেন যে, শিক্ষার অভাব শুধুমাত্র একটি ব্যক্তি নয়, বরং একটি পুরো সমাজকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই তিনি সবসময় সংগ্রাম করেছেন এবং এলাকার যুবকদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, শিক্ষা ছাড়া সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়। তাঁর স্বপ্ন ছিল—একটি শিক্ষিত জাতি, যেখানে প্রতিটি সন্তান শিক্ষার আলোতে আলোকিত হবে।

রোস্তম আলী বিএ.বিএড ছিলেন এক প্রাজ্ঞ শিক্ষক, যার জীবন ছিল একটি মহান শিক্ষাদানের কাহিনী। তিনি কেবল নিজের জীবনকে নয়, বরং স্থানীয় সমাজের ভবিষ্যৎকে নির্মাণের জন্য সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আজও গর্বের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে তিনি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। কোদালকাটির মানুষের কাছে তিনি একজন কিংবদন্তী, যিনি অন্ধকারকে দূর করার জন্য শিক্ষার মশাল হাতে নিয়ে অবিরাম পথ চলেছেন। রোস্তম আলীর জীবন আমাদের শিক্ষা এবং মানবতার প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়—“শিক্ষা হলো জাতির অগ্রগতির মূলশক্তি।”

এভাবে, রোস্তম আলী আজও সমাজের কাছে এক রিয়েল লাইফ হিরো। তাঁর সংগ্রাম, স্বপ্ন, এবং মানবতার প্রতি দায়িত্ববোধের কারণেই তিনি আজকের প্রজন্মের কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছেন। তাঁর শিক্ষার আলো আজও জ্বলছে, যা নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে প্রেরণা জোগাচ্ছে, এবং তিনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা আজও বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে চলেছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর


Kurigram Songbad © 2025. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest
error: Content is protected !!