আমিনুল ইসলাম,ফুলবাড়ী প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বৈরী আবহাওয়ায় ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ধানের শীষ সাদা হয়ে যাওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ফলন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষক । কখনো অনাবৃষ্টি,তীব্র গরম । আবার কখনও বৃষ্টি , দিন ব্যাপী মেঘলা আকাশ। এই সব বৈরী আবহাওয়ার কারণে ধানে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার কারণ বলছেন কৃষি বিভাগ।
কৃষকেরা জানান,চলতি আমন মৌসুমে তাঁরা বৈরী আবহাওয়ার ফাঁদে পড়েছেন। রোপা আমন লাগানোর পর অনাবৃষ্টির বিরূপ প্রভাবে পড়েন। খরায় জমি ফেটে চৌচির হয় আমনের খেত।ফসল বাঁচাতে কৃষকদের টানা সেচ দিতে হয়। এরপর দেখা দেয় বিভিন্ন রোগবালাই। রোগ-বালাই মুক্ত করতে জমিতে বালাইনাশক স্প্রে করেন কৃষকরা। এখন দেখা দিয়েছে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক।এর ফলে ধান গাছ তাজা থাকলেও দানা বাঁধার আগেই শীষ সাদা হয়ে যাচ্ছে । এ অবস্থা চলতে থাকলে কাঙ্খিত ফলন তারা পাবেন না বলে জানিয়েছেন। রোগ প্রতিরোধে তারা ব্যাকটেরিয়াও ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করছেন।ফলে চাষে ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সাথে কাঙ্ক্ষিত ফলন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষক। বর্তমানে বৃষ্টিতে আমনের খেতে পানি জমায় কিছুটা স্বস্তিতে আছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
তীব্র রোদ আর গরমের পরে গত কয়েকদিন থেকে উপজেলা জুড়ে নেমেছে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির ধারা। রাতে ও দিনে থেমে থেমে গুড়িগুড়ি, কখনো হালকা, কখনোবা মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে বৃষ্টিতে উঁচু নিচু প্রায় সব জমিতে পানি জমেছে।
ঘোগারকুটি গ্রামের কৃষক মজু ব্যাপারী, আশরাফুল আলম ও আমিনুল ইসলাম জানান, আমন আবাদের শুরু থেকে খরার ধকল যাচ্ছে। সেচ পাম্প চালু করে জমিতে সেচ দিতে হয়ে তাতে আবাদে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছিল। অবশেষে আল্লাহর রহমতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আবাদ নিয়ে অনেকটা স্বস্তিতে আছেন বলে জানান তারা।
শাহ বাজার এলাকার কৃষক শাহজাহান আলী জানান, খরার কারণে ধানখেতে খোল পঁচা, মাজরা ও ছত্রাক জনিত রোগের দেখা দিয়েছে। এখন বৃষ্টি হওয়ায় খেতের রোগবালাই অনেকটা কমবে বলে জানান তিনি। একই এলাকার সফিয়ার রহমান রব্বানী জানান, আর কয়েকদিন পরে ধানের শীষ বের হবে। এই সময়ে জমিতে পানির অত্যন্ত প্রয়োজন। এমন সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় আবাদে খুব উপকার হয়েছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, অনাবৃষ্টি ও তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে ধানখেতে ছত্রাক ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বৃষ্টিতে ধানখেতে পানি জমায় মাজরা, পাতা মোড়ানো ও ছত্রাকজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব অনেকটাই কমে আসবে। তবে কিছু কিছু ধানখেতে ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে পচন দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে বৃষ্টি প্রবণতা কমে গেলে আক্রান্ত খেতে অনুমোদিত মাত্রায় বালাইনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, উপজেলায় এবারে ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি অর্জিত হয়েছে। ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক দমনে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এগুলো মেনে কাজ করলে কৃষকরা ভালো ফলনও পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
Leave a Reply