কোদালকাটি ইউনিয়নের বুকে ব্রহ্মপুত্রের নিরবচ্ছিন্ন তাণ্ডব আজ যেন গ্রামবাসীর জীবনের প্রতিটি শিরায় শিরায় প্রবাহিত বেদনার আখ্যান। এই নদীর ধ্বংসযজ্ঞে প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে শতাব্দীর ইতিহাস, বেঁচে থাকার মূলভিত্তি, আর অজস্র স্বপ্নের অমলিন শিখা। গত কয়েকদিনে প্রায় ৫০টি পরিবার হারিয়ে ফেলেছে তাদের ঘরবাড়ি, আর ফসলি জমি প্রতিনিয়ত বিলীন হয়ে যাচ্ছে এই নির্মম ভাঙনের মুখে।
এই বিপর্যয় থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়, কোদালকাটি ইউনিয়নের মানুষ আজ একত্রিত হয়েছে, তাদের হৃদয়ের একমাত্র আর্তনাদ—ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনকে রোধ করতে সরকারের সুদৃষ্টি আকর্ষণ।
আজ সকাল ১০ ঘটিকায় পাইকান্টারী পাড়া জুড়ে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে শত শত মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। মোঃ আমিনুর রহমান মাষ্টার, কোদালকাটি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সমাজকর্মী, এই মানববন্ধনের নেতৃত্ব দেন। ভাঙনের ধারায় আক্রান্ত প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে তাদের মাটি, জমি আর জীবনের লড়াইতে সংহতি প্রকাশ করেন স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জোদ্দার, যিনি গ্রামবাসীর এই সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করে তোলার আহ্বান জানান। আরো উপস্থিত ছিলেন ইউপি সদস্য নুরুল আমিন, তরুণ সমাজসেবক মোঃ শাহিন আলম সরকার এবং কোদালকাটি দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ সাইদুর রহমান নাসির যারা ভাঙন রোধের দাবি জানিয়ে তাদের দৃঢ় সংকল্পের কথা তুলে ধরেন। নদী ভাঙনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একতাবদ্ধ হতে কোদালকাটি ইউনিয়ন যুবদলের তরুণ নেতা বাবু, মোশারফ, আবু সাঈদ ও মেহেদী, সাঈদ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
বক্তৃতায় বক্তারা প্রতিনিয়ত নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়া জনপদের বেদনাবিধুর চিত্র তুলে ধরেন। কোদালকাটির মাটি শুধু কৃষিজমি নয়, এটি তাদের শিকড়, তাদের অস্তিত্বের নিদর্শন। প্রতিটি ইঞ্চি মাটি যেন যুগ যুগ ধরে তাদের জীবনের সাথে জড়িত। বক্তাদের মধ্যে একজন আবেগভরা কণ্ঠে বলেন, ‘এই মাটি আমাদের জীবন, আর নদী তা গিলে ফেলছে। আমাদের শিকড় উপড়ে ফেলার এই নির্মম প্রক্রিয়া বন্ধ না হলে, কোদালকাটি একদিন শুধুই ইতিহাস হয়ে থাকবে।’
সরকারের কাছে এলাকাবাসীর আবেদন, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন রোধে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তীব্র ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণ এবং নদীশাসন ব্যবস্থা ছাড়া কোদালকাটি ইউনিয়নের মানুষদের আর কোনো আশ্রয় নেই। তাদের এই সংগ্রামে দেরি করা মানে আরও অনেক জীবনের সর্বনাশ।
গত কয়েকদিনে বিলীন হওয়া ঘরবাড়ি আর ফসলি জমির ওপর দাঁড়িয়ে, গ্রামবাসীরা তাদের হারানো জীবন ফিরিয়ে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় তীব্রভাবে লড়াই করছেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়ির ধ্বংসাবশেষের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো আজ জানে, তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে এই নদীকে রুখতে হবে।
কোদালকাটি ইউনিয়নের মানুষের এই লড়াই শুধু একটি গ্রামের অস্তিত্ব রক্ষার গল্প নয়, এটি একটি সংগ্রামী জাতির পরিচয়। এই মানববন্ধন প্রমাণ করেছে, ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর যেকোনো সংকটের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে, আর তাদের মাতৃভূমির জন্য তারা লড়ে যাবে শেষ পর্যন্ত।
Leave a Reply