1. editor1@kurigramsongbad.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
  2. sifat@kurigramsongbad.com : sifat :
  3. siteaccess@pixelsuggest.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
সাম্প্রতিক :
পাকিস্তানে সিন্ধু নদের এক ফোঁটা পানিও যেতে দেবে না ভারত: বললেন ভারতীয় মন্ত্রী রৌমারীতে পরকীয়ার অভিযোগে পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার ছাত্র মজলিসের রাজশাহী বিভাগীয় জোনাল কর্মশালা অনুষ্ঠিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চূড়ান্ত ভর্তি কার্যক্রম শুরু ২৭ এপ্রিল রাবির ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত; ৬ বিভাগের জন্য নিতে হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা লিবিয়ায় বন্দিজীবনের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা: কুড়িগ্রামের ইয়াকুবের বর্ণনা ইসরায়েলের বর্বরোচিত যুদ্ধের অবসান হোক বাংলাদেশে বড় আকারে লোডশেডিংয়ের আশঙ্কা: বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জ বিদেশে বাংলাদেশিদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়,চক্রের মূলহোতা জাহিদ গ্রেফতার বেরোবিতে গুচ্ছ সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন: উপস্থিতি প্রায় ৯৬%

এক ফিরে আসার কাহিনী

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

মাহমুদ অর্পণ , স্পোর্টস ডেস্ক:

এয়ারবাস ৩৪০/৬০০ এর ক্যাপ্টেন গিয়েরমো গোমেজ পারাতচা ২০১০ বিশ্বকাপের স্পেন দল নিয়ে জোহানেসবার্গের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন। আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা জানতেন তিনি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান হবার কারনে সাউথ আফ্রিকা গামী বিমানে চড়তে পেরেছেন।

সেটি ছিল ইনিয়েস্তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে হৃদয়বিদারক বছর। বিশ্বকাপ শুরুর ১৩ মাস পূর্বে ইনিয়েস্তা উরুর ইনজুরিতে পরেন। সেটা ছিল প্রলয়ংকরী এক ঝড়ের শুরু মাত্র। এরপর আরো চারবার তিনি একই ইনজুরিতে আক্রান্ত হন। বার্সেলোনার হয়ে মৌসুমের শেষদিকে তিনি মাত্র ৩০ মিনিট মাঠে নামতে পেরেছিলেন। এরকম প্লেয়িং টাইম এবং ইনজুরি প্রবণতা নিয়ে ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে বিশ্বকাপের মত আসরে কোন ফুটবলারের দলে জায়গা হয় না।

আত্মিক এবং মানসিক দিক থেকে ইনিয়েস্তা ভেংগে পরেছিলেন। যখন স্পেনের প্রত্যেকে প্রার্থনা করছিল ইনিয়েস্তা হয়তো বিশ্বকাপের আগেই ফিট হয়ে উঠবেন, ঠিক তখন ইনিয়েস্তার মনের গহীনে এক গভীর ক্ষত তাকে যন্ত্রনা দিয়ে যাচ্ছিলো: হয়ত তিনি খেলার জন্য ফিজিক্যালি ফিট হয়ে উঠবেন। কিন্তু মানসিক ভাবে তিনি কি আবারো আগের মত নিজেকে ফিরে পাবেন?

ইনজুরি ফেরত ইনিয়েস্তাকে পুরনো রূপে ফিরিয়ে আনতে তাঁর লাগেজে বার্সেলোনার ফিজিও এমিলি রাইকার্ট একটি ডিভিডি দিয়েছিলেন। ইনজুরি থেকে আরোগ্য লাভের পর প্লেয়ারদের পুনর্বাসন অর্থাৎ মানসিক এবং শারীরিক ভাবে আগের ফর্মে ফিরিয়ে আনার কাজটি বার্সায় করে থাকেন ফিজিও এমিলি রাইকার্ট। আর তাঁর বানানো ঐ ডিভিডি সদ্য ইনজুরি ফেরত এবং মানসিকভাবে ভেংগে পরা ইনিয়েস্তাকে নতুন করে জাগিয়ে তুলতে এবং বিশ্বকাপের ইতিহাসের পাতায় স্প্যানিশ রূপকথা লিখতে বিশাল ভূমিকা রেখেছিলো।

২০০৯ চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালের ১০ দিন পূর্বে ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচে ইনিয়েস্তার উরুর ২ সেন্টিমিটার জায়গা বাজেভাবে কেটে গিয়েছিলো। রোমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালে ৬০ ভাগ ফিট ইনিয়েস্তা মাঠে নেমেছিলেন। পরবর্তীতে আরো সিরিয়াস ইনজুরির আশংকা এড়াতে ডাক্তাররা তাঁকে গোলে শট না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু আশংকাই সত্যি প্রমাণিত হলো। ইনজুরি বার বার ফিরে এলো। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে শুরু করলেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা।

২০০৯ গ্রীষ্মের শেষদিকে ইনিয়েস্তা আবারো বিধ্বস্ত হলেন। প্রি-সিজন ট্যুরে এস্পানিওল দল তখন ইটালিতে। এস্পানিওল ক্যাপ্টেন এবং ইনিয়েস্তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু দানি জার্কে নিজ হোটেল রুমে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তে তিনি স্পেনে তার প্রেগন্যান্ট গার্লফ্রেন্ডকে ফোন করার চেষ্টা করছিলেন। ইনিয়েস্তা এবং দানি জার্কে স্প্যানিশ ফেডারেশনের ইয়ুথ ক্যাম্পে এক সাথে বেড়ে উঠেছিলেন। আর সেখান থেকেই তাদের গভীর বন্ধুত্ব। ঘনিষ্ঠ বন্ধুর হঠাৎ মৃত্যু ইনিয়েস্তার মনে গভীর ক্ষত তৈরী করলো। নিজের শরীরের উপর আত্মবিশ্বাস আগেই হারিয়ে ফেলেছিলেন, এবারে মানসিক ভাবেও ভেংগে পরলেন তিনি।

তারপর একের পর এক ইনজুরির ছোবল তাকে গ্রাস করলো। ২০০৯ এর ডিসেম্বর এবং ২০১০ এর মার্চে দুইবার ইনজুরির কারনে মাঠের বাইরে ছিটকে গেলেন। তারপর ইন্টার মিলানের বিপক্ষে ২০১০ চ্যাম্পিয়ন্স লীগ সেমিফাইনালের প্রথম লেগের সাত দিন আগে তথা বিশ্বকাপ শুরুর দুই মাস আগে আরো একবার উরুর ইনজুরি হানা দিলো। স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়ছিলেন ইনিয়েস্তা। ক্যামেরায় তাঁর মুখের অভিব্যক্তি দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো তার চোখের কোনে চিকচিক করে ওঠা জল যতটা না ইনজুরির যন্ত্রনার কারনে, তার চাইতে বেশি নিজের শরীরের এভাবে বারবার বিশ্বাসঘাতকতা করার কারনে।

এরপর সিজনের বাকি অংশে ইনিয়েস্তা মাঠে নেমেছিলেন মাত্র চার মিনিটের জন্য। এ কারনে ধরেই নিয়েছিলেন বিশ্বকাপ স্কোয়াডে তাঁর জায়গা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বার্সেলোনার ফিজিও এমিলি রাইকার্ট বলেছিলেন: “ইনিয়েস্তার ইনজুরির ব্যাপারটা এমন এক পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো যে সে ভাবত এ অবস্থা থেকে কখনো কামব্যাক করতে পারবে না। সে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছিলো। আমি দেখেছিলাম সে ধীরে ধীরে হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছিলো।” কিন্তু তাঁর বর্তমান ফিটনেস আর মেডিকেল রিপোর্টকে ভ্রুক্ষেপ না করে বিশ্বকাপ দলে ইনিয়েস্তাকে রাখলেন স্প্যানিশ কোচ ভিসেন্তে দেল বস্ক।

প্লেনের ভেতর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভিক্টর ভালদেসের পাশের সিট ইনিয়েস্তার জন্য বরাদ্দ করলেন দেল বস্ক। প্রথম আধা ঘন্টা ঘুমানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে অতঃপর লাগেজ থেকে রাইকার্টের পরামর্শ অনুযায়ী ডিভিডি বের করে প্লে করলেন।

প্রথম যে ভিডিওটি ভেসে উঠলো সেটি ছিল ম্যানুয়েল এস্তিয়ার্তের। স্পেনে ব্যাপক জনপ্রিয় ওয়াটার পোলো খেলার এক কিংবদন্তী প্লেয়ার। ১৯৯২ এর বার্সেলোনা অলিম্পিকের ফাইনাল ম্যাচের শেষ মুহূর্তের খেলা চলছে। ইটালির বিপক্ষে তার নেতৃত্বাধীন স্পেন তখনো এগিয়ে। ম্যাচের শেষ বাশি বাজার মাত্র নয় সেকেন্ড আগে গোল করে সমতায় ফিরলো ইতালি। অতিরিক্ত সময়ে স্পেনকে হারিয়ে দিল ইটালি! এস্তিয়ার্তের মত দৃঢ়চেতা প্লেয়ারের চোখে জল। ভিডিওক্লিপটি থেমে গেল। মুহূর্তেই চার বছর পর ১৯৯৬ এর আটলান্টা অলিম্পিকের ছবি ভেসে উঠলো। এস্তিয়ার্তে সেবার ঠিকই স্বর্ণ জিতিয়েছিলেন তাঁর দলকে।

পরবর্তী ভিডিও স্প্যানিশ ফর্মুলা ওয়ান রেসার ফার্নান্দো আলোনসোর। ২০০৩ সালে ১৫০ মাইল গতিতে ট্র্যাক থেকে ছিটকে গিয়ে তাঁর গাড়ি ক্রাশ করলো। আশংকাজনক অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাচ্ছেন মেডিকেল কর্মীরা। এরপর ভিডিওটিতে দু বছর পরের ছবি ভেসে এলো। ছবিতে ফার্নান্দো আলোনসো ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ফর্মুলা ওয়ান ওয়ার্ল্ড টাইটেল জিতে পাগলের ন্যায় উদযাপন করছিলেন।

পরের ভিডিওটি ২০০৯ অস্ট্রেলিয়া ওপেনের ফাইনালে রজার ফেদেরারের বিপক্ষে সাড়ে চার ঘন্টার ধ্রুপদী লড়াইয়ের পর রাফায়েল নাদালের অবিস্মরণীয় জয়ের। ফেদেরারের চোখ গড়িয়ে অনর্গল জল ঝরছে। ম্যাচ হেরে ফেদেরার এতটাই মর্মাহত ছিলেন যে সেদিন রানার আপ স্পিচ দেবার সময় ঠিকমতো কথা বলতে পারেন নি। পরমুহূর্তের ভিডিও: ঐ বছরই ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের পর রজার ফেদেরারের সেলিব্রেশন।

কিছুক্ষণের বিরতি। এরপর শেষ যে ভিডিওটি ভেসে উঠলো সেটি ইনিয়েস্তার নিজের। ভিয়ারিয়ালের সাথে ম্যাচ। মাটিতে লুটিয়ে পরে ইনিয়েস্তা দু হাত দিয়ে তার ডান উরু ধরে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়ছেন ইনিয়েস্তা। স্ক্রীন কালো হয়ে গেলো। ভিডিও চলছে। পরমুহূর্তেই ভেসে উঠলো ২০০৯ চ্যাম্পিয়ন্স লীগ সেমিফাইনালের বার্সেলোনা-চেলসির দ্বিতীয় লেগের ছবি। ৯৩ মিনিটে চেলসির জালে বল জড়িয়ে বার্সেলোনার চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে জার্সি খুলে কর্ণার ফ্ল্যাগের দিকে ছুটছেন ইনিয়েস্তা।

খেয়াল করলে দেখবেন অন্যান্য ভিডিওর সাথে ইনিয়েস্তার ভিডিও ক্লিপে একটু পার্থক্য রয়েছে। ম্যানুয়েল এস্তেয়ার্তে, ফার্নান্দো আলোনসো, রজার ফেদেরার প্রত্যেকেই হেরে যাবার পর পুনরায় চেষ্টা চালিয়ে যেয়ে শেষমেশ বিজয়ীর বেশে ফিরেছেন। আর ইনিয়েস্তার ভিডিও ক্লিপটি ছিল ইনজুরিতে পরার কিছুদিন আগে স্ট্যামফোর্ড ব্রীজে তাঁর বিজয়োল্লাস। অর্থাৎ জোহানেসবার্গ গামী বিমানে বসে যখন ভিন্ন ভিন্ন নায়কদের বারবার হেরে যাবার পরেও নতুন ভাবে জেগে উঠে বিশ্বজয়ের ভিডিওক্লিপ গুলো দেখছিলেন ইনিয়েস্তা; তখন হয়তো বুঝেছিলেন-ধ্বংসযজ্ঞের আস্তাকুঁড় থেকে ফিরে এসে তাঁর সত্যিকারের বিজয়োল্লাস তখনো বাকি রয়েছে।

ভাগ্য বিধাতাও যেন এমনটাই চাইছিলেন। আর তাইতো নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে স্পেনের বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচের সাথে ইনিয়েস্তার দেখা নিজের ভিডিওক্লিপে বার্সেলোনা-চেলসির সেই ম্যাচের দৃশ্যপট অনেকটাই মিলে গিয়েছিলো। বার্সার হয়ে সেদিন স্ট্যামফোর্ড ব্রীজে ৯৩ মিনিটে লিওনেল মেসির বাড়ানো পাস থেকে বুলেট গতিতে বল জালে জড়িয়েছিলেন, আর সেদিন জোহানেসবার্গের সকার সিটি স্টেডিয়ামে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সেস্ক ফ্যাব্রিগাসের পাস থেকে ১১৬ মিনিটে গোল করে স্পেনকে এনে দিয়েছিলেন স্বপ্নের বিশ্বকাপ। সেদিনের মত এইদিনেও গোল করার পর জার্সি খুলে কর্ণার ফ্ল্যাগের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন ইনিয়েস্তা। পার্থক্য শুধু সেদিন বার্সেলোনার জার্সির নিচের হলুদ রঙয়ের টিশার্টে কিছু লেখা ছিলো না। আর এদিন স্পেনের জার্সির নিচে সাদা টিশার্টে লেখা ছিলো “দানি জার্কে, তুমি সবসময়ই আমাদের সাথে আছো।”

স্পেন বিশ্বকাপ জয়ের পর বার্সেলোনার ফিজিও এমিলি রাইকার্ট তাঁর বানানো ডিভিডিতে ইনিয়েস্তার বিশ্বজয়ের গল্প সংযোজন করেছিলেন কিনা সেটা জানা যায় নি। অবশ্য ভিডিও সংযোজনের খুব বেশি দরকারও নেই। আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা যে ততদিনে স্প্যানিশ তথা বিশ্ববাসীর চোখে ধ্বংসযজ্ঞ থেকে ফিরে আসা নতুন এক রূপকথার নায়ক বনে গেছেন।

আজ স্প্যানিশ ম্যাজিশিয়ান আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা অবসর নিয়েছেন ফুটবল থেকে। ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে অনন্যভাবে তোমার নাম,‌ ডন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা- দ্য ইলুসনিস্ট।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর


Kurigram Songbad © 2025. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest
error: Content is protected !!