1. atik@kurigramsongbad.com : atik :
  2. editor1@kurigramsongbad.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
  3. sifat@kurigramsongbad.com : sifat :
  4. siteaccess@pixelsuggest.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
সাম্প্রতিক :
চিলমারীতে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের ওয়ার্ড প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত উলিপুরে এনসিপি থেকে মনোনয়ন ফর্ম নিলেন মাহমুদুল হাসান জুয়েল রৌমারীতে খেলার মাঠ দখল করে ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন কুড়িগ্রাম-১ আসনে ডা. ইউনুছ আলীর মনোনয়ন দাবিতে নাগেশ্বরীতে বিক্ষোভ মিছিল বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে রাজারহাটে র‌্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত কুড়িগ্রামে ‘নো প্রমোশন নো ওয়ার্ক’ স্লোগানে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার প্রভাষকদের অবস্থান কর্মসূচি ভূরুঙ্গামারীতে গম প্রদর্শনীর উপকরন বিতরণ ঐক্যের বার্তা নিয়ে ভেসপাবস-এর ফ্যামিলি নাইট ও ডিনার অভ্যর্থনা বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের আয়োজন ১৪তম কমিউনিকেশন সামিট অনুষ্ঠিত ভূরুঙ্গামারীতে এলজিইডি’র গ্রামীন অবকাঠামোগত প্রকল্পে  উন্নয়নের ছোঁয়া

প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে স্বপ্নের পথে: শারমিনের জীবনসংগ্রাম

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১১২ বার পড়া হয়েছে

ফরিদুল ইসলাম,বিশেষ প্রতিনিধি:

গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত প্রান্তে লুকিয়ে থাকে অসংখ্য গল্প, যেখানে সংগ্রাম, কষ্ট এবং স্বপ্ন মিশে এক হয়ে যায়। চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের একজন মেয়ে, মোল্যাহ্ শারমিন, সমাজের অদৃশ্য শেকল ভেঙে নিজের জীবনকে নতুন রূপ দিতে চেয়েছেন। কুসংস্কার, অভাব, ও অনুকূল পরিবেশের বিপরীতে দাঁড়িয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণের লড়াইয়ে অবিচল থেকেছেন।

শারমিনের গল্প শুধু তার নয়; এ গল্প সকল পিছিয়ে পড়া নারীর, যারা প্রতিনিয়ত লড়াই করছেন জীবনের অন্ধকার থেকে আলোতে আসার।

স্বপ্নের শুরু, বাধার প্রাচীর: মোল্যাহ্ শারমিনের স্বপ্নের শুরুটা ছোট হলেও শক্তিশালী। নার্সিং অথবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার ইচ্ছা তার মনে গেঁথে ছিলো ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু বাস্তবতা সবসময় স্বপ্নের সাথে তাল মিলিয়ে চলে না। বড় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তার বৃদ্ধ বাবা। দুই ভাই ও ছয় বোনের পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে তার বাবার পক্ষে শারমিনের উচ্চশিক্ষার খরচ জোগানো সম্ভব ছিল না। উপরন্তু, শারমিনের প্রতিবন্ধী বড় ভাইয়ের বিশেষ যত্নও তাদের পরিবারের জন্য ছিল একটি বড় বোঝা।

এমন সময়ে সমাজের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি তাকে বারবার আঘাত করেছে। আত্মীয়-স্বজনের কটূক্তি, প্রতিবেশীদের তাচ্ছিল্য—সবকিছু মিলে শারমিনের শিক্ষাজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। কেউ একটি বই পর্যন্ত কিনে দেয়নি, পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যথাযথ সহায়তা ছিল অপ্রাপ্ত। এসব বাধা সত্ত্বেও শারমিন থেমে থাকেনি। সে জানতো, জ্ঞান ও সাহসের শক্তি দিয়ে অন্ধকারকে পেরিয়ে আলোয় পৌঁছানো সম্ভব।

সংগ্রামের মাঝেই শিক্ষার আলো: এসএসসি পাস করার পর শারমিন চিলমারী মহিলা ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। তবে গ্রামের দূরবর্তী এলাকা থেকে কলেজে যাওয়া ছিল চরম কষ্টসাধ্য। নদী, বালুচর, ঝড়-তুফান পাড়ি দিয়ে প্রতিদিন কলেজে যাওয়া প্রায় অসম্ভব ছিল। তাই থাকতে হয়েছে মেসে, পরিবারের চাপ আরও বেড়ে গিয়েছিল। বাবার বার্ধক্য, পরিবারের সচ্ছলতার অভাব, এবং পড়ালেখার চাপ, সবকিছু মিলিয়ে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন শারমিন। তবুও নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন। নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন পরিস্থিতির সাথে, সংগ্রামের তাপেই নিজেকে গড়ে তুলেছেন এক নির্ভীক যোদ্ধা হিসেবে।

আত্মবিশ্বাসের প্রজ্বলন: শারমিন বুঝতে পেরেছিলেন যে, শুধু শিক্ষার জন্য নয়, জীবনের অন্য প্রতিটি ক্ষেত্রেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তাই কলেজের পড়ালেখার ফাঁকে তিনি নিজেকে বিকশিত করতে চেষ্টা করেন। রেডিও চিলমারী ৯৯.২ এ কাজ করেন উপস্থাপক হিসেবে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় ভয়েস ওভার আর্টিস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন। এই সমস্ত কাজের মাধ্যমে তিনি শুধু অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা সাহায্য পাননি, বরং নিজের আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি করেছেন।

শারমিনের ভাষায়, “জীবনের প্রতিটি বাধা আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে আরও শক্ত হতে হয়। আমি জানি, আমার স্বপ্নগুলো এখনও অনেক দূরে, তবে আমি জানি একদিন আমি সফল হব।”

ভবিষ্যতের স্বপ্ন ও পরিকল্পনা: শারমিনের স্বপ্ন শুধু নিজেকে নিয়ে নয়। তিনি চান তার গ্রামের নারীরাও তার মতো স্বাধীন এবং স্বপ্নবাজ হতে পারে। চিলমারীর নয়ারহাট ইউনিয়নের প্রতিটি মেয়ে যেন আর বাধার সম্মুখীন না হয়—এটাই তার লক্ষ্য। তিনি চান, সমাজের অবহেলিত নারীরা যেন তাদের শিক্ষা এবং প্রতিভার মাধ্যমে নিজেদের জন্য একটি আলোকিত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে। তিনি আরও বলেন, “আমি যদি একদিন বড় কিছু হতে পারি, আমি চিলমারীর মেয়েদের জন্য কাজ করব, যাতে তারা স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং সমাজের চোখে সম্মানিত হয়।”

সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রভাব: শারমিনের সংগ্রাম সমাজের প্রাচীন এবং সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে এক জ্বলন্ত প্রতিবাদ। আজও সমাজের অনেক মেয়ে শারমিনের মতোই বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। কুসংস্কার, লিঙ্গবৈষম্য, আর্থিক অসামঞ্জস্যতা—সবই তাদের জীবনকে কঠিন করে তোলে। কিন্তু শারমিনের মতো নারীরা প্রমাণ করেছেন, সংগ্রামের মাধ্যমে জীবনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করা সম্ভব। এই ধরনের নারীরা তাদের সমাজের পথপ্রদর্শক।

মোল্যাহ্ শারমিনের জীবনসংগ্রাম শুধু একটি ব্যক্তিগত গল্প নয়, এটি সকল নারীর গল্প, যারা প্রতিনিয়ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। শারমিনের অদম্য মানসিকতা, আত্মবিশ্বাস এবং অপ্রতিরোধ্য মনোবল তাকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। শারমিন জানেন যে তার স্বপ্ন পূর্ণ হতে এখনও অনেক পথ বাকি, কিন্তু তার বিশ্বাস আছে, একদিন সে তার লক্ষ্যে পৌঁছাবে। তার গল্প আমাদের শিখিয়ে দেয় যে, প্রতিকূলতায় ভেঙে না পড়ে, সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে।

“আমার স্বপ্ন এখনো অনেক দূরে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমি একদিন তা অর্জন করব। আমি চাই, আমার সংগ্রাম অন্য মেয়েদের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকুক,”—শারমিনের এই কথাগুলো তার সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর


Kurigram Songbad © 2025. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest
error: Content is protected !!