আমিনুল ইসলাম,ফুলবাড়ী প্রতিনিধি:
দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে ৪৮৩ টি মন্ডপে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে । এ উৎসবকে ঘিরে শেষ মুহূর্তে প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কারিগররা। আর মাত্র ৫ দিন বাকি।
উৎসব উপলক্ষ্যে জেলার ৯ টি উপজেলার প্রতিটি পূজা মন্ডপের কমিটি প্রতিটি পূজা মন্ডপে ছোট বড় গেইট, পুরো মন্দিরে বাহারি রঙের প্যান্ডেল তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। পূজা যতই ঘনিয়ে আসছে ঠিক শেষ মুহূর্তে মৃৎশিল্পীরা ততই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন।কাজের চাপ সামলাতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও প্রতিমা তৈরীতে সহায়তা করছেন। বাঁশ,খর ও কাঁদামাটি দিয়ে প্রতিমার অবকাঠামোতে প্রলেপ দেওয়ার প্রাথমিক কাজ শেষ পর্যায়ে। দেবীর মুকুট, হাতের বাজু,গলার মালা, শাড়ি নকশা, প্রিন্ট ও ঠাকুরের চুল তৈরী করছেন। এরপর প্রতিমায় দেওয়া হবে রংতুলির আঁচড়। এ দৃষ্টিনন্দন আর নানা বৈচিত্র্যময় ভঙ্গির এসব মূর্তিগুলো শৈল্পিক রুপ দেবে মৃৎশিল্পীরা। মৃৎশিল্পীদের সারা বছর তেমন কদর না থাকলেও শারদীয় দূর্গা উৎসবের আগে এদের কদর বেড়ে যায়। গত বছরের চেয়ে এবছর প্রতিমা তৈরীতে উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিমা প্রতি দুই তিন হাজার টাকা বেশি বলে জানাান মৃৎশিল্পীরা।আর্থিক ভাবে লাভবান না হলেও অনেকেই বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতেই প্রতিমা তৈরী করছেন ।মূলত প্রতিমা তৈরী করেই চলে তাদের সংসার।। পূজার এক থেকে দেড় মাস আগেই শুরু হয় প্রতিমা তৈরীর কাজ। সকাল থেকে রাত অবধি চলছে প্রতিমা তৈরীর কাজ। প্রতি বছর শারদীয় দূর্গা পূজায় শহর থেকে শুর করে গ্রামে গ্রামে তৈরী হচ্ছে প্রতিমা।
ফুলবাড়ী উপজেলার মৃৎশিল্পী অমূল্য চন্দ্র রায় জানান,এ বছর ৮ টি প্রতিমার তৈরীর অডার পেয়েছি। সঠিক সময়ে প্রতিমা ডেলিভারী দেওয়ার জন্য চার থেকে পাঁচজন সহযোগী নিয়ে রাত দিন জেগে কঠোর পরিশ্রম করছি। বর্তমানে বাঁশ,রশি,খর,মাটি ও রংয়ের দাম বাড়লেও সে হারে দেবীমূর্তির দাম বাড়েনি। প্রতিটি প্রতিমার ১৩/১৫ হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা দরে চুক্তি হয়েছে। সহযোগীদের মজুরী ও অন্যান্য খরচ মিটিয়ে প্রতিটি প্রতিমা তৈরীতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা আয় হবে। এ শিল্প থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম থেতে হচ্ছে। মৃৎশিল্পীদের প্রতি বছর সরস্বতী ও দূর্গাপূজায় তারা ব্যবস্ত সময় পার করে থাকেন। এ দুটি মৌসুমের উপার্জিত অর্থ দিয়ে সারা বছর পার করতে হয়। ভিন্নপেশায় অভিজ্ঞতা না থাকায় অভাব অনটনে তাদের ঘিরে থাকে সার্বক্ষনিক। তিনি আরও জানান,দূর্গাপূজায় প্রতিটি মন্ডপে আলোক বাহারী সজ্জা,বাদ্যবাজনাসহ আনুষাঙ্গিক বাবদ পূজা কমিটি অঢেল টাকা খরচ করলেও এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের মজুরী বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ দিতে চান না। তিনি এশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
রাজারহাট উপজেলার মৃৎশিল্পী ধরনী কান্ত বর্মন জানান, প্রতিমা তৈরীতে দিনরাত ধরে কাজ করছি। তবে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। একদিকে সুতা বাঁশ-কাঠের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ভিন্ন পেশায় অভিজ্ঞতা না থাকায় বাধ্য পরিবারের সকলকে নিয়ে কাজ করছি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি রবি বোস জানান,এ বছরেও ৪৮৩ টি পূজা মন্ডপের শারদীয় দূর্গোৎসব শান্তির্পূণ ভাবে পালিত হবে। আগামী ৯ অক্টোবর বুধবার মহা ৬ষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে ১২ অক্টোবর শনিবার পর্যন্ত বিজয়াদশমী মধ্য দিয়ে পাঁচদিন ব্যাপী এ দূর্গোৎসব পালিত হবে। এ বছর মা দেবী দূর্গা দোলায় আগমন ও ঘটকে গমন।
প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম জানান, এ বছর পূজা মন্ডপগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করা হবে। প্রতিটি পূজা মন্ডপে আনসার বাহিনী থাকবে। এছাড়াও পুলিশ ,র্যাব বাহিনীসহ আয়োজক কমিটির সদস্যরা সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। প্রতিটি মন্ডপে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও সাদা পোশাকেও বিশেষ বাহিনী সার্বক্ষনিক টহল জোড়দার করা হবে। যাতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শান্তিপূর্ণভাবে দূর্গাউৎসব পালন করতে পারে।
কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার মো: মাহফুজুর রহমান জানান, এবছর ৪৮৩ টি মন্ডপে শারদীয় দূর্গাপূজা অনিুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি পূজা মন্ডপে আনসার বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন । এ ছাড়াও শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের বিশেষ টিমের পাশাপাশি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টিম অব্যাহত থাকবে।
Leave a Reply