আমিনুল ইসলাম,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তিস্তার পানি রংপুরের কাউনিয়ার সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় ভাটিতে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলায় তীরবর্তী পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬ টায় দেওয়া এক বার্তায় জানায়, রংপুর বিভাগের উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমেছে। তিস্তায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি আগামী ১৮ ঘন্টা স্থিতিশীল থেকে পরবর্তী দুই দিনে উন্নতি হতে পারে। অপর দিকে ধরলা ও দুধকুমারের পানির সমতল আগামী ৩ দিন বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
পাউবো নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রবিবার দুপুর ৩ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দিনভর ধীরগতিতে বাড়লেও সন্ধ্যা ৬ টায় তা কিছুটা কমে বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও এখনও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকা তিস্তার পানিতে জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ওই দুই ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক পরিবারের প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুর্গত পরিবারগুলোর মাঝে শুকনা খাদ্য বিতরণ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
শনিবার রাতভর তিন্তার পানি দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের ৫ ও ৮ নং ওয়ার্ডের হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আরও ভাটিতে বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের বেশ কিছু বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। তিস্তার বাম তীরের চেয়ে ডান তীরে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা বেশি। ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক ও ফসলি জমি। বাজারের দোকানপাট ও বিভিন্ন স্থাপনায় পানি প্রবেশ করেছে। কিছু স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন।
ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মাঝের চর, সরিষাবাড়ি এবং ৮ নং ওয়ার্ডের বড় দরগা, স্লুইচ গেইট, চর খিতাবখাঁ, মাঝের চর ও বুড়িরহাটের নদী তীরবর্তী শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছে এসব পরিবারের নারী, শিশু ও গবাদিপশু। যুবে গেছে সবজি ও আমন খেত।
ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মামুন বলেন, ‘ এলাকায় হাজারো মানুষ পানিবন্দি। রাস্তাঘাট সব পানির নিচে। মানুষের জমির ফসলও তলিয়ে গেছে। দ্রুত পানি না নামলে এলাকায় হাহাকার শুরু হবে।’
৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘ আমার বাড়িতে পানি। নিচু এলাকার শতাধিক বাড়িঘরে পানি ঢুকছে। রাত পোহাতে পোহাতে আরও বাড়িঘরে পানি ঢুকতে পারে।’
৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মামুনুর রশীদ বলেন, আমার ওয়ার্ডের আড়াই’শ এর বেশি পরিবার পানিবন্দি। রবিবার দুপুরের পর থেকে হু হু করে পানি বাড়তেছে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। বেশিরভাগ পরিবারের ঘরবাড়িতে কোমর সমান উচ্চতায় পানি। শনিবার দুপুর থেকে এসব পরিবারে চুলা জ্বলছে না। মানুষের ফসলি জমি পানিতে তলায় গেছে।’
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ উপজেলার দুই ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের মাঝে সরকারিভাবে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়াও ২ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে তা বিতরণ করা হবে।’
জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে। আমরা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি।’
Leave a Reply