ফিলিস্তিন এশিয়া মহাদেশের একটি রাষ্ট্র। যার রাজধানী জেরুজালেম। জেরুজালেম মুসলিম, ইহুদী ও খ্রিষ্টান তিন ধর্মাবলম্বীদেরই তীর্থ স্থান। শুরুর দিকে ফিলিস্তিনে মুসলমানরা সংখ্যাধিক্য ছিলো, হাতেগোনা কিছু ইহুদিদের বসবাস ছিলো।
১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক বেলফোর ঘোষনার পর ফিলিস্তিনে ইহুদিদের আগমন বাড়তে থাকে। ১৯৩১ সালে ফিলিস্তিনে ইহুদির সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৮০ হাজার এবং ১৯৪৮ সালে ইহুদিদের সংখ্যা ৬ লাখে উন্নীত হয়। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ ফিলিস্তিন ভূখন্ডকে ৪৫ শতাংশ এবং ইসরায়েলকে ৫৫ শতাংশ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিশেষে ১৯৪৮ সালে ইসরাইল স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ইসরাইল – ফিলিস্তিন সংঘাত আগে থেকে চলতে থাকলেও ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা ঘোষণার পর থেকে সংঘাতের তীব্রতা বাড়তে থাকে।
বিশেষত, ৭ অক্টোবর ২০২৩ হামাস ইসরাইলে হামলা চালনোর পর থেকে শুরু হয় এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। গাজাবাসীর ওপর চলতে থাকে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ এবং অমানবিক নির্যাতন। ইসরাইলি সেনারা গাজায় হামলার অতিতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলে। বেসামরিক জনপদ, হাসপাতাল এবং শরনার্থী শিবিরে সর্বাত্মক হত্যাকাণ্ড চালায়। ইসরাইল ১৭ অক্টোবর ২০২৩ গাজা সিটির বৃহত্তম হাসপাতাল আল আহলিতে বিমান হামলা চালায় এতে অন্তত ৫০০ জন নিহত হয়। ২০২৪ সালের ৮ই জুন নুসেইবার শরণার্থী শিবিরে হামলা চালালে ২১০ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারায়। এমনকি গাজায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছতে বাঁধা দেয়। ইজরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত গাজার ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং ৩৭ হাজার ৫০০ এর অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরাইলের এমন বর্বর ও আগ্রাসী হামলা সত্ত্বেও মুসলিম বিশ্বের কোন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। ইরান পরোক্ষভাবে সাহায্য করার চেষ্টা করলেও প্রত্যক্ষভাবে কোন সহায়তা করতে পারেনি। তুরস্ক , কাতার, মিশর ও সৌদি আরব সামান্য হুমকি দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়ে পড়েছে। অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্র শুধু বিবৃতি দিয়েই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ফিলিস্তিনের এই দুর্দিনে গোটা মুসলিম বিশ্ব যেনো নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
অন্যদিকে ইসরাইল ১৯৬৯ সালের ২১ আগস্ট জেরুজালেমের মসজিদুল আকসায় অগ্নিসংযোগ করলে এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ মুসলিম বিশ্বের নেতারা মুসলমানদের নিরাপত্তা প্রধান ও সুরক্ষায় এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও পারস্পারিক সম্প্রীতি প্রচারের লক্ষ্যে ওআইসি গঠন করা হয়। কিন্তু ফিলিস্তিনের এই ভয়াবহ ও করুণ পরিস্থিতি সত্ত্বেও ওআইসির কোন গুরুত্বপূর্ণ তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এমতাবস্থায় ফিলিস্তিনি মুসলিমদের দখলকৃত অঞ্চলকে মুক্ত করতে এবং তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে তাদের বৈধ সংগ্রামে সর্বাত্মক শক্তি দিয়ে অংশগ্রহণ করতে হবে। ইসরাইলের সকল পণ্য বয়কট করে অর্থনৈতিক চাপে ফেলতে হবে। মুসলিম বিশ্বের সকল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং সারা বিশ্বের সকল শিক্ষার্থীকে এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে হবে। মুসলিম বিশ্বের সকল নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরাইল ও তাদের মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেব স্বীকৃতি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ফিলিস্তিন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত তাদের স্থায়ী মুক্তি অসম্ভব।
মো: মমিনুল ইসলাম
বিভাগ: আল – কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।
Leave a Reply