আমিলুল ইসলাম,নিজস্ব প্রতিনিধি:
তীব্র গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে কুড়িগ্রামে বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। এতে করে জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যহত হওয়ার পাশাপাশি গরমে কষ্ট পাচ্ছেন সাধারণ গ্রাহকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ঝাড়ছেন অনেকে।
তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অর্ধেকে নেমে আসায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন।লোডশেডিংয়ের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সহ বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল গৃহস্থালী কাজে ব্যাঘাত ঘটায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। লাগামহীন লোডশেডিং চলছে পল্লী বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনেও। প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন অনেক এলাকায় রাতে মাত্র কয়েক ঘন্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন গ্রাহকরা। ফলে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও গ্রাহকরা বিরক্তি প্রকাশ করছেন।
এদিকে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অনাবৃষ্টিতে আমন ক্ষেতে সেচ দিতে হচ্ছে কৃষকদের। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সেচ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। সেচ প্রকল্পের বেশিরভাগ গ্রাহক পল্লী বিদ্যুতের আওতাভুক্ত হওয়ায় আমন চাষে লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে। বাধ্য হয়ে অনেক কৃষক ডিজেল চালিত শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে সেচ দিচ্ছেন।বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট গ্রাহকদের মধ্যে সামর্থবানরা ঝুঁকছেন আইপিএসের দিকে। তবে রুটিন মেনে চলা লোডশেডিংয়ে আইপিএসের ব্যাটারি চার্জ করা নিয়েও সংশয়ে পড়েছেন তারা। এ অবস্থায় দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকরা।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া নিয়ে ট্রল শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ যাওয়ার সাথে সাথে কেউ পোস্ট করছেন ‘ মামা গেলো’ কিংবা ‘ আটকে রাখা গেল না, আবার চলে গেলো’ লিখে। মিজানুর রহমান নামে এক শিক্ষক শুক্রবার রাতে তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘ সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত পঞ্চমবারের মতো বাবাজি (বিদ্যুৎ) চলে গেলেন!’
কুড়িগ্রাম শহরের ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী সুজন মিয়া বলেন, ‘ ঘন্টায় ঘন্টায় কারেন্ট যায়। মাঝে মাঝে টানা দুই ঘন্টাও লোডশেডিং চলে। দোকানে কাজ করা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসায় লালবাতি জ্বলবে।’স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর ফলে প্রতিঘন্টায় লোডশেড দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বরাদ্দ কম হওয়ার কারণ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে উৎপাদন ঘাটতির কথা বলছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সরকারি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল সহ ৫ ধরণের পাওয়ার প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। তবে সব প্লান্টের জ্বালানী সরবরাহ করে পিডিবি। বর্তমানে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় তারা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কুড়িগ্রাম কার্যালয় জানায়, কুড়িগ্রামের টগরাইহাট গ্রিডে জেলার ৫ টি উপজেলার (সদর, উলিপুর,চিলমারী, রাজারহাট ও ভূরুঙ্গামারী) জন্য মোট চাহিদা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মেগাওয়াট। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৮ থেকে ৪৫ মেগাওয়াট। কুড়িগ্রাম শহরে নেসকোর আওতাধীন প্রায় ৩৩ হাজার গ্রাহক রয়েছে। তাদের আওতায় বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে ১৩ মেগাওয়াট । এই চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৭ মেগাওয়াট। ফলে ঘাটতি পূরণে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এছাড়াও ন্যাশনাল লোড ডিসপাস সেন্টার (এনএলডিসি) থেকে স্ক্যাডা অপারেশনের মাধ্যমে সরবরাহ বন্ধ করলে লোডশেডিংয়ের সময় আরও প্রলম্বিত হচ্ছে।
নেসকো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিফুর রহমান বলেন, ‘ চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অর্ধেক, কখনও অর্ধেকেরও কম। ফলে লোডশেডিং চলছে। সহসাই পরিস্থিতির উন্নতি হবে কিনা তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবেন।’
কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মহিতুল ইসলাম বলেন, ‘ কুড়িগ্রামে আমাদের প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক। আমরাও চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম পাচ্ছি। It ফলে আমাদের আওতাধীন সঞ্চালন লাইনে ৩০% থেকে ৩৫ % লোড শেডিং চলছে।’ পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়ে উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।
Leave a Reply