২২ দিন আগে নববিবাহিত বউকে ঘরে তুলে রাশিদুল ইসলাম। গত ৫ দিন আগে স্ত্রী কে বাড়িতে রেখে ঢাকায় যায় কাজের সন্ধানে। যাওয়ার আগে স্ত্রীকে বলে আমি ঢাকায় যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি ফিরবো। তুমি এ কয়দিন ভালোভাবে এখানে আমার মা-বাবার সাথে থাকবা। আমি ৩ মাস পরে তোমাকে ঢাকায় নিয়ে যাব। স্ত্রীকে দেওয়া সময়ের অনেক আগেই বাড়িতে ফিরলেন রাশিদুল। তবে জীবিত নয়। ফিরলেন লাশ হয়ে।
রাশিদুলের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের কাঠগীরাই গ্রামে।বাবার নাম বাচ্চু মিয়া। সে ৫ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট।
রাশিদুলের ভাবি মৌসুমি খাতুন বলেন, আমার স্বামী আলমগীর হোসেন সহ আমরা ঢকায় যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় থাকি।স্বামী রিক্সা চালায়।আমিও একটি গার্মেন্টসে কাজ করি।আমার ছোট দেবর ৫ দিন আগে আমাদের বাসায় আসে। সে ‘আদমজী গার্মেন্টস’এ কাজ পেয়ে ২ দিন ডিউটি করেছে। গতকাল (৫) আগষ্ট সে যথানিয়মে সকাল ৬ টায় গার্মেন্টসে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বাড়ি থেকে বেড় হয়।বাহিরে গোলাগুলি হওয়ায়, সে আধাঘন্টা পর বাসায় ফিরে আসে।বেলা ১১ টার দিকে সে বাসা থেকে বেড় হয় মিছিলে যোগ দিতে , পরবর্তীতে তার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
নিহতের মেঝ ভাবি মুন্নী বেগম বলেন, গতকাল বেলা (৩) টার দিকে আমার কাছে রাশেদুলের নম্বর থেকে ফোন আসে।আমাকে এক অপরিচিত ব্যক্তি বলেন, রাশিদুলের আপনি কে হন? আমি বলি তার ভাবি ।আমাকে জানানো হয় সে মিছিলে পুলিশের গুলি খেয়েছে।আমরা তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছি।তার বর্তমান অবস্থা আশংকাজনক। আপনারা তাড়াতাড়ি চলে আসেন।
মুন্নী বেগম আরও বলেন , আমরা খবর পেয়ে ৪ টার পরে ঢাকা মেডিকেলে যাই। সেখানে গিয়ে আতংকে চমকে উঠি।ঢাকা মেডিকেলে
তখন লাশ আর লাশ।আমরা সেখানে ১ ঘন্টার মতো ছিলাম।তাতেই কয়েক ভ্যান
লাশের গাড়ি দেখতে পাই।রাশিদুলে মাথায়, বুকে সহ মোট ৩ টি গুলি লেগেছিলো।
স্ত্রী আশামনি বলেন, আমার স্বামী আমাকে তার সাথে নিয়ে যাবে বলে কথা দিয়েছিলো। ৩ মাস পরে তার আসার কথা।কিন্ত ৫ দিন পর ফিরে আসলো।সে এখন কোন কথা কয় না।আমার দিকে চেয়ে দেখে না।সবাই কয়, সে নাকি এখন লাশ।এই লাশ দিয়ে আমি কি করবো?। আপনারা আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন।
এলাকাবাসী আলী হোসেন বলেন, আমার প্রতিবেশী ভাতিজা রাশিদুল। তার বাবা একজন দরিদ্র মানুষ। সে ২২ দিন আগে বিয়ে করেছে। আমি শুনেছি সে ঢাকায় মিছিলে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। সে খুব ভালো ছেলে ছিলো। আমরা তার মৃত্যুর উপযুক্ত বিচার চাই।
নিহতের মা আলেয়া বেগম বলেন, কি দোষ করেছিলো আমার ছেলে,কি অপরাধ তার? আপনারা তাকে গুলি করে মারলেন কেন? আমার কলিজার টুকরাটা এভাবে শুইয়া রইছে কেন? আয় বাপধন এই অভাগী মায়ের কোলে ফিরে আয় বাপ।
Leave a Reply