1. editor1@kurigramsongbad.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
  2. sifat@kurigramsongbad.com : sifat :
  3. siteaccess@pixelsuggest.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
সাম্প্রতিক :
কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেন শেকৃবির কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহঃ রাশেদুল ইসলাম বীর প্রতীক তারামন বিবি: জাতীয় গৌরব, কিন্তু যথার্থ সম্মান কি পেয়েছেন? চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদে ইলেকট্রিক মেশিন দিয়ে মাছ ধরার সময় ৬ জেলে আটক যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পালানো ইউক্রেনীয় সেনাদের সংখ্যা বাড়ছেই: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ছুটি কাটাতে ইরাকে যাচ্ছেন পশ্চিমা পর্যটকরা শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি যত ধরনের দুর্নীতির সন্ধান পেয়েছে কুড়িগ্রাম জেলা আহ্বায়ক কমিটি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি ঘোষণার পরপরই যুগ্ম আহ্বায়ক সহ একাধিক সদস্যের পদত্যাগের ঘোষণা কুড়িগ্রামে চরমোনাই পীরের ইজতেমা ১৯ ডিসেম্বর নভেম্বরে রেমিট্যান্স ১৪ শতাংশ বেড়ে ২.২০ বিলিয়ন ডলার সিভিল সার্ভিসে ‘ক্যাডার’ শব্দটি বাদ দেওয়ার সুপারিশ করবে কমিশন

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের ৮ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি প্রতিবন্ধীদের জন্য বিষেশায়িত হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প

  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০২৪
  • ১ বার পড়া হয়েছে
বিশেষায়িত হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরির স্থান,ছবি: নিজস্ব প্রতিনিধি

আমিনুল ইসলাম,নিজস্ব প্রতিনিধি:

দুই চোখে অযত্নে লাগানো কাজল। নিয়ন্ত্রণহীন শরীর ও হাত-পা ছড়িয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে হুইল চেয়ারে বসে আছে কন্যা শিশু। মুখে অমলিন ও অকৃত্রিম হাসি। কিন্তু সেই হাসির আড়ালে লুকিয়ে আছে অব্যক্ত বেদনা, এগারো বছর বয়সে পৃথিবীর হাজার কোটি শিশুর মতো হাঁটাচলা করতে না পারার বেদনা। কাজল চোখের ভাষায় যেন সেটাই বলছিল মুখ ফুটে বলতে না পারা প্রতিবন্ধী শিশু নুরি আক্তার (১১)।

নুরির বাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের রাজমাল্লি গ্রামে। তার বাবার নাম নুর ইসলাম। জন্ম থেকে শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধী সে। দরিদ্র বাবার ঘরে জন্ম নেওয়া নুরির অর্থাভাবে সুচিকিৎসা হয়নি। এগারো বছর বয়সেও শারীরিক ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না। ‘বোঝা ভেবে’ তাকে ফেলে রেখে সংসার ত্যাগ করেছেন মা। সেই থেকে নুরির অবলম্বন তার বাবা ও একটি হুইল চেয়ার। খাওয়া,গোসল সহ যাবতীয় পরিচর্যার দায়িত্ব নুর ইসলাম পালন করেন। প্রতিবন্ধী মেয়েকে ফেলে রেখে কোথাও যেতে পারেন না বলে হুইল চেয়ারে করে মেয়েকে নিয়ে প্রতিদিন বের হন মানুষের কাছে আর্থিক সাহায্য নিতে। সংগ্রহ করা অর্থে টানাপোড়নে চলে নুরির খরচ সহ সংসারের ব্যয়।

এমনটা জানিয়ে নুর ইসলাম বলেন, ‘ আমার সাধ্য নেই চিকিৎসা করানোর। মেয়েকে রেখে রোজগারে বের হতে পারি না। ওকে নিয়েই কালেকশনে বের হই। মানুষ দয়া করে যে টাকা দেয় সেটা দিয়েই কোনও রকমে খরচ মেটাই। কিন্তু কুলায় উঠতে পারছি না।’

নুরির মতো এমন প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে কুড়িগ্রামের হাজারো পরিবারে। সামর্থবানরা চিকিৎসা করাতে পারলেও বেশির ভাগ পরিবারের অবস্থা নুরির বাবা নুর ইসলামের মতো সঙ্গিন। সামর্থের অভাবে প্রতিবন্দী সদস্যদের চিকিৎসা ও যতাœ নিতে পারছেন না তারা। এমন সব প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের স্বার্থে ২০১৬ সালে কুড়িগ্রামে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল কাম পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ৮ বছর অতিবাহিত হতে চললেও শুধুমাত্র ভূমি বন্দোবস্তের ‘ জটিলতায়’ ভেস্তে যেতে বসেছে প্রকল্পটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর প্রকল্পটি শুরু করতে না পারলে এটি আর বাস্তবায়ন নাও হতে পারে। জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন কার্যালয় ও গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রতিবন্ধীদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরির জন্য ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি চাহিদাপত্র পাঠায়। সে বছরই জমির চাহিদা জানিয়ে জেলা প্রশাসনকে পত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় ভূমি বন্দোবস্তের বিষয়টি ঝুলে যায়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে ও জেলা শিশু পরিবার ভবনের পূর্ব দিকে সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জমি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় প্রশাসন। ২০১৭ সালে প্রথম পর্যায়ে ৯ দশমিক ৩২৭২ একর জমি নির্ধারণ করে পত্র দেয় জেলা প্রশাসন। পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে জেলা প্রশাসন। প্রদানযোগ্য জমির পরিমাণ কমিয়ে প্রায় ৫ একর নির্ধারণ করে ২০১৮ ও ২০২০ সালে আবারও ভূমি মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয় প্রশাসন। জমির দামও নির্ধারণ করা হয় আকাশচুম্বি। নির্ধারিত ভূমির বিষয়ে মতামত চেয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগকে পত্র দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। ভূমি নিয়ে প্রতিবন্ধকতার চিঠি চালাচালিতে সেই থেকে আটকে আছে প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্মিতব্য বিশেষায়িত হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল হক খন্দকার বিশেষায়িত হাসপাতালের বিষয়টি আবারও উত্থাপন করলে নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর আবারও পত্র দেন। ওই পত্রে তিনি কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৬৪৪ একর অখন্ড অকৃষি জমি বন্দোবস্ত প্রদানের সম্মতি জানিয়ে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মানের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানান। ১৩ ফেব্রুয়ারি পাঠানো ওই পত্রের বিষয়ে এখনও কোনও প্রতিউত্তর পাঠায়নি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। বিষয়টি আবারও ঝুলে আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসন থেকে প্রস্তাবিত জমির প্রতীকী মূল্য না ধরে বাজার মূল্যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি একটি সেবামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে বাজার দরে জমির দাম নির্ধারণ করায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগ বলছে, চলতি বছর চালু করা না গেলে প্রকল্পটি ভেস্তে যেতে পারে। এরফলে কুড়িগ্রামের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী একটি অনন্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। সেক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে প্রকল্পটি আর নাও হতে পারে।
কুড়িগ্রাম গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী …. বলেন, ‘ আমরা এখনও জমি বুঝে পাইনি। ফলে আমরা পরবর্তী কার্যক্রমে যেতে পারছি না। এবছর শুরু করা না গেলে প্রকল্পটি হয়তো আর বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘ বিশেষায়িত হাসপাতালের জন্য ৫ দশমিক ৩৬৪৪ একর জমি বন্দোবস্তের সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পত্র দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন।’

কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য ডা. হামিদুল হক খন্দকার বলেন, ‘ প্রস্তাবিত জমির মূল্য নিয়ে জটিলতা রয়েছে। বাজার মূল্য না ধরে জমির প্রতীকী মূল্য নির্ধারণের জন্য আবেদন করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলবো। আমরা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রামে ৭৭ হাজার প্রতিবন্ধী রয়েছেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল কাম পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরি হলে জেলার অসহায় এই জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের সুযোগ পাবেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর
Kurigram Songbad © 2024. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest
error: Content is protected !!