1. editor1@kurigramsongbad.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
  2. sifat@kurigramsongbad.com : sifat :
  3. siteaccess@pixelsuggest.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :

ফুলবাড়ীতে বেহাল সড়কে চলাচলে কষ্টের প্রতিবাদে ধানের চারা লাগালো পথচারীরা

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪
  • ১৫ বার পড়া হয়েছে
আমিনুল ইসলাম, ফুলবাড়ী প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বালারহাট-পূর্ব ফুলমতি চাইলনের বাজার-কুরুষাফেরুষা-খলিশাকোটাল-গজেরকুটি গ্ৰাম। সাড়ে তিন কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা সড়ক। খরা ও বন্যায় পাঁচ গ্রামের ১০ হাজার লোকের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম।

খরা মৌসুমে ধুলোবালি আর বর্ষায় হাঁটু সমান কাদা। রাস্তার দুই ধারে বাড়িঘর এবং বাড়ির ভিটি থেকে রাস্তা নীচু জায়গায় হওয়া সব সময় পানি জমে থাকে। কাদাপানিতে বেহাল এই সড়কে চলাচলে অসহনীয় কষ্ট আর নানান বিড়ম্বনায় নাকাল পথচারীরা। কষ্টের প্রতিবাদে ধান গাছের চারা গাছ লাগিয়ে প্রতিবাদে নেমেছেন ওই রাস্তায় চলাচলকারী পথচারীরা। জানা গেছে,বেহাল দশায় এই সড়কে, সাইকেল, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ভ্যানগাড়িসহ কোনো যানবাহন চলতে পারে না। হাঁটা পথেই খুঁড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এলাকার লোকজনকে।আর এজন্য হাঁটু পরিমান কাদা মাড়াতে হয় । এই রাস্তার পূর্ব দিকের প্রান্তে কুরুষাফেরুষা ও খলাশাকোটাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্ষার সময় শিক্ষার্থীরা কাদা মাড়িয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। ফলে সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছতে পারে না। অনেক সময় পিছলে পড়ে পরনের জামাকাপড় ও বই নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া অসুস্থ লোকজনকে চিকিৎসার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক অথবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে হলে পাঁচ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয়। এতে সময় ও শ্রম বেশি লাগে।

খলিশাকোটাল গ্ৰামের ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ বলেন, শুকনো মৌসুমে এ পথে আমরা হেঁটে অথবা বাই সাইকেলে যাতায়াত করি। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে উপায় থাকে না। পানিতে তলিয়ে যায়।

কুরুষাফেরুষা গ্ৰামের শিক্ষক নার্গিস সুলতানা বলেন, এ পথ হয়ে তিনি প্রতিদিন নাওডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন।একটু বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে পরে । তখন চলা কষ্টকর হয়। পূর্ব ফুলমতি গ্ৰামের তোফাজ্জল হোসেন বলেন,আমরা অতিশয় কষ্টে আছি। রাস্তাটি সংস্কার ও পাকা না হওয়ায় বর্ষাকালে হাঁটু পরিমান কাদা মাড়িয়ে চলতে হয়। তিনি আরও বলেন, সরকার গ্ৰামকে শহরে রুপান্তরিত করছেন। নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের অধিকাংশ সড়কের অবস্থা বেহাল।অনেক আবেদন নিবেদন করার পরও উপজেলা প্রশাসনের কাজ শুধু রাস্তা পরিদর্শন ও মাপজোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

যুগের পর যুগ ধরে বিষয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানালেও তারা কোনো উদ্যোগ নেননি।

সরেজমিন বুধবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, ওই রাস্তার জনৈক সালাম মিয়ার বাড়ির কাছে হাতে স্যান্ডেল ও লুঙ্গি গুটিয়ে বিলাপ করতে করতে হাঁটু পরিমান কাদা মারিয়ে কয়েক জন পথচারী চলে যাচ্ছেন। এরপরই কুরুষাফেরুষা গ্ৰামের দুলাল প্রামানিক, ছাইদুল ইসলাম ও জয়নাল হকসহ কয়েকজন ওই কাদায় ধান গাছের চারা রোপণ করে এ অভিনব প্রতিবাদ জানান। এদের একজন ছাইদুর ইসলাম বলেন, কর্দমাক্ত সড়কে চলাচলে কষ্ট আর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ করছেন রাস্তায় ধানের চারা লাগিয়ে ।

ওই এলাকার বাদশা মিয়া ও নুর মোহাম্মদ জানান, সড়কটি পাঁকা করণের জন্য মেম্বার ও চেয়ারম্যানসহ মাননীয় সংসদ সদস্য বারবার জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। বর্তমানে সড়কটি গর্ত হয়ে পানি জমে একাকার হয়ে যাচ্ছে সে দিকে তাদের কোনো নজর নেই। এভাবে স্বাধীনতার ৫২ থেকে ৫৩ বছর কেটে গেল অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির পাঁকা করণের কাজ হয়নি। সেজন্য আমরা এলাকাবাসী রাস্তায় ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ জানিয়েছি।
একই এলাকার বাসিন্দা ফিরোজা বেগম ও সুফিয়া বেগম নামের গৃহিণী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুই বছরের বাচ্চা অসুস্থ। ডাক্তারকে ফোন দিয়েছি সড়কের বেহাল দশা দেখে আসেনি। অটোও চলে না। তাই বাধ্য হয়ে তিন কিলোমিটার হাঁটু কাঁদা মারিয়ে বালারহাট গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে আসলাম বা। সড়কের অবস্থা করুণ পরিনিতি হওয়ায় ছেলে-মেয়েরা স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা খুবই দুর্ভোগ আছি বাহে। কে দেখে আমার এই কষ্ট বলে ক্ষোভ জানান এই দুই নারী।

শিক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার ও আকাশ রহমানের সাথে কথা হলে তারা বলেন, প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া-আসা করতে খুবই কষ্ট হয়। জুতা খুলে হাতে নিয়ে এ রাস্তায় চলাচল করতে হয়। এতে কাদা লেগে জামা কাপড় নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তাটি পাকা হলে আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হতো।

কুরুষাফেরুষা গ্ৰামের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য শহিদুল ইসলাম বলেন,এ রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় সাংসদের কাছে আবেদন করেও কোনো ফল পাননি। দীর্ঘদিনেও পাকা না হওয়ায় এলাকা
বাসির কাছে তিনি লজ্জায় মুখ দেখাতে পারেন না।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)চেয়ারম্যান হাছেন আলী বলেন, ওই রাস্তায় চলাচলের জন্য আপাতত কিছু ভিটি বালুর ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সড়কটি পাঁকা করণের জন্য উপজেলা পরিষদ সমন্বয় সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। পাশ হওয়ার কাজ প্রক্রিয়াধীন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর( এলজিইডি) কার্যালয় জানায়, উপজেলায় ৯৮০ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ২৫৫মিটার পাকা। উপজেলা প্রকৌশলী মামুনুর রহমান বলেন,গ্ৰামীণ সড়কগুলো বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে পাকাকরণ করা হয়। বরাদ্দ পেলে এ সড়কটি দ্রুত পাকাকরণের কাজ শুরু করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম জানান, ওই সড়কটি পাঁকা করণের বিষয়ে লটভুক্ত হয়েছে কি না, তা আগে দেখতে হবে। যদি না হয়ে থাকে তাহলে লট ভুক্ত করে দ্রুত পাঁকা করণের সকল ব্যবস্থা করা হবে।

আমিনুল ইসলাম/০১৭১৫৫৭২০৩০

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর


Kurigram Songbad © 2025. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest
error: Content is protected !!