‘নদী ঘরবাড়ি ফসলি জমি ভাঙে, বানের পানি সউগ (সব)ভাসে নিয়া যায়। এমনিতেই হামরা (আমরা) বাঁচিনা। তার ওপর ভূমি দস্যুদের উৎপাতে ভিটামাটি,ঘর ছাড়ার উপক্রম। আগোত (আগে) ছাবেদ ডাকাইত(ডাকাত )চরের মানুষক(মানুষকে)জ্বলে(জ্বালিয়েছে) খাইছে। এলা ওমার দুই বেটা (ছেলে)জাল জালিয়াতি করি (করে)জমি দখল কইরবার লাগছে (করছে)। এলা হামরা (আমরা) যামো (যাবো)কোনটে(কোথায়) খামো(খাবো) কি। হামরা গরীব মানুষ কোনটেও (কোথাও)বিচার পাইনা।’ বন্যা আর ভাঙনে সর্বস্বান্ত কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চর গোরকমন্ডপ গ্ৰামের দিন মজুর আজিজার হক মানববন্ধনে যোগ দিয়ে তার বক্তব্যে এমনভাবে তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে এ ক্ষোভ শুধু তার একার নয় । উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক চরবাসির।
আজ ১৫ জুলাই সোমবার দুপুর ২টায় উপজেলার নাওডাঙ্গা প্রমোদা রঞ্জন জমিদার বাড়ির সামনে ‘ভূমিদস্যু ইয়াসিন,সাদ্দাম ও গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের কনস্টেবল স্থানীয় গোলাপি বেগমের হাত থেকে পরিত্রাণ চাই শীর্ষক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে ভুক্তভোগীরা এসব কথা বলেন।
উপজেলার চর পেচাইয়ের জয়মুদ্দিন বলেন, উপজেলা সহকারী নিবন্ধক(সাব রেজিস্ট্রার) কার্যালয়ের দলিল লেখক (মুহুরি) শহিদুল ইসলাম আর তুহিন মিয়ার মাধ্যমে জাল জালিয়াতি করে প্রথমে ছাবেদ আলীর ছেলে ইয়াসিন আলী আর সাদ্দাম হোসেন তাদের বাড়ির কাজের লোক ও আত্মীয় স্বজনের নামে জাল দলিল বানায়। পরে সে জমি নিজেদের নামে হস্তান্তর করে জোরজবরদস্তি করে জমি দখল করে। বাধ্য হয়ে আদালতের আশ্রয় নিই। এসময় সাদ্দামের স্ত্রী ডিবির কনস্টেবল গোলাপির ষড়যন্ত্রে মিথ্যা নারী নির্যাতন ও মাদক মামলায় ফাঁসায়। আমি জমি হারাইলাম, মিথ্যা মামলায় জেলও খাটলাম।’
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আমিন হোসেন বলেন, এই দুই ভাইয়ের যন্ত্রনায় চরের মানুষ অতিষ্ঠ। তাদের অন্যায় দেখলি জমির বিচার করতে গিয়ে আমারও হেনস্তার শিকার হয়েছি। সাদ্দামের বৌয়ের ষড়যন্ত্রে আমার ভাতিজাকে নামে মিথ্যা মাদক মামলায় জড়ানো হয়।
পরবর্তীতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইয়ের) তদন্তে মাদককান্ডের মূল হোতা ইয়াসিনের নাম বের হয়ে আসে।এরপর তার নামে উল্টো মামলা দায়ের হয়।
চর গোরকমন্ডপের আজিজুর হক বলেন, তারা দুই ভাই আমার জমি আমিন(সার্ভেয়ার )দিয়ে মেপে দেওয়ার কথা বলে ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন এই টাকা ও জমি দু’ই গেছে।
ফুলমতির নজরুল ইসলামের স্ত্রী মরিয়ম বেগম বলেন, তার স্বামীর কষ্টের টাকায় কেনা জমি ১৭ বছর ধরে চাষাবাদ করেন। এখন সে জমির জাল দলিল করে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।
ওই গ্ৰামের ছড়া বেগম বলেন, তার স্বামী আবু বক্কর সিদ্দিকের নামে কোন কালে চরে জমি ছিল না। এখন শুনি তার নামের জমি আছে।সে জমি তার নিকট থেকে সাদ্দাম কিনেছে। এগুলো সব বানোয়াট কাগজ।
গজেরকুটির শহিদুল ইসলাম বলেন, ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ফুলবাড়ী উপজেলার সব দলিল নিবন্ধন হত পাশ্ববর্তী লালমনিরহাট জেলায়। সেখানকার বালাম এবং থাম বইয়ের যে পৃষ্ঠা গায়েব করে পৃষ্ঠার দলিল নাম্বার ব্যবহার করে জাল দলিল করছে এ চক্রটি। ফলে জাল দলিল প্রমাণ করার সুযোগ পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। অন্যদিকে ভূমি অফিসের অসাধু চক্র পাকিস্তান আমলের জাল স্টাম্পের সহায়তায় ভুয়া দলিল তৈরি করছে।
এবিষয়ে ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)নওয়াবুর রহমান জানান, বিষয়টি তাকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ওই এলাকায় একটি শান্তিপূর্ণ মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
Leave a Reply