নুরুজ্জামান সরকার, নাগেশ্বরী প্রতিনিধি: ছুটি পেরিয়ে গেছে। কিন্তু মনের গভীরে থেকে গেছে সে অনুভুতি। তাই সে আনন্দ উপভোগে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে একদল তরুণ ঈদের পক্ষকাল পরে গ্রামীণ ঐতিহ্যে আয়োজন করেছে কলাগাছের ভেলা বাইচের। বর্ষায় নতুন পানিতে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার নেওয়াশী কাশিরডারায় এ আয়োজন করেছে তারা।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে ভিন্ন এই আয়োজন করা হয়। ২৮ ও ২৯ জুন (শুক্র ও শনিবার) দিনব্যাপী বেস্ট কেয়ার এগ্রো বিডি এর উদ্যোগে বুড়ির ছড়ার মাঠের পাড় বন্ধু মহলের আয়োজনে এ প্রতিযোগীতায় অংশ নেয় কলাগাছের ১২ টি ভেলা নিয়ে প্রতিটিতে ২ জন করে ২৪ জন প্রতিযোগী। মামা-ভাগ্নে, চাচা-ভাতিজা, ভাই-ভাই, পারলে ঠেকাও এরকম ব্যাতিক্রমী দলের নামে অতি উৎসাহে মনের আনন্দে প্রতিযোগীতায় নাম লেখায় তারা।
অনেকদিন পর নির্মল আনন্দ উপভোগে কলাগাছের ভেলা বাইচ দেখতে নেওয়াশী কাশিরডারা ছড়ার দুই পাড়ে ভীর জমায় হাজারো দর্শনার্থী। সময় যত গড়ায় ততই বাড়তে থাকে দর্শনার্থীর সংখ্যা। আব্দুল মজিদ, আব্দুস সালাম, শাহীনসহ বিমুগ্ধ দর্শনার্থীদের অনেকেই জানান, সারাজীবন নৌকা বাইচ দেখেছি। এবারেই প্রথম দেখলাম কলা গাছের ভেলা বাইচ। এ প্রতিযোগীতা নৌকা বাইচের চেয়ে বেশ কঠিন হলেও বন্যার্ত এলাকার ভেলা অত্যন্ত পরিচিত। যা গ্রামীণ ঐতিহ্যের একটি অংশ। তাই আমরা দেখতে এসেছি।
বাজে ঢাক-ঢোল ও বাদ্য-বাজনা। বাজনার তালে তালে নিশানা লাগানো এক-একটি ভেলা দ্রুত চালিয়ে সীমানা ছুতে ছুটতে থাকে প্রতিটি গ্রুপে ৩ টি করে ভেলা। এরমধ্যে থেকে বাছাই করাদের নিয়ে শনিবার শেষ বিকেলে ৬টি দলের অংশগ্রহণে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়।
রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল দেখতে তখনো মানুষের ভীর ছড়ার দুই পাড়ে। মাঝে ভেলা নিয়ে ছুটছেন প্রতিযোগীরা। পছন্দের দলকে সমর্থন দিতে সমর্থকরা দিচ্ছেন করতালি। কেউ চিৎকার করে এদিকে, ওদিকে, আরো একটু জোড়ে নানান পরামর্শ দিচ্ছেন। একসময় খেলা শেষ হয়। ঘাম ঝড়িয়ে প্রথম পুরস্কার ছাগল জিতে নেন চাচা-ভাতিজা-১ দল, ২য় পুরস্কার মোবাইল জিতে নেন ভাই-ভাই দল। আর প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীদের দেয়া হয় গাছের চাড়া। কিন্তু তখনো ঘোর কাটেনি মানুষের। কি করলে জয় সম্ভব হত, কোথায় ত্রুটি ছিল, আরো একটু ভালো করা উচিৎ ছিল নিজেদের মধ্যে এসব আলোচনা করতে করতেই তারা আসে পুরস্কার মঞ্চের দিকে।
বিজয়ী চাচা-ভাতিজা-১ দলের জয়ের হাতে ছাগল, ভাই-ভাই দলের মিলনের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেন নেওয়াশী ইউপি চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান মুকুল, বেস্ট কেয়ার এগ্রো বিডির এমডি মশিউর রহমান, ইউপি সদস্য শাহজাহান আলী, শিক্ষক আব্দুস সালাম, শাহীন তহসিলদার প্রমুখ।
বেস্ট কেয়ার এগ্রো বিডির এমডি মশিউর রহমান জানান, ঈদে বাড়ীতে এলে এলাকার কিছু উদ্যোমী তরুণ আমার কাছে এসে এ আয়োজনটি করতে চাইলে আমি সম্মতি দেই। তাদের চেষ্টায় আয়োজনটি সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন ও মানুষের মনে নির্মল আনন্দ দিতে সক্ষম হওয়ায় আমি অত্যন্ত খুশি।
Leave a Reply