ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এন্টারপ্রাইজ (IDE)’র বিরুদ্ধে প্রায় ৩ কোটি টাকার আত্মসাৎ করে প্রতিষ্ঠাতাসহ সকল কর্মীদের উধাও হওয়ার ঘটনা যেন নতুন রূপ পেলো।
এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এসে নিজেকে নিরপরাধ দাবি করে বাকি চারজনকে প্রতারক ও অপরাধী বলে নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী সরকার।
আজ সোমবার (১লা জুলাই, ২০২৪) ফেসবুকে চার ব্যক্তির ছবি সংযুক্ত করে নিজের ওয়ালে পোস্ট দেন মোহাম্মদ আলী। পোস্টে তিনি লিখেন, ‘এরা চারজন জঘন্য প্রতারক!
এদের কাজেই হলো মানুষের সাথে প্রতারণা করে জীবিকা নির্বাহ করা।
এদের পারিবারিক কোন পরিচয় নাই!সবার বাবা দিন মুজুরী করে জীবীকা নির্বাহ করে কিন্তু তারা সবাই চালায় ১৫০০০০ (দেড় লাখ টাকা) দামের iPhone!
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘প্রায় চার কোটি টাকা নিয়ে পালাতক কয়েকদিন যাবত!আজ হটাৎ ফেসবুকে এসে আমার নামে কিছু মিথ্যা বানোয়াট কথা লিখে পোস্ট করেছে। যা আমি কখনো জানিই না।আমি যদি তাদের সাথে কোন প্রকার জড়িত থাকতাম তাহলে পুলিশ প্রশাসনের সামনে এসে কথা বলুক।গরীবের টাকা চুরি করি পালিয়ে কয়দিন পালিয়ে থাকবে। সত্য কখনো চাপা থাকেনা।
আগে প্রশাসনের কাছে আত্নসমর্পণ করো তারপর না হয় আমার কথা বলো।’
এর আগে রেজা তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে আইডিতে মোহাম্মদ আলীকে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে উল্লেখ করে পোস্ট দেয়ায় বিষয়টি সামনে আসে এবং এলাকাজুড়ে নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুন: ‘IDE’ এর সেই ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ এর মাস্টারমাইন্ড মোহাম্মদ আলী
রেজা তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘mastermind and Director to establish international development enterprise(iDE). মরহুম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে, ভুয়া কোম্পানির প্রতিষ্ঠিত করে আমাদের দ্বারা এটা পরিচালনা করায়। পুরো বিষয়টার মূল কারিগর ছিল মোহাম্মদ আলী। সংস্থার সমস্ত হিসাব-নিকাশ পাট বাই পাট মোঃ আলি প্রত্যেকদিন রাতে আমাদের কাছ থেকে বুঝায় নিত । আমাদের মাসিক নির্দিষ্ট পরিমাণের একটা বেতন দিত। হঠাৎ একদিন আমাদেরকে সে ডেকে নিয়ে ছোট্ট একটা মিটিং করে এবং প্রতিজ্ঞা করায় যে আজকের মিটিং এ যে কথাগুলো হবে এগুলা দুনিয়ার কাউকে শেয়ার করা যাবে না। সেই মিটিংয়ে মোহাম্মদ আলী কাকা আমাদেরকে যেটা বলে, এভাবে সমাজে কত দিন চলবি। যদি বাঁচতে হয় তাহলে বীরের মত বাঁচতে হবে। বেকার জীবন নিয়ে কতদিন এভাবে ঘুরবি। অতএব আমার কথা মত কাজ কর। টাকা ইনকাম করা খুব সহজ কাজ। আমার কাছে একটা প্লান আছে, প্ল্যানটা যদি সাকসেসফুল করতে পারোস। তাহলে তোদের জীবনটাকে একটা সেটেলমেন্টের পৌছায় দিব। এভাবে আরো বিভিন্ন রকমের লোভ লালসা আমাদেরকে দেখায়। কিন্তু দিনশেষে আমাদের হাতে হেরিকেন ধরিয়ে দিয়েছে।সমস্ত টাকাগুলো তার কাছে জমা রাখত। দিনশেষে আমাদের খুব সামান্য একটা টাকা দিয়েছে ঢাকা আসার জন্য । বাকি সমস্ত টাকা সে আত্মসাৎ করেছে একা। এখন আমাদেরকে ফাঁসায় দিছে।
রেজা কারিগর আরো উল্লেখ করেন, ‘মাস্টারমাইন্ড ছিল তিনি। এখন তিনি নাক ডেকে ঘুমায়। আর আমরা লুকিয়ে বেড়াচ্ছি। মোহাম্মদ আলী কাকা কাজটা খুব খারাপ করছে আমাদের সাথে। আমরা না বুঝে তার ফাঁদে পা দিয়ে জীবনটা ধ্বংস করলাম। এটার বিচার উপরওয়ালা করবে ইনশাল্লাহ। আমাদের জীবন গুলোর সাথে আমাদের পরিবারের জীবন গুলো সে ধ্বংস করে দিলো। আগে যদি বুঝতাম কখনো ভুল করেও তার ফাঁদে পা দিতাম না।’’
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও এলাকা জুড়ে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি।’
জানা যায়, জামালপুর জেলার দেয়ানগঞ্জ উপজেলার ডাংধরা ইউনিয়নে উন্নয়নের নামে এলাকার দুস্থ,অসহায়দের উন্নয়ন ও স্বাবলম্বীকরণ প্রকল্প এবং তাদের বাড়িঘর ও বিভিন্ন ভাতার নাম করে দেয়ার কথা বলে প্রায় ২ হাজার পরিবারের থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা অবৈধভাবে নিয়ে গা ঢাকা দেয় সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা ও অন্যান্য সদস্যরা।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মালা খাতুন গণমাধ্যমকে বলেন, তারা আমার কাছে ঘর দেয়ার নাম করে ৪৫ হাজার টাকা নিয়েছে। টাকা নেয়ার পর আমি বারনার তাদের অফিসে গেলেও তারা ঘর কিংবা টাকা কোনোটিই দেয়নি। আমি হাতে পায়ে ধরলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এখন তাদের অফিসে গিয়ে দেখি তাদের অফিসে তালা মেরে তারা পালিয়েছে।
পাল্টা পোস্টকারী মোহাম্মদ আলীর সাথে যোগাযোগ হলে তিনি ‘কুড়িগ্রাম সংবাদ’কে বলেন, ‘এই বিষয়টা সম্পর্কে আমি একেবারেই অবগত না। যদি তারা কোনো ধরনের প্রমাণ দেখাতে পারে যে আমি এসবে যুক্ত তাহলে তারা সামনে আসুক। আমি মূলত তাদের এসব কাজ নিয়ে একদিন তাদের সাবধান করেছিলাম। সেখান থেকে ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে তারা আমার সাথে এই ধরনের কাজ করছে। যদি এধরনের কাজ করতাম তাহলে এভাবে তো ঘুরে বেড়াতে পারতাম না।
তিনি আরো বলেন, আমি এই ঘটনা শোনার পর খুবই অবাক হই। পরে রাজিবপুর থানায় জিডি করতে যাই। তারা কি ধরনের কাজ করে তা এলাকার সবাই জানে। মূলত আমাকে ফাঁসানোর জন্যই তার এই ফেসবুক পোস্ট।’’
এ বিষয়ে রাজিবপুর থানার ওসি আশিক রহমান বলেন, এই ঘটনা সম্পর্কে ফেসবুক, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানতে পেরেছি। এটা মূলত দেওয়ানগঞ্জ থানার আওতায় রয়েছে। যদি তাদের কোনো সাহায্য প্রয়োজন পরে তবে অবশ্যই আমরা তা করব।’
Leave a Reply