1. editor1@kurigramsongbad.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
  2. sifat@kurigramsongbad.com : sifat :
  3. siteaccess@pixelsuggest.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
সাম্প্রতিক :
ভারত-পাকিস্তানের সামরিক সংঘাত: কার কতটুকু লাভ, ক্ষতি কতখানি নাগেশ্বরীতে বজ্রপাতে পল্লী চিকিৎসকের মৃত্যু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা জবি শিক্ষক শিক্ষার্থীদের, পুলিশের বিচার দাবি চলে গেলেন ‘সবচেয়ে গরিব প্রেসিডেন্ট’ হোসে মুজিকা আইপিএলে মোস্তাফিজ, দিল্লি ক্যাপিটালসে ৬ কোটি রুপিতে যুক্ত হলেন বাংলাদেশের পেসার উলিপুর উপজেলা বিএনপির ২১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদিত দেশের বাজারে মেগাবুক টিওয়ান ১৪ ও মেগাবুক কে১৬এস ল্যাপটপ নিয়ে এলো টেকনো ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্যর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন এপ্রিলে আইসিসির সেরা খেলোয়াড় মিরাজ রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে কাউনিয়ায় মহাসড়ক অবরোধ

চন্দ্রসুতো – আমিমুল এহসান

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪
  • ৩৫ বার পড়া হয়েছে

 চন্দ্রসুতো

বিকেলে হোস্টেল থেকে বেরলাম। দুপুরে ঘুমিয়েছিলাম না খেয়ে। না খেয়ে ঘুমবার কারন হোস্টেল ম্যানেজার কে গত তিন মাসের বকেয়া বিল দিতে পারি না। না খেয়ে ঘুমান কষ্ট!

চোখের পাতা খুলে ঘুমিয়ে থাকা সেকি যন্ত্রণা, এটা আমার চে আর কে বুঝেছে ভালো!

বেরিয়েছি ঘুরতে, মন ভালো না থাকলে ঘুরে বেড়ুই। মাঝেসাঁজেই করি আমি এটা। আমার কিছুই ঠিক করা থাকে না এই ব্যাপারটিতে, আজও কোথায় যাব ঠিক করা নেই, উদ্দ্যেশ আছে সেই ঘুরতে পারার মধ্যে আনন্দ ও বিষাদ আছে। আমি যেভাবে বেরলাম ঘুরতে তাতে বিষাদ নেই। আর সবসময় আনন্দ কে না খুঁজে! আজ আমি ব্যথার ছিঁটেফোটাও চাইছি না, শুধুই আনন্দ। এমন কোন জায়গা আছে যেখানে আনন্দ আর সুখ ছড়িয়ে আছে। সেখানে পা মাড়িয়ে আসতে পারলে, সব দুঃখ জল হয়ে উঠতো। জল নেই এমন শুষ্কতা চোখে সহ্য হয় না, কিন্তু দুঃখ-কষ্ট মানেই কী জল?

রিকশা নেব আজ। রিকশাচালক দারুন মুডে এসে দাড়াল। ওর মনোত্তাপ দেখে নিজের ভালো লাগলো। মন খারাপের মতন মন ভালো একটু ছোঁয়াচে নয়। কারুর হাসিহাসি মুখ দেখলে হাসি মুখে আসে, সুখি হতে পারাটা তখন ইচ্ছের ব্যাপার!

রিকশা চলছে। ভাঙাচুরো রাস্তা, ইটখোয়া বিছান। রাস্তার কাজ চলছে, এত দেরি করছে কেন? গত দু’রাত ঘুম হয়নি। আমার শ্বাস প্রশ্বাস ভারি থেকে নেমে এসেছে হালকায়। ফুরফুরে বাতাস বইছে। এই তো সমস্যা রিকশায় উঠে বলতে হলো কোথায় যেতে চাই। রিকশাচালক একমুখ বিরক্তি লুকিয়ে রিকশা ছুটাল। ঘোড়ার খড়ম পায়ে চলছে এই রিকশা। রিকশা কী শীতের দিনগুলিতে দৌড়ে চলে বেশি? চারকদেরও কষ্ট কিছু কম হয়। এদের জন্য কষ্ট হয়, তবে শূণ্য পকেট যখন ভাবি ব্যাপারটা এলেবেলে থেকে সমীকরণে এসে মিলে যায়। সেই সমীকরণের দৃষ্টি নিয়ে তাকাচ্ছি চারিদিক।

রাস্তার দু ধারে ল্যামপোস্ট, টেনে বাঁধা আছে একটি ব্যনার। এতে লেখা, ‘ক্যারিশম্যাটিক ক্যারিয়ার আপডেট টকিং’। বারিধারায় গুলকেতিন মিলনায়ত এ। সময় বিকেল পাঁচটা। তিন ঘন্টা চলবে, আলোকপাত করা হবে জেন্ডার ডেসক্রাইমিনেশন এন্ড নেপোটিজম নিয়ে।

আমার খুব খারাপ অভ্যেস, কোথাও সেমিনার শুনতে পেলেই ছুটে যাই। তারপর ফিরে এসে কাঁদি। দু’তিন ঘন্টা খামখা বসে থেকে কী পেয়েছি সেই সমীকরণ মিলছে না! যারা বড় ও সফল তাদের বক্তৃতা কতকটা মায়ায় ঢুকোতে পারলাম তা ভেবে দেখছি। একটি সুখি, সচ্ছন্দ ও খুশিমুখ নিয়ে ভেতরে ঢুকেছিলাম, বেরিয়ে এলাম বুকের কাঁপন নিয়ে। ভেবেই সারা কী করতে পারব, কী হবে আমাকে দিয়ে, এই পৃথিবীর ঋণ মাথায় কতটা চেপেছে আর তা ছাঁড়তে পারব কী করে?

রিকশা এসে থামলো, গুলকেদিন মিলনায়তন এ। 

মিলনায়তনের কাঁচের দরজা। এতে লেখা ওপেন। গ্লাসের দরজাগলে ঢুকেছি ভেতর। প্রচুর রোকজন এসেছে বক্তৃতা শুনতে। কী শুনশান নিরব! 

সিট কোথাও ফাঁকা দেখছি না, মার্জনচিত্তে দাড়িয়ে আছি স্টেজ একপাশে। 

একজন তরুণী চোখের ইশারা করলো বসতে। 

আমি হাসিমুখ দেখিয়ে ইঙ্গিতে বুঝালাম, কোন সিটটা তে?

আমি মধ্যসারি তে জায়গা পেয়ে গেলাম। বক্তামঞ্চে তিনজন বসেছেন। দুজন পুরুষ মাঝে সুন্দর ফুটফুটে উঠতি যুবতী। বক্তৃতা শুরু হবে, উপস্হাপক প্রথমে নিমন্ত্রণ করছেন বয়োবৃদ্ধ লোকটি কে। তাকে আমি চিনি নামে এর আগে দেখিনি কোথাও। সৈয়দ আহমদ হক। বিশিষ্ট কথা শিল্পী। তাঁর বই পড়েছি, বড় মাপের মানুষ। 

তিনি উঠে গেলেন বক্তৃতামঞ্চে। হেসে তাকালেন ভদ্রলোক, তার হাসি অমায়িক। সাহিত্যে নারীদের অবদান ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুরুষালি এক দারুন বক্তৃতা করলেন। মধ্যিখানে দুবার কাশলেন। গলায় মেঘ জমেছিল, একটু থেমে জল খেয়ে নিয়েছেন। চমৎকার কথাগুলি ছিল!

পরের জন বক্তৃতা করলেন, তাঁর প্রত্যেকটি কথা হাস্যরসে ভরে গেছে সেটা তিনি বুঝেননি। ভীষণ সিরিয়াস মুডে কথাগুলি বলে নিজের চেয়ারে এসে বসলেন। ইনিও জলের বোতল খুললেন দু ঢোক দিয়ে ঠান্ডা মাথা করে চাইলেন। এই ভদ্রলোক দৃষ্টি তে ভদ্রতা মেখে নিয়েছেন। আমার বাবার ওই কথাটা মনে পড়ে গেল। বড় মানুষ সবসময়ের জন্যই বড়। কিন্তু তাঁদের মাপতে হয় কাজ দেখে, শিখতে হবে দূরদৃষ্টি থেকে। 

তৃতীয় পক্ষের বক্তৃতা নিয়ে এলেন আনিমা খানম। এই ভদ্রমহিলার নামটি ব্যানারে বারবার চোখ যাচ্ছিল। কে জানে এই রহস্য, একজন সুন্দরি যুবতী বলেই কী! 

তিনি চাদর গায়ে জড়িয়ে এসেছেন। বয়েস কত হবে, আনুমানিক ত্রিশ-চল্লিশের কোঠায়। তাঁর গলা মিস্টি, চাহনি তে মায়া ভাব, কোন কথার জন্য নয় শুধু মায়াভাব চোখের দৃষ্টি আর ঝলমলে চুলগুলির জন্যই ভালোবাসা যায়। আমি যদি বলি এই ভদ্রমহিলাকে এক পলকে ভালোবেসেছি তবে বাড়িয়ে বলা হবে না। আমার এতটুকু সন্দেহ নাই, ইনি সুবক্তা ও যথেষ্ট বুদ্ধিমান চাহনি তে, কথায় মারপ্যাঁচ আছে। সবাই তা বুঝছে না, বোকা হদ্দের মতন তাকিয়ে রূপসুন্দর গিলছে। এদের জন্য সমবেদনা জানান ছাড়া আর আছে কী!

আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতন আমাদের এই বক্তাকে দেখছি। ঘরে আলো বাহারি রঙ, ঝলপল করছে। সে আলো চেহারায় পড়ছে বলেই কী সুন্দর লাগছে তাঁর মুখটা।

তিনি একজন চলচ্চিত্রকার, ফ্লিম ডিরেক্টর। এ ব্যাপারে তাঁর বিস্তর পড়াশুনো আছে। খুব ভালো লিখেন, চলচ্চিত্রের জন্য। দু’বার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। তার যৌগ্যতা নিয়ে আর কথা হবে না। বক্তা হিসেবে টেন অব টেন। তিনি কথা বললেন একেবারে কম সময়, পনের মিনিট। প্রত্যেকটি কথা, শব্দ, অক্ষর ও বাক্য স্পষ্ট, বুঝতে এতটুকু অসুবিধে হল না। 

হাততালি বেজে উঠল। উপস্হাপক সেমিনার শেষ করবেন। তার ঘোষণা হয়ে গেল। লোকজন বেরিয়ে যাচ্ছে। আমাকেও বেরুতে হবে, আনিমা চেয়ার ছেঁড়ে উঠছেন না! তার সঙে কথা বলার ইচ্ছে করছে। 

আমি একজন বেকার। পড়াশুনো শেষ করে চাকরি খুঁজছি। অনেক জায়গায় দরখাস্ত দিয়েও পাইনি চাকরি! মন ভেঙে গেছে আমার। ভেতরে কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়ুই। 

কী বলব?

আপনি হারান ছন্দ ভাব এনে দিলেন। আমার মধ্যে লুকিয়ে ছিল বড় হয়ে ওঠবার আকাঙ্খা ভাব। সেটা পুরণ হতে পেরেছে। এমন করে কে কবে বলেছে! ইশ্কর জানেন আপনার মধ্যে জাদু আছে, নামটা যেন কী!

ও হ্যাঁ, আনিমা খানম।

আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনার সেমিনারে আমি যাই।

তাই! এর আগে সেমিনার কেথায় হয়েছিল বল?

বিপবিপ শব্দ হল, দুবার নেচে উঠল ভাইব্রেট মুডে রাখা ফোন। আনিমা খানম স্ক্রীণে আলো জ্বাললেন, উড়ো খবর বলে কাঁধ নাড়ালেন। 

কী বুঝেছিলে?

“জীবনে আনন্দ ও ফুর্তিবাজিই সব। বাকিটুকুর নাম বিস্বাদ সফলতা খু্ঁজতে নেই, দিবে ধরা এসে। যদি সময় দেই কাজে।” 

ভালো বলেছ। তুমি কোথায় থাক?

এই তো কাছে, একটা হোস্টেলে।

পড়াশুনো?

হ্যাঁ, ওই আর কী!

এখনও পড়া শেষ করলে না?

হয়ে গেছে, বসে আছি।

আবার তো বললে পড়!

চাকরির পড়া পড়তে হয়

তাই?

হ্যাঁ, এখন কোথায় যাবে?

বিকেলে বিষণ্ন মন নিয়ে বেরিয়েছা। এই সেমিনারে এসে ভালো লাগছে। আপনার কথাগুলি ভেতরে এমন শান্তি এনে দিয়েছে কী বলব!

আর কিছু বলো না।

কথা নেই আর? 

নাই, এখন বাসায় ফিরে যাও।

হোস্টেল, ওটা বাসা নয়।

এমন করে বললে যেন হোস্টেলে তুমি ভালো নাই।

আছি ভালোই তবে বাড়ির মতন আনন্দ পাব কিসে!

তোমার দেশের বাড়ি?

চাঁদপুর, অঞ্জনগাঁও।

তুমি কী করতে ভালোবাস?

বই পড়তে।

লিখোটিখো?

একটু আধটু, যৎসামাণ্য! এই ছাঁপাশ কাউকে 

দেখাই না। 

কেন, দেখাও না কেন?

ভুল বুঝে বসবে?

ভুলটা কী মনে করছ?

আমি আমার জীবনের গল্প লিখি। যা আমার সঙে ঘটে, যাদের আমি দেখেছি, তাঁদের সযে আমার সম্পর্ক কোন ধারায় চলছে, কিছু প্রেম আর কিছু অপ্রেমের কথা। 

দারুন ঠোঁটে তুমি হেসেছ। এই হাসি অর্থহীন ও অর্থবোধক দুই আছে! 

যা লিখতে মন চাইছে লিখে ফেল। তুমি কী লিখবে তাতে কে হস্তক্ষেপ করে?

কেউ নয়, তবে আর কী!

চাকরি খুঁজছ কতদিন?

তা হবে চার বছর। 

চারবছরে কতগুলি দিন ও ঘন্টা হয় হিসেব করে বের কর। 

আমি ক্যালকুলেটর কোথায় পাব এখন?

কেন মোবাইলে ক্যালকুলেটর নেই!

হ্যাঁ আছে।

আমি মোবাইল বের করে হাতে নিয়েছি। অত্যন্ত রূপসী ভদ্রমহিলা আনিমা খান আমার মোবাইল হাতে নিয়ে তার সেলনাম্বার তুলে দিলেন।

তিনি হাঁটছেন। তার আশপাশে লোকের ভীর। কালো রঙের একটা ট্রিপলেট গাড়ি তে উঠবেন। দরজা খুলবার আগে আমার দিকে তাকালেন। আনন্দচোখে হাসলেন একটু। আহ এই আরাম, এখন জীবন কত পরিপূর্ণ! 

দু সপ্তা পর আমাদের দেখা হল।

ফোন ধরছেন না, কথাও নয়। টেক্সটের রিপলাই দিবে না এ কিরকম যন্ত্রণা! ফোন নাম্বার দেবার মানে কী! 

আজ ধরলেন আনিমা খানম।

 ভালো লাগলো বলতে, আপনার সময় হবে? দেখা করতাম।

তিনি দারুন হেসে বললেন, না পারছি না। ভীষণ ব্যস্ত, একটা সেমিনার আছে। তুমি ফ্রি থাকলে চলে এসো।

আমার মুখ একটু গম্ভীর হয়েছে। তবু হাসিমেখে বললাম, আসব। দেখা করতে যখন চাইছি, দেখা আজ হবে।

ঠিক আছে, কবি সারদা জামান মিলনায়তন। তুমি চলে এসো নিরঞ্জন। 

হোস্টেল থেকে বেরুলাম। মন ভালো লাগছে। পকেটে টাকা আছে। কাল টিউশনির বেতন পেয়েছি। শূণ্য পকেট নিদারুন, এই যন্ত্রণা পৃথিবীর সব চে বড় দুঃখ টেনে আনে। কিন্তু টাকা হলেই দরকার পড়ে নারীসঙ্গ। কী কারন ইশ্বর জানেন, টাকা ও নারীর সন্ধিক্ষণে যে সুখ 

তা কেমন, তৃপ্তিকর? একেক জনের কাছে অনুভূতিটি একএক রকম। আবার টাকার সঙে নারীর মনোদেহ, প্রেম, স্নেহ-মমতা লটকে গেছে। সেই বৃত্তজালে আটকায় নি কে! আমি সেই পথ ধরে চলছি। আমার রিকশা যেন মহাকালের সেই অবুঝ গতি নিয়ে হাঁটছে। 

      কবি সারদা জামান মিলনায়তন। বিরাট কক্ষ, দ্বিতল ভবনটি। পুরোটা দেওয়াল ঘিরে আছে। প্রচুর গাছপালা এখানে, বেশ ছায়াময়। হালকা বাতাস। একপাশে বাগান, লেকের জলে তার ছায়া পড়েছে। সূর্যরশ্মি বিকিরিত হচ্ছে। আমার চোখে নীল, রোদের চশমা! লেকের ধারে টেবিল ও চেয়ার আছে। আমি কিছু সময় বসলাম। ভেতরে ঢুকব। ওই যে বক্তৃতা শুরু হয়ে গেছে। আমি এখন ভেতরে যাব, একটা সিট খুঁজে বসব, চুপ করে তিন সাড়ে তিন ঘন্টা অতিথি বক্তাদের জ্ঞানগম্যি কথা শুনব। কিছু ভেতরে বসবে, আর কিছু ওগড়ে যাবে। মোটিভিশন স্পিচ কথাটা শুনলেই কেমন গা জ্বলে যায়। এটা কে কবে এনেছে কে জানে! যারা এর দ্বারা পথ হারিয়েছে তারা জানতে পারলে তাকে কী করতো ইশ্বর জানেন! খুব বাজে একটা সত্য, জনকের মৃত্যু হয় অনুসারি লোকবলের হাতে। আমি ভথভ্রষ্ট নই, কাজেই রাগ সামলে শান্তমনে ভেতরে ঢুকলাম।

আনিমা খান বক্তৃতা করছেন। আজ কথা বলছেন উচ্চস্বরে, তার মুখে হাসি ভাব লুকোন। আমি কমিনিট শুনলাম। স্পষ্ট বুঝতে পারলাম না, কী বলতে চাইছে। টপিক ‘ আফটার লাইফ এন্ড হিউম্যান সোসিওলজি’। 

তাঁর আলোচনার বিষয় আফটার লাইফ। পরজন্ম আছে এবং এ থিওরি সত্য সেটা কোনভাবে মানতে পারছেন না অন্য বক্তারা। কিন্তু তিনি, বুঝালেন মানবজনম চলছে একটা বৃত্তে ঘিরে। জন্ম, বয়েস ও মৃত্যু। পরজীবীতা, আবার জন্ম নেওয়া, অতীত বিস্মৃতি, ভাবনা, অতপর নতুন পৃথিবীকে মেনে নেওয়া। জন্মান্তরে বিশ্বাস করাটা একটা কমন ব্যাপার! এটা ধর্মীয় ভাবে স্বীকৃত, তবে এর মাধ্যম ভিণ্ণ। সুবিধের করে নিয়েছে কতিপয় বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। ধর্ম খারাপ, ভালো কাজ ও তার পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে। সেটা আনিমা খান বিশ্বাস করছেন না। তিনি ওকদিস্তে কাগজ হাতে নিয়ে বক্তৃতা করছেন। মাঝিমধ্যে নোট তুলে নিচ্ছেন মুখে, আর তা জোড়াল যুক্তি সহকারে বলছেন। অন্যদের কেমন লাগছে জানি না, শুনতে আমার বেশ লাগছে। সবার এইসব কথা ভালো লাগবে না, এটাই সত্য।

আনিমা খানের জন্য আমার গর্বানুভূতি হচ্ছে। ভালোবাসা বাড়ছে, একই সঙে ভয়। যে মেয়ে এতটা জানে তাকে ম্যিনেজ করা সহজ হবে না! আমি স্নিগ্ধচিত্তে তার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার দিকে চোখ পড়েছে, একটু হাসলো সে।

দেওয়াল পাখা ঘুরছে, বাতাসে চুল উড়ছে। চুল ঢেকে দিচ্ছে কপোলের অর্ধেকটা। অবাধ্য চুল! টিপ পড়েছে কালো রঙা, আজ শাড়িতে রঙচঙ নেই। মুখে হাসি কিন্তু মুডে সিরিয়াস।

 সেমিনার শেষ হলো। দেড় ঘন্টা কেটেছে। 

 আমি বাইরে দাড়িয়ে তাঁর জন্য করছি অপেক্ষা। তিনি এসেছেন, আমার এমন সামনে। দাড়ালেন আমাকে দেখে, বললেন- কী ব্যাপার?

বেশ তো! খুব ভালো বক্তৃতা হয়েছে। আমার ভালো লেগেছে, অন্যরাও পছন্দ করেছে।

তিনি গাড়ি আনেননি। সেমিনার আয়োজক গোষ্ঠী তাকে পৌঁছে দিবে। তিনি নিষেধ করে দিলেন।

 আমার সঙে বেরুবেন।

 শখ হয়েছে রিকশায় উঠবেন। 

আমরা রিকশায় উঠে বসলাম। শেষ বিকেলের ব্যস্ত রাস্তা। প্রচুর আলোবাতির মধ্যিখানে আমাদের রিকশা চলছে আস্তে ধীর গতি তে। বইছে কী ফুরফুরে বাতাস!

আনিমা বললো, ফোন নাম্বার দিয়ে কী ভুল হয়েছে?

কী, বুঝিনি!

এত ফোন কর কেন?

ও..ভালো লাগে তাই। কথা বলতে ইচ্ছে করে।

গত কয়েকদিনে সাতাত্তরটি টেক্সট করেছ। এই পাগলামোর মানে কী!

কী বলব, উত্তর দিচ্ছিলে না!

কিসের উত্তর দেব?

টেক্সট করলে উত্তর করবে তো!

আজব তো! খাইছ? কোথায় তুমি? কী করছ? ঘুমুবে এখন? কখন বেরুবে? কখন ফিরলে? আজ কী প্ল্যান, এইসব প্রশ্ন পাঠাও। কেন!

আমি তোমাকে চাই। আমার মত করে আমার সবটুকুন। তুমি হবে না, বলো!

জানি না, আমার কোনকিছু ঠিক করা নেই। যদি সত্যই ভালোবাস তবে না করব না। না করে দেবার ক্ষমতা নেই। 

কারন?

কারন নেই, তোমাকে আমার খুব আত্মীয় মনে হয়, আর ভীষণ আপন একজন।

আমি জানি, এটা বলবে তুমি!

কারন, রাতের বেলা ঘুমুও না তুমি! ফোৎফোৎ করে কান্না করো, সেই শব্দও আমি শুনতে পাই। তোমার অশ্রুসজল চোখমুখ আমার মধ্যে ভেসে ওঠে, আর তুমি আছ ফোন, মেসেজ নিয়ে। আমি তোমার সবই দেখতে পাই, বুঝতে পারি। 

আমার মনে হয়েছিল, তোমাকে দেখেই।

কী?

তুমি আমার, বুক কেঁপেছিল?

হ্যাঁ, কাঁপছিল।

কেন?

জানি না, কেন! কেন!

এই দ্যাখ এখনও কাঁপছে?

কী করে দেখব?

বুকে হাত রাখ। বুঝে যাবে। 

হ্যাংলামো রাখো। অতশত নেকোমি করো না। তুমি আমারই, এতদিন কোন গর্তে লুকিয়ে ছিলে দেখা দাওনি। আমাকে চিনতে না?

তোমার মতন ক্ষমতা, যশ-খ্যাতি আমার নেই। আমি তোমাকে কোথাও দেখিনি।

এই তো কাঁদালে! বলতে পারতে খুঁজেছি তোমাকে। খুঁজে পেয়েছি, এইতো শক্তকরে বোগল দাবায় ধরে আছ। 

ভালোবাস? 

হ্যাঁ, তোমাকে ভালোবাসি। 

তোমার হাত কাঁপছে।

হ্যাঁ, এবার আমার বুকে হাত রাখ। দ্যাখ বুক কাঁপছে। 

সত্যিই কাঁপছে, এর মানে ভালোবাস।

এই কাঁপন ধরে ওঠার মানেই কী ভালোবাসা?

হ্যাঁ।

তবে অনেককাল ধরে আমি তোকে ভালোবাসি, তোর নাম ভুলে গেছি। অ্যাই তোর নাম কী!

ভুলে গেছি। একটা নাম দাও।

তুই আমার শঙ্খ। আর আমি?

চিঁল!

রিকশা থামলো ক্যাফেটেরিয়ার সামনে। দুজনে রিকশা থেকে নেমেছি, ঢুকেছি ভেতরে। 

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর


Kurigram Songbad © 2025. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest
error: Content is protected !!