পাকা ঘর ও সোলার সুবিধা দেওয়ার নামে ৬০ লাখ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও তার স্ত্রীর নামে লিগ্যাল নোটিশ।
প্রতিবেশীর জমি দখল ও পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগের পর এবার সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে দুস্থ ও গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার নামে ৬০ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এমন দাবি করে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে লিগ্যাল নোটিশ (উকিল নোটিশ) পাঠিয়েছেন মো. মোকসেদ আলী নামে রৌমারীর এক বাসিন্দা।
২৬ জুন জাকির হোসেনের কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বাসস্থানের ঠিকানায় মোকসেদ আলীর পক্ষে তার আইনজীবী খাদেমুল হাসান এমজী নোটিশ পাঠান। নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে সমুদয় টাকা ফেরৎ দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী, তার স্ত্রী ও এক নিকটাত্মীয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী মোকসেদ আলীর আইনজীবী খাদেমুল হাসান এমজী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নোটিশে মোকসেদ আলী দাবি করেছেন, ‘ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাকির হোসেন, তার স্ত্রী সুরাইয়া সুলতানা এবং নিকটাত্মীয় বাবুল মন্ডল ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙা, চর শৌলমারী ও বন্দবের ইউনিয়নের ১৯১ টি ভূমিহীন-গৃহহীন গরীব ও দুস্থ পরিবারের জন্য পাকা ঘর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন সময়ে ৬০ লাখ টাকা এবং ৭২ টি পরিবারকে সোলার সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরও ৭২ হাজার টাকা গ্রহণ করেন।’ অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যোগসাজসে এসব অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আত্মসাৎ করে প্রতারণা করেছেন বলে নোটিশে দাবি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী আরও দাবি করেছেন, ‘ মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর অধীন দুই কক্ষবিশিষ্ট সেমিপাকা গৃহ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের কথা বলে প্রকল্প পরিচালকের স্বাক্ষর ও স্মারক নম্বর সংবলিত পত্র এবং চিফ একাউন্ট এন্ড ফিন্যান্স অফিসারের জারি করা পত্রের আলোকলিপি দেখিয়ে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, তার স্ত্রী সুরাইয়া সুলতানা এবং নিকাত্মীয় বাবুল মন্ডল যোগসাজস করে মোকসেদ আলীর কাছে ১ লাখ টাকা সহ স্থানীয় লোকদের নিকট সর্বমোট ৬০ লাখ ৭২ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। কিন্তু কেউ কোনও ঘর কিংবা সোলার সুবিধা পাননি। পরবর্তীতে টাকা ফেরত চাইলে অভিযুক্তরা টালবাহানা শুরু করেন। ২০২৪ সালের ১০ মার্চ স্থানীয় লোকজন সহ মোকসেদ আলী টাকা ফেরত চাইতে গেলে অভিযুক্তরা টাকা গ্রহণ করার কথা স্বীকার করলেও তা ফেরত প্রদানে অস্বীকৃতি জানান।’ সাবেক প্রতিমন্ত্রী তার স্ত্রী ও নিকটাত্মীয় সহ ওই টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে নোটিশে অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মোকসেদ আলীর পক্ষে তার আইনজীবী খাদেমুল হাসান এমজী বলেন, ‘যাবতীয় তথ্য প্রমাণ হাতে থাকায় প্রাথমিক আইনি পদক্ষেপ হিসেবে আমার মক্কেল নোটিশ পাঠিয়েছেন। অভিযুক্তরা টাকা ফেরত না দিলে আমার মক্কেল আদালতে মামলা করবেন।’
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুর পর্যন্ত উকিল নোটিশ হাতে না পেলেও এ ধরণের অভিযোগকে অপপ্রচার ও হেয়প্রতিপন্ন করার ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি এমন একজন এমপি ছিলাম যে টিআর, কাবিখা কিংবা রিলিফের টাকা ধরিনি। ঘর নির্মাণের নামে টাকা নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কেউ বলতে পারবেনা। এগুলো আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের অংশ।’
অভিযোগকারীর পরিচয় সম্পর্কে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সে (মোকসেদ) আমার কাছে কখনও আসেনি। সে এভাবেই ব্যবসা করে। দশ জনের কাছে টাকা নিয়ে সংসার চালায়। তার এমন দাবির কথা শুনে আমি তাকে ডেকে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সে ভয়ে আসেনি। আমি জানতে চাই তার কাছে কে টাকা নিয়েছে।’
স্ত্রী ও নিকটাত্মীয়ের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘ আমার স্ত্রীকে আমি চিনি। সে আমার চেয়েও সৎ। আর বাবুল মন্ডল আমার দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই। তার কথা জানি না। আমাকে না জানিয়ে কেউ কাউকে টাকা দিলে সেটা আমার জানার কথা নয়, সেটা তাদের ভুল। আমি সেটার দায়ও নিব না।’
Leave a Reply