কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে গত কয়েকদিন ধরে দফায় দফায় ভারী বৃষ্টির ফলে আমনের বীজতলা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষক।বীজ ধান গজানোর এবং সুরক্ষা নিয়ে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। ইতোমধ্যে যেসব কৃষক জমিতে আমন ধান বীজ বপন করেছেন তাদের বীজতলা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে ।এতে অনেকের বীজ ধান পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে।
অপরদিকে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে এখনও অনেক কৃষক বীজ ধান বপন করতে পারেননি। আমন ধানের বীজ বপনের ভরা মৌসুমে বৃষ্টির বাগড়া বেশ ভাবিয়ে তুলছে এ অঞ্চলের কৃষকদের। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকদের বেশিরভাগ বীজতলা পানিতে ডুবে আছে। বীজতলা ডুবে থাকায় অনেকের বীজতলার চারাগাছ পঁচে নষ্ট হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় বীজতলা জেগে থাকলেও ভারী বৃষ্টির তোড়ে বীজতলার চারাগাছ কাদা পানিতে লেপ্টে আছে। এমন পরিস্থিতিতে বীজতলা নিয়ে শঙ্কিত আছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের কৃষক হায়দার আলী বলেন, তিনি ৪ বিঘা জমিতে আমন আবাদের জন্য বীজতলায় বীজ বপন করেছেন। গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিতে বীজতলা তলিয়ে সমস্ত চারা পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তার প্রায় পাঁচ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। এখন আবাদ করতে হলে আবার নতুন করে বীজতলা তৈরি করে বীজ বপন করতে হবে। এ অবস্থা তার একার নয় । অনেকের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। ওই একই এলাকার মাঝারি কৃষক সফিয়ার রহমান বলেন, তিনি ২২ বিঘা জমিতে আমন চাষ করবেন। এজন্য এক বিঘা জমিতে বীজ ধান বপন করেছেন । কিন্তু ভারী বৃষ্টিতে গোটা বীজতলার বীজ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বীজতলায় চারা উৎপাদন সম্ভব হবে না। বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান বলেন, তিনি প্রতিবছর ১২ থেকে ১৩ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেন। এরজন্য ২০ শতাংশ জমিতে চারা উৎপাদন করতে হয়। প্রতিবছরের নেয় এবারও বীজতলায় গুটি স্বর্ণা ও বঙ্গবন্ধু জাতের ধানের বীজ বপন করেছিলেন। কিন্তু বীজতলায় ধানের বীজ বপনের দিন থেকেই শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। ফলে আমার বীজতলার ধানের চারা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে নতুন করে যে বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না। আবাদ নিয়ে চিন্তায় আছেন। এমন পরিস্থিতিতে সুখবর মেলেনি আবহাওয়া অফিস থেকেও।
আজ ২০ জুন বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টায়ও জেলায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, উপজেলায় ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকরা ইতিমধ্যেই বীজতলা তৈরি শুরু করেছেন। গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে ১০ হেক্টর জমির বীজতলা তলিয়ে গেছে। আমনের বীজতলা তৈরি জন্য ১৫ জুলাই পর্যন্ত সময় রয়েছে। চারা উৎপাদনের পর্যাপ্ত সময় থাকায় কৃষকদের বৃষ্টিপাত কমে গেলে বীজতলায় ধানবীজ বপনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে ।
Leave a Reply