কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ঈদ আনন্দে দর্শনার্থীর ঢলে মূখরিত হয়ে ওঠে শেখ হাসিনা ধরলা সেতুসহ দুই তীর। মুক্ত হাওয়া আর উন্মুক্ত দিগন্ত জোড়া এলাকায় আনন্দ,উৎসব আর হইহূল্লোড়ে মেতে উঠেছে জনতা। এ উপলক্ষে উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম শেখ হাসিনা ধরলা সড়ক সেতুর পাড় জনসমুদ্রে পরিনিত হয়।
ঈদের দিন থেকে শুরু করে তৃতীয় দিন বিকালে উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর পাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুর পাটাতনসহ দুই তীরের বাঁধে বিনোদন প্রেমি মানুষ কানায় কানায় পূর্ণ। উপজেলায় কোন বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী উপজেলাসহ লালমনিরহাট সদর থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসেন এখানে উৎসব আনন্দে মেতে ওঠতে। অনেকেই সেতুর উপর ও বাঁধে এবং ধরলা নদীর কাছাকাছি গিয়ে প্রিয়জনের সাথে মোবাইলে ছবি ও সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কেউবা বেড়িয়ে পড়েন নৌকা ভ্রমনে ।
গত দুই বছর করোনার বিধি নিষেধ থাকায় ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে না পারলেও এ বছর করোনার বিধিনিষেধ না থাকায় সেতুর দুই পাড় দিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরীরা পরিবার পরিজন নিয়ে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ভ্যান, রিকসা, অটো, মোটর সাইকেল, বাইসাইকেল, মাইক্রোবাস করে সেতুর মাঝ খানে দাড়িয়ে প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার পরিজনদের সঙ্গে ছবি ও সেলফি তুলতে ব্যবস্ত সময় পাড় করছেন। আবার অনেকেই ধরলায় ডিঙ্গি নৌকায় চড়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করছেন। কেউ কেউ আবার ধরলার চর গুলোতেই ঘুরে ঘুরে দেখছেন। বিশেষ করে সন্ধ্যার গোধুলি বেলায় সূর্য্যরে অস্ত যাওয়ার দৃশ্যটা মুগ্ধ করে তুলবে দুর-দুরান্তের দর্শনার্থীরা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। সেতুর দুই পাড়ে ১০ থেকে ১৫টি ফুচকা, চানাচুর, আইক্রিমের দোকানের পাশাপাশি চুরি-ফিতা ও বেলুনসহ বিভিন্ন রকমারীর দোকান বসেছে। সব গুলো দোকানেই তেক্রাদের উপচেপড়া ভির দেখা গেছে। সেই সঙ্গে ফুলবাড়ী -লালমনিরহাট ও বড়বাড়ী সড়কে র্দীঘ যানজটের সৃষ্টিও হয়েছে।
উপজেলার নাওডাঙ্গা এলাকা থেকে মাহাবুবুর রহমান ও ওসমান গণি জানান ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ১০ থেকে ১৫ জন বন্ধু শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর পাড়ে এসেছি। এখানে এসে দেখি বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ ঈদের আনন্দ ও উৎসব উপভোগ করছে। দীর্ঘ দুই বছর পর এবারের ঈদের আনন্দ উপভোগ করেছি। তারা আরো জানান, শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর পাড়ে একটি বিনাদন পার্ক থাকলে খুবেই ভাল হতো।
কুড়িগ্রাম সদর থেকে আসা যুবক নাজমুল হাসান জানান, এবার ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে শেখ হাসিনা ধরলা সেতু পাড়ে এসেছি। ধরলা পাড়ে বন্ধুদের সঙ্গে অনেক মজা করেছি। মুক্ত বাতাসে বন্ধুদের সঙ্গে গিটার বাজিয়ে গান গেয়েছি। সেই সাথে ধরলায় ডিঙ্গি নৌকায় ঘুরেছি। সব মিলিয়ে আমরা এবারের ঈদ-আনন্দটা খুবেই ভাল হয়েছে। তবে তিনিসহ অনেক দর্শরার্থী ধরলা পাড়ে একটি বিনোদন পার্কের দাবী জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ধরলা সেতুতে চলমান সাধারণের দায়িত্বে নিয়োজিত ফুলবাড়ী থানার উপপরিদর্শক খোরশেদ আলম জানান, করোনা না থাকায় এবারের ঈদ উৎসবে দর্শনার্থীদের ঢল নামে । দর্শনার্থীরা তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে শন্তিপূর্ণ ভাবে ঈদের আনন্দ-উৎসব উপভোগ করতে পারায় আমাদেরও ভাল লাগছে।
এ বিষয়ে শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম সোহেল জানান, প্রতি ঈদে শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর পাড়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেন। সেতুর পশ্চিম পাড়ে পর্যাপ্ত জায়গা আছে। সেখানে একটি বিনোদন পার্কের ব্যবস্থা করলে খুবই ভাল হতো। তিনি আরো জানান ধরলা পাড়ে একটি বিনোদন পার্কের জন্য উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হবে।
উল্লেখ্য , ১৯ টি স্প্যান বিশিষ্ট শেখ হাসিনা ধরলা সেতু ১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। ৯৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের পিসি গার্ডার সেতুটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় এলজিইডি। গত ২০১৮ সালের ৩ জুন রোববার সকাল সাড়ে ১০ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেখ হাসিনা ধরলা সেতুটি’র শুভ উদ্বোধনের মাধ্যমে সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
Leave a Reply