কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ঐতিহ্যের গঁঙ্গা পূজা উপলক্ষে দশোহরা মেলায় পূন্যার্থী ও গ্ৰামীণ জনতার ঢল।
১৬ জুন (রবিবার) কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে দেড়শো বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী গঁঙ্গা পূজা উপলক্ষে দশোহরা মেলায় শতশত পূন্যার্থী ও হাজারো গ্রামীণ মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গন। দুপুরের প্রখর রোদকে উপেক্ষা করেই দুর-দুরান্তর থেকে আসা দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন মংলা প্রাঙ্গনে। উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পশ্চিম ধনিরাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরের আশপাশে ও শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের সোনাইকাজী শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর দক্ষিণ তীরে রোববার সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত মেলা বসে ।
এ উপলক্ষে সকালে ধরলা সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের নদীতে চলে পূজো ও স্নান ।স্নান অনুষ্ঠানের পাশাপাশি গীতাপাঠ, ভগবত আলোচনা, উপবাস এবং সর্বশেষ প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। এসময় নদীতে ডুবে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বন্ধু বা সই পাতান।
পরে মেলা বসে। মেলায় নানা আয়োজনের পাশাপাশি ছিল দা, বটি, কাঠারি ও সব ধরনের হাতিয়ারসহ গৃহকর্মে ব্যবহৃত উড়ুন, গাইন, লাঙ্গল, জোয়াল, ঝাপি, ডালি, কুলা, ডুলি, ঝাড়ু,পাটি হাতপাখাসহ সস্তায় কৃষি কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদী ও মৃৎপাত্রের বিভিন্ন বাহারি তৈজষপত্র। আমি, কাঁঠাল,লিচ,পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফল।বড়মাছের শুটকিসহ রুই,কাতল, মৃগেল,বোয়াল,আইল,মাগুর,শিংসহ বিভিন্ন জাতের বড় মাছ, বাতাসা, মুড়ি,মরকি, মিষ্টি -জিলাপী, বেলুনসহ শিশুদের বিভিন্ন ধরনের খেলনা। শিশুদের বিনোদনের জন্য বসে অস্থায়ী লাইনে রেলগাড়ি।
শেখ হাসিনা ধরলা সেতুর পাড়ে মেলায় আগত পুরোহিত বিপ্লব চক্রবর্তী জানান,প্রতি বছর মহাদশমীতে এখানে গঁঙ্গা স্নান সেরে পূর্নার্থীরা পাপ মুক্ত হন।
লালমনিরহাট সদরের থানা পাড়ার প্রভাতী রানী রায় ও নাগেশ্বরী উপজেলার বদিজামালপুর পূন্যার্থী মালতী রানী রায় বলেন, স্নান করে পাপ মুক্ত হওয়ার জন্য এখানে এসেছি।
উপজেলার পূর্ব ধনিরাম গ্ৰামের মুক্তিযোদ্ধা দেবেন্দ্র রায় বলেন,দেড়শো বছর আগে মৃত শরৎ চন্দ্র রায় মেলার জন্য এক একর জমি দান করেন। শুরুতে মেলার নিজস্ব জমিতে পুজা ও মেলা অনুষ্ঠিত হতো। ধরলার ভাঙ্গন ও গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় নির্দিষ্ট স্থানের আশপাশে প্রতিবছরই গঁঙ্গা পূজা ও দশহরা মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
দুই স্থানের দশোহরা মেলার স্নান ও পূজা কমিটির সভাপতি হরিকান্ত চন্দ্র রায় জানান, ঐতিহ্যবাহী গঁঙ্গা পূজা ও দশহরা মেলাটি প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো। আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসছি। আমরাও আমাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ মেলার আয়োজন করা। বর্তমানে নানা কারণে এ মেলার জৌলুস হারাতে বসেছে।
উল্লেখ্য, সূর্য বংশীয় রাজা দশোরত দশমী তিথিতে পাপ মোচনের জন্য গঙ্গা নদীতে স্নান সেরে পূজা দিয়ে নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরে আসতেন। এরই অনুকরণে বাংলা ১২৫০ সালে গঙ্গার শাখা নদী ধরলায় পাপ মোচনের জন্য গঙ্গা পূজা করে হিন্দুধর্মলম্বীরা দশমী তিথিতে নিষ্পাপ হন। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভপতি সুনীল চন্দ্র রায় জানান, উৎসব মূখর পরিবেশে গঁঙ্গা পুজা ও দশোহরা মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেলার নিরাপত্তা বিধানে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় প্রশাসন সহযোগিতা প্রদান করে।
Leave a Reply