কুড়িগ্রামের রাজারহাটে শিক্ষকতার পাশাপাশি মৌসুমি ফল লটকন চাষ করে সফলতা পেয়েছে স্কুল শিক্ষক মনিবুল হক বসুনিয়া। উৎপাদিত মৌসুমি ফলে পরিবারের ভিটামিনের চাহিদা পুরনের পাশাপাশি বাজারজাত করে মুনাফা ও অপ্রচলিত শ্রেষ্ঠ ফলচাষির সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
টক-মিষ্টি রসালো এই ফলটিতে থাকা অ্যামাইনা অ্যাসিড ও এনজাইম শারিরীক গঠন এবং কোষকলার সুস্থতার জন্য কার্যকরী ভূমিকা রাখে। মানবদেহে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও লটকনের জুরি নেই।স্বাদে গুণে অতুলনীয় ও জনপ্রিয় একটি ফল লটকন। এটি খেতে পছদ করে না এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম।স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে,হলুদ রঙের গোলাকৃতি এই ফল দেখতে যেমন সুন্দর,তেমনি খেতে ও সুস্বাদু। রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মো: মিজানুর রহমান বলেন,লটকন ভিটামিন “সি”বেশি থাকায় মাত্র দু-তিনটি ফল নিয়মিত খেলেই একজন মানুষের মানবদেহের ভিটামিন “সি” এর অভাব পূরণ হয়।সরেজমিনে দেখা গেছে, সুপারী বাগানের ভিতরে জনপ্রিয় লটকন চাষ করে সাড়া ফেলেছেন স্কুল শিক্ষক মনিবুল হক বসুনিয়া। ফলে ফলে ভরে উঠছ তার শখের লটকন বাগান। গাছে ঝুলছে হাজার-হাজার লটকন ফল।
তিনি সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ সাধারণ সম্পাদক।তিনি উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের আবুল কাশেম বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মনিবুল হক বসুনিয়া। বাড়ি সুকদেব গ্রামেই। আগে থেকে বাড়ি সংলগ্ন ৭০শতাংশ জমিতে ছিলে সুপারির বাগান। এটি তার পিতা প্রয়াত শিক্ষক ছবির উদ্দিন বসুনিয়া করে গেছেন। প্রায় ১৭বছর পূর্বে ওই শিক্ষক পার্শ্ববর্তী কদমতলা এলাকার একটি বাড়ির সুপারি বাগানের ভিতরে লটকনের বাগান দেখতে পান। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন তাদের সুপারি বাগানের ভিতরেও তিনি লটকন বাগান করবেন।শিক্ষক মৌসুমি ফলচাষী মনিবুল হক বসুনীয়া বলেন,সেই সময় আমি নাসার্রী থেকে ৫টাকা দরে ৫২৫টাকায় ১০৫টি চারা ক্রয় করে কয়েক দিনের মধ্যে নিজ হাতে সুপারী বাগানপর ভিতরে সারিবদ্ধভাবে লটকন চারাগাছ রোপন করি। এরপর প্রতিবছরে দু-একবার করে নিড়ানি সহ জৈব সার ও সেচ প্রয়োগ করে আসছি। ১২বছরের মধ্যে গাছগুলোতে ফল দেয়া শুরু হয়। এবছরে ১০০টির মধ্যে ৫৫টি গাছপ অন্যান্য বছরের চেয়ে সবার্ধিক লটকন ধরছে। আশা করছি,প্রতিটি গাছে কমপক্ষে দু-থেকে আড়াই মন করে লটকন হবে। গত বছর বাজারে প্রতিমন লটকন ৩হাজার টাকা থেকে ৪হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। সে হিসেবে এবছর আমি ৬ থেকে ১০ লক্ষ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন,শুধু চাকুরি বা ব্যবসার পিছনে না ছুটে যাদের সুযোগ আছে তারাও যদি আমারমত সুপারি বাগানের ভিতরে লটকনের বাগান করেন তাহলে তারা স্বাবলম্বি হতে পারবেন।স্থানীয় যুবক নাজমুল ইসলাম বলেন,শিক্ষক মনিবুল হকের লটকন বাগান দেখে আমিও শুরু করছি এবং দু-এক বছরের মধ্যে ফলন শুরু হবে বলে আশা করছি।সুকদেব গ্রামের বাসিন্দা লিটন বলেন,লটকন বাগান করে মনিবুল হক বসুনিয়া এখন গ্রামে অন্যদের অনুকরনীয় হয়ে উঠছেন। গ্রামের অনেকেই তার মতা সুপারির বাগানের ভিতরে লটকন চাষ শুরু করছেন।
রাজারহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার সাথী বলেন,তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি ফল বাগান লাগিয়ে নিজের পরিবারের চাহিদা পুরন করে বাজারজাত করে মুনাফা পাচ্ছেন। সময় কাজে লাগালে সফলতা সম্ভব প্রমাণ রাখলেন তিনি।
এছাড়াও কৃষি অফিস থেকেও কৃষকদের সুপারি বাগানের ভিতরে কিংবা বসতবাড়ির চারপাশের পতিত জায়গায় লটকনসহ মৌসুমি ফসলের চারা গাছ রোপণ করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
Leave a Reply