কাশফুল ঘাসজাতীয় একধরনের বহু বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Saccharum spontaneum, ইংরেজি নাম Kans grass। ধান, গম, কাউন, ইক্ষু, বাঁশ প্রভৃতি ফসলের মতোই এটি Poacea গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। যদিও উচ্চতায় কাশফুল তিন মিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে, তবুও এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘাস নয়। তবে রূপে-গুণে কাশফুল কোনো অংশেই কম নয়। ইউরোপের রোমানিয়া থেকে আগত এই উদ্ভিদ এখন বাংলাদেশের প্রকৃতি ও অর্থনীতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত।
কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ১৬টি নদ-নদী, আর নদীর বুকে রয়েছে প্রায় ৪২০টিরও বেশি চর। বর্ষাকালে এই নদীগুলোর পানির প্রবাহে চরাঞ্চলের মানুষ বন্যা ও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক পরিবারকে বছরে একাধিকবার বাড়িঘর বদলাতে হয়, ফসল-গবাদি পশু ভেসে যায়, এমনকি প্রিয়জনের কবরও নদীগর্ভে বিলীন হয়। এ এক দুঃসহ জীবনযাত্রা। তবুও নদী মানুষের জন্য আশীর্বাদও বটে – উর্বর জমি, তাজা মাছ, দুধ, শাকসবজি এবং জীবিকার নানা সুযোগ এনে দেয়।
দীর্ঘদিন অবহেলিত কুড়িগ্রাম এখন পর্যটনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। শরৎকালে নীল আকাশের নিচে মাঠজুড়ে সাদা কাশফুলের সমারোহ সৃষ্টি করে অনন্য নৈসর্গিক দৃশ্য। এসব কাশবন এখন শত শত পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো দেখে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছে। এতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা উপকৃত হচ্ছেন।
পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, সামান্য উদ্যোগ নিলেই কাশফুলভিত্তিক এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে পারে। পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠলে কর্মসংস্থান হবে, স্থানীয় সংস্কৃতি ও পরিবেশও বিশ্ব দরবারে পরিচিতি পাবে।
কাশফুল শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, এর রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট মিলে প্রতিবছর প্রায় ৩০০ কোটি টাকার কাশফুল উৎপন্ন হয় (সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার)।
বাংলা সাহিত্যেও কাশফুলের বিশেষ স্থান রয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, নির্মলেন্দু গুণ, শামসুর রাহমান প্রমুখ কবির রচনায় শরতের প্রতীক হিসেবে কাশফুলের উল্লেখ আছে। শামসুদ্দীন আবুল কালামের কাশবনের কন্যা (১৯৫৪) উপন্যাসও এরই অনন্য দৃষ্টান্ত।
অবহেলিত কুড়িগ্রাম যদি সঠিক পরিকল্পনায় কাশফুলকে কাজে লাগাতে পারে, তবে এখানকার মানুষ পাবে কর্মসংস্থান, আয় ও উন্নয়নের নতুন সুযোগ। কাগজ শিল্প, পর্যটন, পশুপালন, হস্তশিল্প – সবকিছু মিলিয়ে কাশফুল হতে পারে কুড়িগ্রামের স্বনির্ভরতার নতুন ভিত্তি।
লেখক: অধ্যক্ষ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, কুড়িগ্রাম।
Leave a Reply