নিজস্ব প্রতিবেদক
কুড়িগ্রাম
প্রতিনিয়ত নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে কুড়িগ্রাম জেলা। প্রতি বছর বর্ষাকালে জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমার নদ-নদীর তীরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিলেও এ বছর বর্ষা শেষ হওয়ার পরও নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে সদর, রৌমারী, ফুলবাড়ী ও চিলমারীসহ বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৫টি পয়েন্টে নতুন ভাঙন দেখা দিয়েছে।
ভাঙনে ইতিমধ্যেই অন্তত ২০টি পরিবার নতুন করে বসতভিটা হারিয়েছে। সাড়ে চার শতাধিক চরে প্রায় দুই হাজার পরিবার প্রতি বছর ভাঙনের শিকার হন। শুধু এ বছরেই পাঁচ শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন, আবার কেউ খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। তবে সংস্থাটি জানিয়েছে, নয়টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে এবং বরাদ্দ পেলেই বাকিগুলোতেও কাজ করা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নদীর পানি ওঠানামা করায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। সদর উপজেলার বানিয়াপাড়ার আশরাফুল ইসলাম (৭০) বলেন, “আমার বাড়ি নদীর কিনারে। অর্ধেক বাড়ি সরিয়ে নিয়েছি, বাকি অংশও সরাতে হবে।”
নাগেশ্বরীর বল্লভের খাসের লেবু মিয়া (৬০) অভিযোগ করে বলেন, “দুধকুমার নদীর ভাঙনে শত শত বিঘা জমি বিলীন হয়েছে, অনেকে ঘরও হারিয়েছে। পাউবোতে বারবার গিয়েও কোনো লাভ হয়নি।”
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ফুলবাড়ীর চর গোরকমণ্ডপ এলাকার নুরনবী (৫৫) বলেন, “গত এক মাসে গ্রামের ১৫টি ঘরবাড়ি নদীগর্ভে গেছে। আমরা কোথায় যাব জানি না।”
স্থানীয় সালেকা বেগম (৬০) কণ্ঠ ভার করে বলেন, “আমার বাবা-মায়ের কবর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সরকার ব্যবস্থা না নিলে গ্রামে থাকা সম্ভব হবে না।”
ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, শত শত ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কুড়িগ্রাম চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বাবু মনে করেন, “উজান থেকে বালি-পলি এসে নদীতে ডুবোচর সৃষ্টি করছে। ড্রেজিং না করলে ভাঙন বন্ধ হবে না।”
সার্বিক বিষয়ে কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বর্ষার শেষ সময়ে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও হ্রাসের ফলে নতুন করে ১৫টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ভাঙনকবলিত নয়টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। বরাদ্দ পেলে বাকি পয়েন্টগুলোতেও কাজ করা হবে। এর আগে ভাঙনকবলিত ৪৫টি পয়েন্টে কাজ করা হয়েছে।’
Leave a Reply