কুড়িগ্রাম সংবাদ ডেস্ক:
কুড়িগ্রামের চিলমারী ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলাকে সংযুক্ত করে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ দ্বিতীয় তিস্তা গার্ডার সেতুটি আগামী জুলাইয়ের শেষে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। সেতুটি চালু হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের দূরত্ব ১৩৫ কিলোমিটারের বেশি কমে আসবে।
এতে করে দ্রুত সময়ে কৃষিপণ্য পরিবহনসহ ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন ও সাধারণ যাতায়াতে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেতুর কাজ প্রায় শেষ।
শুক্রবার (৪ জুলাই) দুপুরে নবনির্মিত সেতুর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী। তিনি জানান, জুলাইয়ের শেষেই এই সেতু উদ্বোধন করা হবে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ৮৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুর কাজ বাস্তবায়ন করছে চায়না স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। সেতুটিতে রয়েছে ২৯০টি পাইল, ৩১টি স্প্যান, দুই পাশে ৮৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং ৩.৫ কিলোমিটার এলাকায় নদী শাসনের ব্যবস্থা। জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় ১৩৩ একর।
যান চলাচল ও পণ্য পরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ঘাট থেকে চিলমারী পর্যন্ত এই সেতুর মাধ্যমে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। স্থানীয়দের মতে, এ সেতু চালু হলে কৃষিপণ্য রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দ্রুত পৌঁছে যাবে, ফলে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবে।
চিলমারীর পরিবহন শ্রমিকদের মতে, সেতুটির কারণে ঢাকায় যাতায়াতের সময় দুই ঘণ্টা কমে যাবে। আগে যেখানে সময় লাগতো ৮ ঘণ্টা, এখন তা ৬ ঘণ্টার মধ্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।
বাসিন্দাদের অভিমত, সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ঘাট এলাকার বাসিন্দা রফিক বলেন, “আগে নদী পার হতে ১ ঘণ্টার বেশি সময় লাগত, এখন কয়েক মিনিটেই চিলমারী পৌঁছা যাবে।”
অন্যদিকে কুড়িগ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, লালমনিরহাট হয়ে ঘুরপথে যাতায়াতের দিন শেষ। সরাসরি সড়ক সংযোগে সময় ও খরচ—উভয়ই কমবে।
সেতুটি দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল, ২০১২ সালে দীর্ঘ আন্দোলনের পর এই সেতুর অনুমোদন পাওয়া যায়। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি নির্মাণ কাজ উদ্বোধন হলেও নানা জটিলতায় তা বিলম্বিত হয়। অবশেষে ২০২১ সালে পূর্ণ গতিতে কাজ শুরু হয় এবং ২০২4 সালের জুনে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। যদিও ২৪ জুন উদ্বোধনের কথা ছিল, কিছু কাজ বাকি থাকায় তা পিছিয়ে জুলাইয়ের শেষ দিকে নেওয়া হয়েছে।
সম্ভাবনার দিগন্ত: তিস্তা গার্ডার সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট জেলার মানুষের জন্য যোগাযোগ, অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং পর্যটনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
Leave a Reply