প্রফেসর মীর্জা মো: নাসির উদ্দিন
বাংলাদেশের সাথে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চীন সরকার বাংলাদেশকে যে চায়না- বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল উপহার হিসেবে দিচ্ছে তা রংপুর বিভাগের তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হবে।
বলে জানা গেছে, চিকিৎসা সেবার অনন্য এ সুযোগ পাবার আশায় এ ধরণের সংবাদে এ অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত আনন্দিত ও প্রফুল্লিত। এ হাসাপাতালটি তিস্তা তীরবর্তী অঞ্চলে স্থাপন করার যুক্তিসঙ্গত কারণও রয়েছে।
আর সে কারণটি হলো চীনের মাধ্যমে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সাথে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার একটি নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে যা উভয় দেশের জনগণ ও সরকারের বাস্তবসম্মত কল্যাণ প্রচেষ্টার প্রতিফলন। নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার সীমানা থেকে ১ কিঃমিঃ দূরে লালমনিরহাট
জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী নামক স্থানে তিস্তা নদীর উপর তিস্তা ব্যারেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৫ সালে সৌদি উন্নয়ন তহবিল ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং আবুধাবি উন্নয়ন তহবিলের প্রায় ২,৫০০কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা ব্যারেজসহ সেচ যোগ্য কৃষিজমি ও জলকাঠামো নির্মাণ
শুরু হয়।
এ ব্যারেজ নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল নীলফামারী জেলার ৫টি, রংপুর জেলার ৪টি এবং দিনাজপুর জেলার ৩ টি উপজেলায় সেচ সুবিধা প্রদান করা। কিন্তু ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তিস্তা নদীর বাংলাদেশ সীমান্তের ৬০ কিলোমিটার উজানে ভারত
সরকার গজলডোবা বাঁধ নির্মাণ করে একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নেয় ফলে তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণের মূল লক্ষ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এ জন্য বাংলাদেশ সরকার ভারত থেকে আসা পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে তিস্তা ব্যারেজ থেকে কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার (সম্ভাব্য) ভাটিতে বিশেষ করে
লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম-গাইবান্ধা অংশে ব্যারেজ নির্মাণ করে সারা বছর বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তিস্তা অববাহিকার কৃষি, পরিবেশ এবং মানুষের জীবন বাঁচাতে উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত এ প্রকল্পে অংশগ্রহণের আগ্রহ দেখালেও নানারুপ টালবাহনা শুরু করে এক প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অবশেষে চীন এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগ্রহ ও সম্মতি প্রকাশ করেছে। চীন তিস্তা মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় এ ধরণের বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে এবং বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে স্বাগত জানিয়েছে।
২০২৩ সালের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে সেবছর ৪.৪৯ লক্ষ মানুষ ভারতে চিকিৎসার জন্য গিয়েছে এবং এ সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভারত যেমন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নানারুপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে তেমনি কোনো কারণ ছাড়াই চিকিৎসা সেবা বন্ধ করার হুমকি প্রদর্শন করে কিংবা মাঝেমধ্যেই ভিসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। কিন্তু ভারত যতবারই আমাদেরকে সমস্যায় ফেলতে চেয়েছে ততবারই বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার নিজ উদ্যোগে সেই সমস্যাকে সফলতায় পরিণত করেছে। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় ভারত গরু রপ্তানী বন্ধ করে দেয়ায় এ দেশের গরুর খামারগুলো স্বাবলম্বলী হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে পেঁয়াজ রপ্তানীতেও একই রকমের আশংকা থাকায় বাংলাদেশ সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। ভারত বাংলাদেশের রফতানি পণ্য তৃতীয় দেশে পাঠানোর জন্য দীর্ঘদিনের
ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এ অসুবিধা দুর করতে বন্ধুপ্রতীম দেশ চীনের তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন (তিস্তার তীরবর্তী) এলাকায় টারশিয়ারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা আমাদের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। বাংলাদেশ ও চীন সরকার পিছিয়ে পড়া রংপুর বিভাগে যেহেতু চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। সেহেতু রংপুর বিভাগের কোন জায়গায় এটি প্রতিষ্ঠিত হলে রংপুরের বেশিরভাগ মানুষের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে তার একটি গাণিতিক বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। রংপুর বিভাগের মোট জনসংখ্যা পনের কোটি আটাত্তর লক্ষ সাত হাজার সাত শত আটান্ন জন। এ বিভাগের ০৮ টি জেলার রংপুর, নীলফামারি এবং দিনাজপুরে মেডিকেল কলেজ রয়েছে। কাজেই এ ০৩ টি জেলায় নতুন করে কোন টারশিয়ারি হাসপাতল স্থাপন অত্যাবশ্যকীয় নয়। মেডিকেল কলেজ না থাকা উত্তর- পশ্চিমের জেলা ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের মোট জনসংখ্যা তেইশ লক্ষ সাতাত্তর হাজার ছয় শত ছিয়াশি জন এবং দক্ষিণ-পুর্বের অবস্থিত লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা জেলার মোট জনসংখ্যা সাতান্ন লক্ষ চার হাজার ছয় শত বাহাত্তর জন। এ দু’টি অঞ্চলের জনসংখ্যা বিচারে দেখা যায় দক্ষিণ- পূর্বের জেলা তিনটির লোক সংখ্যা তেত্রিশ লক্ষ ছাব্বিশ হাজার নয় শত একচল্লিশ জনেরও
বেশি । যা উত্তর—পশ্চিমের জেলা দু’টির মোট জন সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।(সূত্র: বাংলাপিডিয়া—রংপুর বিভাগ)।এ সূত্র ধরে আমরা বলতেই পারি চায়না—বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতালটি রংপুর বিভাগের উপসচিব বলেন লালমনিরহাট কুড়িগ্রাম,গাইবান্ধা জেলার যে কোন একটিতে হওয়াই বাঞ্চনীয়। ভৌগোলিক অবস্থান ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ও তথ্য বলছে এ তিন জেলার মধ্যবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম এবং এ জেলার সাথে তিস্তা নদীর অংশ রয়েছে ৪০ কিলোমিটার (সূত্র: পা.উ.বো.কুড়িগ্রাম)।
কুড়িগ্রামের আরো একটি বিশেষত্ব হলো তিস্তা নদী এ জেলারই চিলমারিতে ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে মিশেছে। বাংলাদেশের সকল নদী যেমন বঙ্গেপসাগরে মিলিত হওয়ায় চট্রগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর গড়ে ওঠেছে তেমনি তিস্তা মহাপরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ কর্মযজ্ঞ কুড়িগ্রামে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলার মধ্যবর্তীর জেলা কুড়িগ্রাম হওয়ায় এ দু’টি জেলার অধিবাসীরা সহজেই এ হাসপাতালে আসতে পারবে। বিভাগের অন্য জেলার অধিবাসীরাও একই সুবিধা পাবে।অত্রএব চায়না- বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতালটি তিস্তা তীরবর্তী কুড়িগ্রামে হওয়াই যুক্তিযুক্ত এবং সেটি হতে পারে চিলমারি বা হরিপুর পয়েন্টে।
তিস্তার উজানে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৩২৮ মিমি এবং মধ্যাঞ্চলে ২৬১৯ মিমি। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের ৭৭-৮৪% বৃষ্টি সংগঠিত হয় জুন-সেপ্টেম্বর মাসে।তিস্তা মহাপরিকল্পনায় ধরেই নেয়া হয়েছে যে ভারত থেকে আসা পানির ওপর নির্ভরশীলতা হিসেব করা যাবে না। এটি বাস্তবায়নে একেবারেই ভাটিতে
বাঁধ নির্মাণ করতে হলে কুড়িগ্রামই হবে একমাত্র উপযুক্ত স্থান। নদীর যত ভাটিতে বাঁধ নির্মান করা হবে তিস্তার উজানে তত বেশি অঞ্চল উপকৃত হবে। তা না হলে ভারতের গজলডোবা বাঁধের দশা হবে। গজলডোবা বাঁধের একপাশে ভারতীয় অংশে পানি টুইটুম্বর থাকলেও বাঁধের অপর পাশ থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত পানির অভাবে শুকনো নদীতে বালি আর বালি, নেই কোনো জীবন প্রবাহ। ফলশ্রম্নতিতে খোদ ভারতের নদীর দুই ধারে জলপাইগুড়ি-ময়নাগুড়ি-লাটাগুড়ি-মেখলিগঞ্জ হলদিবাড়ির বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ পানির অভাবে ক্ষতিগ্রস্থ
হচ্ছে।তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এ উদাহরণকে মাথায় রেখে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের এগোতে হবে। তা না হলে ডালিয়া দোয়ানী ব্যারেজের ন্যায় কোটি কোটি বিলিয়ন ডলার অপচয় হবে। শোনা যাচ্ছে যে, কোন একটি জেলায় বিমানবন্দর থাকায় সে জেলায় মেডিকেল কলেজ থাকার পরও
সেই জেলাটিকে এ টারশিয়ারি হাসপাতাল নির্মাণে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১% লোক বিমানে, ৭০%—৮০% সড়ক পথে, ১০%—১৫% নৌ
পথে এবং ৩.৫%—৪% লোক বিমান পথে যাতায়ত করে থাকে। একটি আন্তর্জাতিক মানের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে যদি ১% সমাজের উচ্চ সুবিধাভোগী মানুষের কথা বিবেচনা করা হয় তাহলে সেটি দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যাণকর হবে না বলে অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন।জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০ সালের
ঘোষণায় বলা হয়েছে। অর্থাৎ কাউকে পেছনে ফেলে
কোনো উন্নয়ন নয়। তাই দেশের সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা না করে ১% মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করলে সেটা হবে জাতিসংঘের উক্ত ঘোষণার পরিপন্থি। দেশের মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার,এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সমাজের কিছুসংখ্যক বিত্তবান নাগরিকের জীবনে নাগরিক সুবিধা দিলেও অধিকাংশ মানুষের কাজে আসে নাই বিধায় এটিকে সুষম উন্নয়ন হিসেবে বিবেচনা করা যায় না।
দ্রুত যোগাযোগ রক্ষায় বিমানের প্রয়োজনীয়তা আছে তবে একটি দেশকে এগিয়ে নিতে হলে প্রযুক্তিগত ও অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা সম্প্রসারণ অবশ্যই প্রয়োজন। তবে সেটিতে যত বেশি সংখ্যক সাধারণ মানুষ উপকৃত হয় দেশের জন্য তা ততই মঙ্গলজনক। লালমনিরহাট বিমানবন্দরটি চালু করা হলে আরো বেশি মানুষ উপকৃত হবে তাতে কোনো সন্দহ নেই। কারণ সৈয়দপুর বিমানবন্দরটি লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ খুব একটা সহজে ব্যবহার করতে পারছেনা। একটি সুবিধাকে কেন্দ্র করে যদি সেখানে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সম্প্রসারিত না হয় তাহলে সেটি সুষম উন্নয়ন নয়। এ ধরণের উন্নয়ন একসময় জনগণের জন্য যন্ত্রণা হয়ে দাড়ায়। উদাহরণ স্বরুপ বলা
যেতে পারে রাজধানী ঢাকায় সকল দপ্তর প্রতিষ্ঠা করায় জনগণ আর যানবাহনের চাপে ঢাকা অনেকটা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অথচ এ দপ্তরগুলো কাজের সুবিধার্থে বিভিন্ন জেলায় সম্প্রসারিত করা গেলে আরো সুবিধা হতো।
এ বিষয়গুলো মাথায় রেখে বিশ্বের কয়েকটি দেশ যেমন— শ্রীলংকার বিধানিক রাজধানী শ্রী জয়বর্ধনপুর কোট্টে এবং বিচারিক ও নির্বাহী রাজধানী কলম্বো, মালয়েশিয়ার রাজধানী শহর কুয়ালালামপুর এবং পুত্রজায়া হল ফেডারেল সরকারের রাজধানী, দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানীর সংখ্যা ০৩ টি। প্রিটোরিয়া বা তশোয়ানে নির্বাহী রাজধানী, কেপ টাউন আইন বিভাগীয় রাজধানী এবং ব্লুমফন্টেইন বা মানগাউং বিচার বিভাগীয় রাজধানী। এ রকম অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে। ঢাকার পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদেরও এরকম ভাবনা ভাবার সময়
এসেছে। উন্নয়ন ও দাপ্তরিক কাজ সুষ্ঠূভাবে সম্পন্নের জন্য আমেরিকার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তর সহ বিভিন্ন সংস্থার সদর দপ্তর রয়েছে। আবার রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে রয়েছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মতো বড় বড়
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো সদর দপ্তর। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা হওয়া সত্ত্বেও ঐতিহ্যবাহী বান্দুং সম্মেলন জাভা দ্বীপের বান্দুং এ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশেও এরকম বেশ কয়েকটি উদাহরণ রয়েছে যেমন- রাজধানীতে
প্রতিষ্ঠা না করে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি চট্রগ্রামের ভাটিয়ারিতে, পুলিশ একাডেমি রাজশাহীর সারদায়, নদী গবেষণা ইনস্টটিটিউট ফরিদপুরে স্থাপন করা হয়েছে। কাজেই একটি বিভাগের চিকিৎসা সেবা বিমান বন্দর বিবেচনায় কোনো একটি এলাকায় গড়ে উঠবে তা উপরোক্ত উদাহরণের সাথে সংগতিপূর্ন নয়। এ বিভাগের মানুষের প্রত্যাশা এ ধরণের একটি টারশিয়ারি
হাসপাতাল বিভাগের স্বার্থ বিবেচনায়, দেশের মানুষের মঙ্গলার্থে এবং প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোরও সুবিধার দিকগুলো বিবেচনায় নেয়া আবশ্যক বলে আমরা মনে করি।
চীনের এরকম বাস্তবধমীর্ কাজের অভিজ্ঞতার ভান্ডার বেশ সমৃদ্ধ। তারা হোয়াং হো নদকে শাসন করে জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটি গড়ে তুলেছে। সেই মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে চীনের হোয়াং হো নদী ও সুকিয়ান সিটির আদলে তিস্তার দুই পাড়কে আধুনিকভাবে গড়ে তোলা হবে। চীন সুকিয়ান
সিটিকে উন্নত করার ক্ষেত্রে আগের কোনো প্রাপ্ত সুবিধা কাজে লাগায়নি বরং সেখানকার শত প্রতিবন্ধকতা দূর করে নতুন নতুন সুযোগ- সুবিধা সৃষ্টি করেছে। আমরা আশা করি বাংলাদেশ ও চীন সরকার সুবিধা বঞ্চিত এলাকাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিবে তাতে কোন সন্দেহ নেই এবং ভৌগোলিক বিবেচনায় কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা উপকূলবর্তী যে কোন অঞ্চলই হবে এ
টারশিয়ারি হাসপাতালটি স্থাপনের একমাত্র উপযুক্ত স্থান। এছাড়া যে কোনো হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি আবাসিক এলাকাগুলো বিমানবন্দর, শিল্প কারখানা বা শব্দ দূষণ হয় এমন সব প্রতিষ্ঠান থেক যতদুরে প্রতিষ্ঠা করা যায় ততই মঙ্গল। এ ধরণের হাসপাতাল যে শুধু রংপুরের রোগীদের জন্য নির্মিত হচ্ছে তা নয়। সারাদেশ থেকে রোগী এখানে আসবে চিকিৎসার জন্য এবং বিশেষ করে বিদেশগামী রোগীই এখানে বেশি আসবে। সে বিবেচনায় দেখা যায় ঢাকা থেকে পঞ্চগড় ৪৪৪ কিলোমিটার, ঠাকুরগাঁও ৪০৮ কিলোমিটার, নীলফামারি
৪০০ কিলোমিটার এবং কুড়িগ্রাম ৩৫০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। দূরত্ব বিবেচনায়ও কুড়িগ্রাম নির্বাচিত হবার উপযুক্ততা প্রমাণ করে। ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা সেবা গ্রহীতারা সড়ক পথে ঢাকা-বগুড়া হয়ে গাইবান্ধার সুন্দবগজ্ঞ—কুড়িগ্রামের চিলমারির মাঝ দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর ওপর নবনির্মিত হরিপুর সেতু দিয়ে এ অঞ্চলে আসতে পারবে। আবার
ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিবাসীরা ময়মনসিংহ—জামালপুর সড়ক পথ দিয়ে রৌমারী-চিলমারী বন্দর হয়ে কুঞ্জতলা ও ফেরি সুফিয়া কামাল ব্যবহার করে আসতে পারবে। প্রস্তাবিত ব্রহ্মপুত্র সেতু নির্মিত হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরো উন্নয়ন ঘটবে। কুড়িগ্রাম- লালমনিরহাট সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায়
আন্তর্জাতিক রোগী পাবার সম্ভাবনাও অনেক বেশি। লালমনিরহাটের বুড়িমারি এবং কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থল বন্দর ও রৌমারীর তুরা বন্দর দিয়েও প্রতিবেশি নেপাল,ভূটান ও অন্য একটি প্রতিবেশি রাষ্ট্রের কয়েকটি রাজ্য থেকে রোগী
সহজেই স্থল ও নৌ পথে আসতে পারবে। নিকট ভবিষ্যতে লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালু হলে এবং লালমনিরহাট দিয়ে প্রতিবেশি দেশের সাথে ব্রিটিশ আমলের ন্যায় রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলে শুধু চিকিৎসা সেবা প্রদান নয়, মেডিকেল টুরিজ্যমেও এক বিপ্লব ঘটবে।
লেখক: অধ্যক্ষ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ,কুড়িগ্রাম।
Leave a Reply