মাইদুল ইসলাম মামুন:
ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করেছে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা। আন্তর্জাতিক সংকটের এই সময়ে, মজলুম ফিলিস্তিনিদের জন্য সংহতি ও সহানুভূতির এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে নাগেশ্বরীর “বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ” এবং তারই ধারাবাহিকতায় গঠিত মানবিক সাহায্যের কার্যক্রম।
গত ৭ই এপ্রিল নাগেশ্বরীতে আয়োজিত প্রতিবাদ মিছিলের পর, “Nageshwari Youth Society” ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ কার্যক্রম ছিল কেবল অর্থসাহায্য প্রদান নয়, বরং ভালোবাসা, সহানুভূতি ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি দায়বদ্ধতার গভীর প্রকাশ।
এই মানবিক কার্যক্রমে স্থানীয় তরুণদের প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা ও নিরলস পরিশ্রমে সংগ্রহ করা হয় মোট ৩৪,৯৪৭ টাকা। এ অর্থ প্রতিটি নাগরিকের হৃদয় থেকে উৎসারিত বিশুদ্ধ অনুদান, যা গাজার মজলুম মানুষদের জন্য সামান্য হলেও কিছুটা স্বস্তির পরশ বয়ে এনেছে।
উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন মিজানুর রহমান মিজান, যিনি রশিদ মন্ডল যুব ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবামূলক কাজে জড়িত। তাঁর দূরদৃষ্টি ও নেতৃত্বে এই উদ্যোগ কার্যকরভাবে এগিয়ে চলে। সার্বিক পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে ছিলেন শরিফুল ইসলাম, পরিচালক, Nageshwari Youth Society। তাঁর সংগঠকসুলভ দক্ষতা ও দিকনির্দেশনায় পুরো প্রকল্পটি সুচারুভাবে বাস্তবায়ন হয়।
এ উদ্যোগের এক গুরুত্বপূর্ণ মুখ ছিলেন মোহাম্মদ কাউসার মাসুদ—এক তরুণ সমাজকর্মী, যিনি নিঃশব্দে হলেও নিবেদিতভাবে কাজ করেছেন। তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি, নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে পুরো কার্যক্রমে গতি ও সফলতা এসেছে।
এই অভিযাত্রায় Nageshwari Youth Society-এর সদস্য ছাড়াও স্থানীয় সামাজিক সংগঠন, সাধারণ জনগণ, শিক্ষার্থী ও তরুণরা একত্রে এগিয়ে আসে। তাদের সম্মিলিত শ্রম, ত্যাগ ও মানবিক অনুভূতি এক ক্ষুদ্র অর্থসাহায্যকে বৃহৎ মানবিকতায় রূপ দেয়। সংগৃহীত অর্থ “People’s Improvement Society of Bangladesh (PISOB)” এর মাধ্যমে গাজায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
PISOB গাজায় সরাসরি এই সহায়তা খাদ্য, পানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যে রূপান্তর করে অত্যন্ত স্বচ্ছ ও সুসংগঠিত প্রক্রিয়ায় বিতরণ করে। ১৪ই এপ্রিল বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় নিউজ পোর্টালে এই অর্থ বিতরণের খবর প্রকাশিত হয়, যা এই উদ্যোগের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করে।
Nageshwari Youth Society-এর পক্ষ থেকে এই মহৎ প্রয়াসে সম্পৃক্ত সকল দাতা, শুভানুধ্যায়ী ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রতি জানানো হয়েছে অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা। তাঁদের একনিষ্ঠতা ও ভালোবাসাই এই উদ্যোগকে সফল করে তুলেছে।
এই মানবিক সহায়তা কর্মসূচি প্রমাণ করেছে—ভৌগোলিক দূরত্ব যতই হোক না কেন, আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা থাকলে উম্মাহর বিপদে পাশে দাঁড়ানো সম্ভব। নাগেশ্বরীর এই ক্ষুদ্র প্রয়াস এখন কুড়িগ্রাম জেলাজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। অনেকেই বলছেন, “আমরা যেখানে আছি, সেখান থেকেই কিছু করতে পারি—শুধু দরকার একটা ভালো ইচ্ছে।”
এভাবেই গাজার পবিত্র ভূমিতে পৌঁছে গেছে এক খণ্ড ‘নাগেশ্বরী’। মানবিক সহানুভূতির এই বার্তাই আজ উজ্জ্বল করে তুলেছে একটি ছোট্ট শহরের নাম—মানবতার মানচিত্রে।
Leave a Reply