কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার নদীকে দখলমুক্ত করতে আবারও উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন। উচ্ছেদ অভিযানে আনসার, পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার(২০ মার্চ) বিকেলে উপজেলার কৈলাশকুঠি গ্রাম ও বাঁশেরদহ গ্রামে চাকিরপশার নদীতে আড়াআড়ি সড়ক ভেকু মেশিন দিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন রাজারহাট উপজেলা প্রশাসন। উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন রাজারহাট উপজেলার সহকারি কমিশনার(ভূমি) আশাদুল হক।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজারহাটের ইটাকুড়ির দোলা থেকে উৎপন্ন হয়ে ২২ কি.মি প্রবাহিত হবার পর উলিপুরের থেতরাই ইউনিয়নে তিস্তার সাথে মিশেছে প্রবাহটি। আশির দশকের শুরু থেকে নদীর ভিতরে পাড় বেঁধে পুকুর বানিয়ে শুরু হয় মাছ চাষ। ফলে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয়ে উজানে ১৫ থেকে ২০ হাজার একর জমিতে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। জলাব্ধতা নিরসন এবং নদীতে মানুষের অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলো চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটি। এ বিষয়টি বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির(বেলা) দৃষ্টিগোচর হলে তারা জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট করলে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে হাইকোর্ট নদীতে থাকা সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়। এরই সূত্র ধরে শুরু হয় এই উচ্ছেদ কার্যক্রম।
সরকারি জলমহল ব্যবস্থাপনা নীতি ২০০৯ এর ৫(৯) ধারা অনুযায়ী চাকিরপশার বিল(বদ্ধ) জলমহলকে উম্মুক্ত রাখার প্রস্তাব গৃহীত হলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে চাকিরপশার বিল(বদ্ধ) জলমহলকে উম্মুক্ত জলমহল হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এতে ১৪১ দশমিক ২৯ একর জমিকে উম্মুক্ত জলমহল হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এর প্রেক্ষিত চাকিরপশার নদীর প্রবাহ ধরে রাখতে নদীর মধ্যে আড়াআড়ি সড়ক ভেঙে দেয় প্রশাসন। এই আড়াআড়ি সড়কে অবৈধভাবে কিছু পরিবার বসতবাড়ী করে ছিলেন।
চাকিরপশার কৈলাশকুঠি গ্রামের বাসিন্দা আনিছুর রহমান জানান, আমাদের এই চাকিরপশার নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা মাছ চাষ করতেন। সেই নদীর বাঁধে আমি বসতবাড়ি করে ছিলাম। প্রশাসন থেকে আমার বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে বলেছিল, আমি বাড়ি সরিয়ে নিয়েছি। কিন্তু উজানে প্রভাবশালী নেতাকর্মীদের পুকুরের পাড় এখনো আছে। সেগুলো প্রশাসন উচ্ছেদ না করে আমাদের বাড়ি ভেঙে দিলো।
চাকিরপশার নদী সুরক্ষা কমিটি আহবায়ক খন্দকার আরিফ জানান, উজানে পানি প্রবাহের প্রতিবন্ধকতা বহাল রেখে ভাটিতে অগুরুত্বপূর্ণ স্থানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা মোটা দাগে জলাবদ্ধতার শিকার কৃষক এবং নদীবর্তী মানুষের সঙ্গে প্রহসনের শামিল।
রাজারহাট উপজেলার সহকারি কমিশনার(ভূমি) আশাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার কৈলাশকুঠি গ্রামের কাছের একটি আড়াআড়ি বাঁধ ভেকু দিয়ে ভেঙে দিয়ে অবৈধ দখল উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। চাকিরপশার বিলের বিভিন্ন জায়গা ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জমি অবৈধ দখদারদের দখলে থাকায় প্রশাসনের পক্ষে ১৩২টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার নিষ্পত্তি হলে চাকিরপশার নদী সম্পূর্ণ দখলমুক্ত করা সম্ভব হবে।
Leave a Reply