মোঃ ফরিদুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মোঃ তাজুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ক্যাম্পাসে কোনো শিক্ষার্থী রাজনৈতিক পরিচয় দিতে পারবে না এবং কোনো রাজনৈতিক সংগঠন বা অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না।
সম্প্রতি কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রদল কর্মীর বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা ও হত্যার হুমকির অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত করার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা দাবি করেন, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে, এবং নিরপেক্ষ শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
বিক্ষোভকারীরা ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের পদত্যাগও দাবি করেন, যদি তারা শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় ব্যর্থ হন। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যেখানে নারী শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত দাবির প্রতি সমর্থন জানানো হয়।
এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রশাসন কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়। ১২ মার্চ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,
শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক চর্চা ও সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলো। কোনো শিক্ষার্থী তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় প্রদর্শন করতে পারবে না।
এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতেই আমরা ক্যাম্পাস রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছি। এ সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে এবং কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিজ্ঞপ্তিটি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে, এটি ইনস্টিটিউটের নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করা হয়েছে।
ক্যাম্পাস রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করবে এবং শিক্ষার্থীরা ভয়ভীতির বাইরে থেকে পড়াশোনা করতে পারবে।
তবে, রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কিছু শিক্ষার্থী এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের দাবি, এটি ছাত্রদের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করতে পারে।
কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ক্যাম্পাস রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত একদিকে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার প্রয়াস হিসেবে দেখা হচ্ছে, অন্যদিকে এটি শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক অধিকার সীমিত করতে পারে বলে মত দিয়েছেন অনেকে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করাই প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্য বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর হবে এবং এটি ভবিষ্যতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে।
Leave a Reply