1. editor1@kurigramsongbad.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
  2. sifat@kurigramsongbad.com : sifat :
  3. siteaccess@pixelsuggest.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
সাম্প্রতিক :
ফুলবাড়িতে ভিজিএফের স্লিপ নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৬ জবিস্থ মাগুরা জেলা ছাত্রকল্যাণের জাঁকজমকপূর্ণ ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত উলিপুরে প্রত্যন্ত গ্রামে কিশোরীদের সুরক্ষায় কাজ করছেন শারমিন ও মরিয়ম ৭ মাস অনুপস্থিত চিলমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহায়ক নাগেশ্বরীতে স্থানীয় ব্যবসায়িকদের সাথে সংবেদনশীলতা সভা অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জে শ্রমিক হত্যা মামলায় উলিপুরের ৩ জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ইবির বৃহত্তর ফরিদপুর ছাত্রকল্যাণ সমিতির আংশিক কমিটি গঠন: ‘সভাপতি সাইফুল‌‌, সম্পাদক আসাদ’ ১০ এপ্রিলের মধ্যে জকসু তফসিল ঘোষণার দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের রাজারহাটে ছিনাই ইউনিয়ন পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান গ্রেফতার ভূরুঙ্গামারীতে অনুমতি ছাড়াই কাটা হলো রাস্তার গাছ, ডাল পড়ে ট্রান্সফরমার বিকল

খরস্রোতা তিস্তা এখন মরা খাল ভাঙ্গনে দুই যুগে লক্ষ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫
  • ১৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: 

উলিপুরে খরস্রোতা তিস্তা নদী কয়েক মাস আগেও পারাপারে ভরসা ছিল নৌকা। এখন শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানির প্রবাহ নেই। জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট বড় চর। নৌকা চলছে না। নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।

ফলে মানুষে বাধ্য হয়ে প্রয়োজনীয় কাজে পায়ে হেঁটে নদী পার হচ্ছেন। আর বেকার হয়ে পড়েছেন শত শত মাঝি ও জেলেরা। কিন্ত বর্ষার এলেই তিস্তা তার পুর্বরূপ ধারন করে ভেঙ্গে নিয়ে যায় নদী পাড়ের হাজার হাজার বাড়িঘর ও আবাদী জমি ও গ্রামের পর গ্রাম। সব হারিয়ে নিঃস্ব ভুমিহীন হয় হাজার হাজার মানুষ। নদীর এমন ভাঙ্গা গড়ায় স্থানন্তরিত হয়েছে তিস্তা পাড়ের সহস্রাধিক পরিবার। হারিয়ে গেছে অনেক গ্রাম। বদলে গেছে এলাকার মানচিত্র। তবুও স্থায়ী ভাবে নদী শাসনের উ˜েদ্যাগ নেয়নি সরকার। ভাঙ্গন দেখা দিলে আপদকালীন সময় কিছু ব্যবস্থা নেয়া হলেও তা কোন কাজে আসে না।

ফলে গত দুই যুগে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের সিংগভাগ এলাকা নদী গিলেছে। গৃহহারা হয়েছে ৮ হাজার পরিবার। অস্তিত্ব বিপন্ন হয়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষের। রাস্তা ঘাট, ব্রীজ কালভাট, সরকারি বেসরকারি স্থাপনাসহ সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে লক্ষ কোটি টাকার। দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় জেগেছে। এখন তাদের একটাই দাবী তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্থবায়ন চাই। সেই লক্ষে গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তা নদী বেষ্টিত লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির আয়োজনে নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি পয়েন্টে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। থেতরাই ইউনিয়নের পাকার মাথা পয়েন্টে (তিস্তা নদীর উপকণ্ঠে) ২দিন ব্যাপী লাখো মানুষের অবস্থান সমাবেশ অনুষ্টিত হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নের তথ্য মতে, গত ২৪ বছরে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ১৯টি ওয়ার্ড, ২৮টি গ্রাম, ২৩ কিলোমিটার এলাকা, ৬৭ হাজার একর জমি, সাড়ে ৮ হাজার পরিবার, ২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৬টি হাট বাজার ও ২২ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। এরমধ্যে বজরা ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ড, ৮টি গ্রাম, ৩ হাজার পরিবার, ৫০ হাজার একর জমি, ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১টি ক্লিনিক, ২টি স্লুইজ গেট, ১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ। দলদলিয়া ইউনিয়নের ৮টি ওয়ার্ড, ১০টি গ্রাম, ১হাজার ৩’শ পরিবার, ১০ হাজার একর জমি, ৭ কিলোমিটার এলাকা ও ৮ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ। থেতরাই ইউনিয়নের ওয়ার্ড ৭টি, গ্রাম ১০টি, পরিবার ৩ হাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৪টি, কৃষি জমি ১ হাজার একর, স্লুইজ গেট একটি, ইউনিয়ন পরিষদ, পোষ্ট অফিস, ২টি হাট বাজার ও ৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ। গুনাই গাছ ইউনিয়নের ২টি ওয়ার্ড, ৫টি গ্রাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৪টি, হাট বাজার একটি ও ২কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ।

সরোজমিনে দেখা গেছে,খরস্রোতা সেই তিস্তায় পানি নেই। নদীতে জেগে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য চর। নৌকা চলে না মানুষ হেটে নদী পাড়া পাড় হচ্ছে। কিন্তু তিস্তার উজানে ভারতের গজলডোবা বাঁধ নির্মাণ করায় বাংলাদেশ অংশে প্রায়ই পানি সংকট দেখা দেয়। বর্তমানে খরস্রোতা তিস্তা পানি শুকিয়ে এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে নদীতে পানি না থাকায় রংপুরের কাউনিয়া থেকে কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর হয়ে চিলমারী বন্দর পর্যন্ত নৌ যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে য়ায়। ফলে এ অঞ্চলের নৌকার মাঝি ও জেলেরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এছাড়া নদীর খনন কাজ দ্রুত না করায় দিন দিন নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পানি প্রবাহের গতি প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে। নদীর নাব্যতা হারানোর কারণে বর্ষা মৌসুমে দুই কূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে শত শত হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কৃষিকাজ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়। অথচ প্রতিবছর বর্ষায় ভারত হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে পানি ছেড়ে দেওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয় বিপুল সংখ্যক মানুষকে।
নদীতে পানি না থাকায় বোরো চাষও হুমকির মধ্যে পড়েছে। সরকার দফায় দফায় তিস্তার পানি চুক্তি ও তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা বললেও তা বাস্তবতার মুখ দেখছে না।

থেতরাই ইউনিয়নের খারিজা নাটশালা চরের বাসিন্দা তৈয়মুর শেখ (৮০) বলেন, মোর এই বয়সে ১১ বার বাড়ি নদী ভাঙ্গার মুখোত (মুখে) পড়ে। জীবনের ব্যাকটি (সময়) গ্যালো নদীর লগে (সাথে) যুদ্ধ করতে। অহনও (এখন) চলছে যুদ্ধ, নদী বাঁন্দি দিলে বাকী জীবনটা কষ্ট থাকি বাঁচনো হয়।
হোকডাঙা গ্ৰামের জেলে নিবারণ চন্দ্র, বাবলু চন্দ্র সহ কয়েকজন জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে তিস্তা নদীসহ বিভিন্ন জলাশয়ে হরেক রকমের মাছ ধরে তা বিক্রি করে জীবন চালিয়ে আসছি। এখন নদীতে পানিও নাই মাছও নাই। বর্তমানে আর এ পেশায় থাকা যাচ্ছে না, তিস্তা নদী আর নদী নাই, চর পরে মরে গেছে। জীবন বাঁচাতে আমাদের এ পেশা অনেকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।

চর গোড়াইপিয়ায় গ্রামের নৌকার মাঝি , রুহুল আমিন সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন আমি ৪০ বছর ধরে নৌকা চালিয়ে আসছি। এখন প্রায় ৫ মাস থেকে নদীর কমে যাওয়ায় নৌকা চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। নদীতে পানি কম থাকায় নৌকা দিয়ে কমসংখ্যক মানুষ পারাপার হয়। বেশিরভাগ মানুষ হেঁটে নদী পারাপার হয়। এ কারনে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারিভাবে তাদের কোনো সাহায্য সহযোগিতা করা হয় না। অনেকে বাধ্য হয়ে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। যারা দিন মজুরির কাজ করতে পারছে না তারা বেশি অসহায় হয়ে পড়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, তার ইউনিয়নের তিন ভাগ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এখন নদীতে পানি নাই। বর্ষা আসলেই নদীর ভয়াবহরুপ হয়। দেখা দেয় বন্যা ও নদীর ভাঙ্গন। শুরু হয় মানুষের জীবন ও ঘরবাড়ী রক্ষার লড়াই। গৃহহারা মানুষের আত্মনাদ ও আহাজারীতে দিশেহারা নদী তীরবর্ত্তী মানুষ। গৃহহারা ভুমিহীন ৩ হাজার পরিবার অভাব অনটনে দিশেহারা। বন্যা ও নদী ভাঙ্গনে মানুষের দুঃখ দুর দশা বর্ননাতীত। তবে তিস্তার পানি চুক্তি ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনে কৃষি জমি বিলিন হয়ে যায়। আবার সেই জমিতে পলি পড়ে আবাদী হয়। চরের জমির পরিমান প্রায় ৬ শত হোক্টর।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খন্দকার মো. ফিজানুর রহমান বলেন, তিস্তার ভাঙ্গনে এ পর্যন্ত ৮/৯ হাজার পরিবার গৃহহারা হয়েছে। এ সমস্ত পরিবারের জন্য আপদকালীন সহায়তা প্রদান করা হয়।
নদীবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, তিস্তার ভয়াবহ ভাঙ্গনে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। নদীটি উত্তরাঞ্চলের বলে বিগত কোন সরকার পদক্ষেপ নেয়নি। তিস্তা পাড়ের মানুষের আহাজারী সরকার শুনতে পায় না। তাই এবার আওয়াজ উঠেছে।
কুড়িগ্রাম পানি উনয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.রাকিবুল হাসান বলেন, বজরা, গুনাইগাছ, থেতরাই ও দলদলিয়া ইউনিয়নে নদী ভাঙ্গনে লাখ লাখ কোটি টাকর সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। ওই ৪ ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত ৮টি এলাকায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীর সংরক্ষন কাজের টেন্ডার হয়েছে। খুব শিঘ্রই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর


Kurigram Songbad © 2025. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest
error: Content is protected !!