জার্মানির ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার গটিঙ্গেন-এর অধ্যাপক ইনগো কুটশকা বলেন, ‘এটি প্রথমবারের মতো ল্যাবরেটরিতে তৈরি একটি জীবিত টিস্যু প্রতিস্থাপন, যা হৃৎপিণ্ডের পেশীকে স্থিতিশীল ও শক্তিশালী করতে সক্ষম।’
এই প্যাচ তৈরি করা হয় রক্ত থেকে সংগ্রহ করা কোষের মাধ্যমে, যা পরে স্টেম সেলে রূপান্তরিত করা হয়। স্টেম সেল থেকে হৃদ্যন্ত্রের পেশি ও সংযোগকারী টিস্যু কোষ তৈরি করা হয়। এরপর একটি কোলাজেন জেলে রেখে বিশেষ ছাঁচের মধ্যে এগুলো বড় করা হয় এবং একত্রে সংযুক্ত করে প্যাচের আকৃতি দেওয়া হয়। মানুষের ক্ষেত্রে, এই ঝিল্লি আকৃতির প্যাচ সাধারণত প্রায় ৫ সেন্টিমিটার × ১০ সেন্টিমিটার মাপের হয়ে থাকে।
এই গবেষণার সহ-লেখক অধ্যাপক উলফ্রাম-হুবার্টাস জিমারম্যান জানান, এই প্যাচের কোষগুলো মূলত ৪ থেকে ৮ বছর বয়সী হৃৎপিণ্ডের মতো গঠিত।
‘আমরা মূলত হৃদ্রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হৃদযন্ত্রে তরুণ পেশি প্রতিস্থাপন করছি,’ বলেন তিনি।
গবেষকদের মতে, সরাসরি হৃদযন্ত্রে কোষ প্রবেশ করালে টিউমার বা অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের মতো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কিন্তু এই প্যাচের মাধ্যমে অনেক বেশি হৃদ্যন্ত্রের কোষ সংযোজন করা সম্ভব এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।
‘নেচার’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, রিসাস প্রজাতির বানরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, এই প্যাচের কারণে হৃদযন্ত্রে কোনো অনিয়মিত স্পন্দন, টিউমার বা জটিলতা দেখা যায়নি। ছয় মাস পর পরীক্ষা করে দেখা যায়, হৃদ্যন্ত্রের প্রাচীরের পুরুত্ব বেড়েছে এবং হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ক্ষমতা উন্নত হয়েছে।
গবেষকরা একই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন ৪৬ বছর বয়সী এক নারী রোগীর ওপর, যিনি উন্নত পর্যায়ের হার্ট ফেইলিওরে ভুগছিলেন। ডোনার কোষ থেকে তৈরি এই প্যাচ তার হৃদযন্ত্রে সংযোজন করা হয়। তিন মাস পর রোগীর অবস্থার স্থিতিশীলতা দেখা যায় এবং পরবর্তী সময়ে তার হৃদ্যন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয়।
গবেষকরা বলছেন, যেহেতু এই প্যাচ তৈরি করতে সাধারণত তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগে, তাই জরুরি রোগীদের জন্য এটি উপযুক্ত নাও হতে পারে। তবে ডোনার কোষ ব্যবহারের ফলে ‘অফ দ্য শেলফ’ প্যাচ তৈরি করা সম্ভব হবে, যা দ্রুত প্রয়োগযোগ্য হবে।
ইতোমধ্যে ১৫ জন রোগীর ওপর এই চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়েছে এবং আরও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে।
অধ্যাপক জিমারম্যান বলেন, ‘এর লক্ষ্য হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের বিকল্প দেওয়া নয়, বরং যারা বর্তমানে শুধু পালিয়েটিভ কেয়ারে রয়েছেন এবং যাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা মাত্র ৫০ শতাংশ, তাদের জন্য নতুন চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করা।’
ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক সিয়ান হার্ডিং এই গবেষণাকে যুগান্তকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি মনে করেন, আরও গবেষণা প্রয়োজন, কারণ এই প্যাচের কোষগুলো এখনো পুরোপুরি পরিপক্ব নয় এবং রক্তপ্রবাহ তৈরি হতে কিছুটা সময় লাগে।
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইপ্সিতা রায় গবেষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘এটি চমৎকার একটি আবিষ্কার। হৃদ্যন্ত্রের যে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত, সেখানে এই প্যাচ সংযোজনের মাধ্যমে কার্যকর প্রতিস্থাপন সম্ভব।’
Leave a Reply