শামীমা রহমান, ইবি প্রতিনিধি:
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শেখ হাসিনা হলে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ‘বিদায় সংবর্ধনা–২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) হলটির টিভি রুমে ১৫৬ জন শিক্ষার্থীকে এ সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এ কে এম শামসুল হক ছিদ্দিকীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকিব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়াও অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপ-উপাচার্য ড. এম এয়াকুব আলী বলেন,“ প্রিয় ছাত্রীবৃন্দ, আপনারা জানেন নারীদের প্রতি এদেশের কিছু মানুষের অস্বস্তি রয়েছে। এদেশের ১০ শতাংশ নারী পুরুষের হাতে নির্যাতিত হয়। বাকি ৯০ শতাংশ নারী নারীদের হাতে নির্যাতিত হয়। সুতরাং, আপনারা বিদ্যা অর্জন করে মহান মানুষ হবেন। আপনাদের মধ্যে যেন অহংকার না থাকে। আপনাদের ক্যারিয়ার অর্জন সবেমাত্র শুরু হলো। ভবিষ্যতে আপনাদের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন। আপনারা দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবেন।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকিব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “জ্ঞানার্জন প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরজ। নারীরা বর্তমান বিশ্বে যে অবস্থানে পৌঁছেছে তার পিছনে অন্যতম কারণ নারীদের অংশগ্রহণ। এজন্য নারীদেরকে শক্তি হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। মার্কস বলেছেন, ‘সমাজ গঠনে নারী-পুরুষ উভয়ে শ্রম দিবে।’ সমাজে নারীর গুরুত্ব অপরিসীম হিসেবে স্বীকৃত। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে অনেকে নিজেকে দুর্বল মনে করে। তোমরা দুর্বল নও। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো তোমরা অনেক অগ্ৰসর, অনেক মেধাবী। মেয়েরা পিছিয়ে পড়া কোনো জনগোষ্ঠী নয়। ভোটাধিকারে বর্তমানে নারীদের জন্য কোটার ব্যবস্থা নেই। এখন নারীরা নিজের পরিচয়ে ভোট দিতে পারবে। এর অর্থ হলো নারীরা আর পিছিয়ে নেই। নারী নিজের অস্তিত্বে মহীয়ান।”
নারী শিক্ষার্থীদের চাকরি প্রস্তুতির বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, “হল প্রোভোস্টকে অনুরোধ করবো মেয়েদের জন্য বিসিএস কোচিংয়ের ব্যবস্থা করুন। কুষ্টিয়া শহরে কোচিং করা মেয়েদের জন্য সমস্যা হয়। আমরা এই হলে মেয়েদের জন্য বিসিএস পড়াশোনার ব্যবস্থা করবো। মেয়েরা চাইলে তাদের জন্য আবৃত্তি সংসদ করা হবে হলে। তাদের জন্য নিউজ রিডিং শেখানোর ব্যবস্থা করা হবে।”
শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত জীবনের অনুপ্রেরণা দিয়ে তিনি বলেন, “এখন তোমার আসল প্রস্তুতি। এদেশের মধ্যবিত্ত সমাজের মানুষ বেশি। তাই আমাদের চাকরি পাওয়া খুব দরকার। তুমি মনে করবে না আমি নারী। তুমি মনে করবে আমি মানুষ। কারণ এটা হলো মানুষতান্ত্রিক সোসাইটি। যারা মুসলিম আছো তারা ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো মানার চেষ্টা করবে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও নিজেদের ধর্ম পালন করবে। তোমরা শুধু নারী হয়ে বেঁচে থেকো না। মানুষ হয়ে বেঁচে থেকো।”
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট দিয়ে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। একইসাথে বিজয় দিবসে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পুরস্কার প্রদান করা হয়।
Leave a Reply