নিজস্ব প্রতিবেদক:
উলিপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নার্গিস ফাতিমা তোকদারের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলাসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ওই অফিসার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দাপ্তরিক কার্যক্রম ভেস্তে যেতে বসেছে। এ পরিস্থিতি উপজেলায় কর্মরত প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৮ জুলাই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমির হোসেন অবসরে গেলে সিনিয়র সহকারী শিক্ষা অফিসার হিসেবে ৯ জুলাই ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব গ্রহণ করেন নার্গিস ফাতিমা তোকদার। পরে ওই বছর ১২ নভেম্বর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হিসেবে চলতি দায়িত্বে পদায়নের পর থেকে তিনি নিজের খেয়াল খুশিমতো চলতে থাকেন। গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকার পতন হলে সারা দেশে সকল শিক্ষা কমিটি (প্রাথমিক) ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক (এডহক) কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হলেও অদ্যবধি সেটি বাস্তবায়ন করেননি তিনি। এ ছাড়া প্রধান শিক্ষকগণ স্কুলের স্লিপ কমিটি অনলাইনে জমা দেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষা অফিসারের পরামর্শ নিতে গেলে তাদেরকে তার পছন্দ মতো লোক দিয়ে জমা দিতে বলেন। যা উপজেলায় ২৬৮টি বিদ্যালয়ে স্লিপের টাকা উত্তোলন করতে পারেননি শিক্ষকরা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪ এর সরকারি বরাদ্দকৃত ৭০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। পরে দায়সারাভাবে টুর্নামেন্ট শেষ করে বরাদ্দকৃত টাকার সিংহভাগ অর্থ পকেটস্থ করেন।
স্লিপের প্রথম কিস্তির টাকা গত ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো বিদ্যালয়ে তা দেওয়া হয়নি। শিক্ষক দিবসের ব্যানার উলিপুর শহরের একটি প্রিন্টিং প্রেসের সঙ্গে চুক্তি করে ২২০ টাকার মূল্যের ব্যানার ৩৫০ টাকায় চুক্তিকৃত প্রিন্টিং প্রেসের নিকট সকল প্রধান শিক্ষককে নিতে বাধ্য করেন শিক্ষা অফিসার নার্গিস ফাতিমা তোকদার।
এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন অজুহাতে হরহামেশাই অফিস ফাঁকি দিচ্ছেন। অফিসের প্রয়োজনে শিক্ষকরা তাকে অফিসে না পেয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম ভেস্তে যেতে বসেছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক প্রধান শিক্ষক বলেন, শিক্ষক দিবসের ২২০ টাকার ব্যানার আমরা ৩৫০ টাকায় নিতে বাধ্য হয়েছি। এছাড়া সার্ভিস বই, এসিআর এবং এলপিআর এ যাওয়া শিক্ষকদের ফাইল স্বাক্ষর না করে মাসের পর মাস ঘুরাচ্ছেন। শিক্ষকগণের জিপিএফসহ অন্যান্য ঋণের কাগজে স্বাক্ষর করেন না। তিনি অফিস না করে স্কুল পরিদর্শনের নামে ভুড়িভোজ করে বেড়ান আর শিক্ষকরা কাজের জন্য অফিসে এসে মাসের পর মাস ঘুরে যাচ্ছেন। তিনি শিক্ষা অফিসারে দায়িত্ব গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকগণের মাসিক সমন্বয় সভা করেনি। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা যেন হ-য-ব-র-ল অবস্থা। কেউ শুনছে না ও মানছে না কারো কথা। যে যার মত অফিস করে বাড়ি যাচ্ছেন।
একটি সূত্র জানায়, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নার্গিস ফাতিমা তোকদার তার অবস্থা বেগতিক অনুমান করে পাশ্ববর্তী রাজারহাট উপজেলায় বদলি নেয়ার জন্য জোড় তদবির চালাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নার্গিস ফাতিমা তোকদার কিছু অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, কিছু অসাধু চক্রের স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটায় আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী বলেন, বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। বিষয়গুলো খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নয়ন কুমার সাহা বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কথা বলে বিষয়গুলো দ্রুত নিরসন করা হবে।
Leave a Reply