নাজমুল হুদা, রাবি প্রতিনিধি:
অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ ও “অপশাসন-
নির্যাতনের “প্রতিবাদে ফেব্রুয়ারিতে আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের মাসব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) রাত পৌনে নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোড়ে ‘গণঅভ্যুত্থান মঞ্চের’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাত নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জোহা চত্বরে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এরপর পৌনে নয়টার দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ প্যারিস রোড হয়ে জোহা চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
এসময় বিক্ষোভকারীরা ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘ছাত্রলীগ জঙ্গী, খুনি হাসিনার সঙ্গী’, ‘স্বৈরাচারের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, স্বৈরাচারের বিচার চাই, ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ৫ আগস্টে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছি এই স্বাধীনতাকে কোনোভাবেই ভুলণ্ঠিত হতে দেয়া যাবে না। এই স্বাধীনতার পিছনে এখনো যদি আওয়ামী দোসররা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় আমরা এর দাঁতভাঙা জবাব দিবো। আমরা এখনো রাজপথ ছেড়ে যাই নাই। দুই হাজার শহীদের রক্তের বদলা নিয়েই আমরা ঘরে ফিরবো। আওয়ামীলীগকে অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।
আওয়ামীলগের বিচার দাবি করে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই অবিলম্বে আওয়ামীলীগের বিচার নিশ্চিত করুন। খুনি হাসিনাকে দিল্লিতে বসে ষড়যন্ত্রের সুযোগ দেয়া যাবে না। ছাত্রলীগকে কবর দেয়া হয়েছে, কোনোভাবেই ছাত্রলীগকে এই দেশে জীবিত করতে দেয়া যাবে না। দ্বিতীয় শাহবাগের নামে এই দেশে যদি আর কোনো মব তৈরি করতে দেয়া হবে না। ছাত্রলীগকে প্রতিহত করার জন্য বাম ডান সকলে মিলে রাজপথে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি।
গণঅভ্যুত্থান মঞ্চের আহ্বায়ক জায়িদ জোহা বলেন, আওয়ামীলীগ ফ্রেব্রুয়ারিতে যে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আমরা ঘৃণা ভরে সেটা প্রত্যাখ্যান করেছি। এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়বদ্ধতা। স্বৈরাচার শক্তির বিচার নিয়ে গড়িমসি করতে দেয়া যাবে না। আমরা বলতে চাই এই স্বৈরাচারী দল ষোলো বছর মানুষের ওপরে যেভাবে অন্যায় করেছে, অবিচার করেছে, দূর্নীতি করেছে, লুটপাট করেছে তারা এই দেশে সাংবিধানিক ভাবে কোনো দলীয় কর্মসূচি পালন করতে পারে না।
তিনি আরো, জুলাই অভ্যুত্থানের পরও যদি আমাদেরকে দেখতে হয় এই স্বৈরাচারী দল স্বাধীনভাবে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে তাহলে আমি মনে করি আমাদের শহীদ ভাইদের রক্ত বৃথা। আমাদের সবাইকে একতাবদ্ধ হতে হবে যেন কোনোভাবেই এই স্বৈরাচার শক্তি ফিরে আসার সুযোগ না পায়।
বিক্ষোভ সমাবেশে গণঅভ্যুত্থান মঞ্চের সদস্য মো. মামুন সরদারের সঞ্চালনায় অন্যান্য বক্তারা বক্তব্য রাখেন। বিক্ষোভ সমাবেশে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের পদত্যাগ ও “অপশাসন-নির্যাতনের” প্রতিবাদে আগামী ১৮ই ফেব্রুয়ারি হরতালের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার দাবির লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি করবে দলটি। ৬ ফেব্রুয়ারি দেশে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ১০ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। ১৬ ফেব্রুয়ারি রোববার অবরোধ এবং ১৮ই ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক ‘কঠোর’ হরতাল কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
Leave a Reply