বিজিবি ও স্থানীয়রা জানায়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রধান পিলার ৮২৯ নম্বরের ২ নম্বর উপপিলার পাটগ্রাম সদর ইউনিয়নের গাটিয়ারভিটা সীমান্তের শূন্যরেখার ৫০ গজ অভ্যন্তরে গত মঙ্গলবার রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার বিএসএফের ৯৮ ব্যাটালিয়নের ফুলকাডাবরী ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা সে দেশের নির্মাণ শ্রমিকদের নিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও যন্ত্র স্থাপন করে।
পরদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে চাষাবাদ করতে যাওয়া কৃষকরা বিষয়টি দেখতে পেয়ে বিজিবিকে খবর দেয়। বিজিবি বিএসএফের নিকট তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত বৈদ্যুতিক খুঁটি ও যন্ত্র সরিয়ে নিতে বলে এবং পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দেয়। পরবর্তীতে ওই সীমান্ত পয়েন্টে বুধবার সন্ধ্যায় বিএসএফ-বিজিবির মধ্যে কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ২০ মিনিট স্থায়ী বৈঠকে ভারতের পক্ষে ৬ জন বিএসএফের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্ব দেন ইন্সপেক্টর জিতেন্দ্র সিং। বাংলাদেশের পক্ষে ৬ জনের নেতৃত্ব দেন সুবেদার মাহবুবুর রহমান। বৈঠকে কোনো কিছু না জানিয়ে রাতের অন্ধকারে শূন্যরেখার মধ্যে খুঁটি ও যন্ত্র স্থাপন করার প্রতিবাদ জানায় বিজিবি।
বিএসএফকে শূন্যরেখার মধ্যে কোনো কিছু নির্মাণ বা স্থাপনে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন মেনে চলার আহ্বান জানায় বিজিবি। নির্মিত খুঁটি ও যন্ত্র সরিয়ে নিতে আহ্বান জানালে স্থাপিত যন্ত্র ও খুঁটি সরিয়ে নেয় বিএসএফ।
দহগ্রাম সীমান্তের মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা আরশ আলী বলেন, ‘কোনো আইনকানুন বিএসএফ মানে না। শূন্যরেখায় কীভাবে তারা কাঁটাতারের বেড়া দেয়?’
একই এলাকার মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘বিএসএফ-এর কারণে সীমান্তে চাষাবাদ করতে হিমশিম খেতে হয় কৃষকদের। সুযোগ পেলেই তারা চড়াও হয়, মারধোর করে আমাদের।’
পাটগ্রাম সদর ইউনিয়নের আয়নুল হক বলেন, ‘সীমান্তে বিএসএফ সবসময়ই আগ্রাসী মনোভাবের। তাদের বাধা দিলেই গুলি ছোড়ে, ধরে নিয়ে যায়।’
একই এলাকার বাসিন্দা নুর আলম বলেন, ‘মাঝে মাঝে মহিলাদেরকে নির্যাতন করে ভারতীয় বাহিনী। কারণ-অকারণে গুলি করে।’
বিএসএফের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বরাবরের মতো প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজিবি। প্রতিটি পতাকা বৈঠকে সীমান্ত আইন মেনে চলা এবং নির্মিত স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলছে বিজিবি। বর্তমানে এসব স্থানে সতর্ক অবস্থানে আছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি, বলছেন বাহিনীটির কর্মকর্তারা।
বিজিবি’র ৫১ ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক আমীর খসরু বলেন, “বিএসএফ সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করলে আমরা সাথে সাথেই প্রতিবাদ জানিয়ে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানাই।”
৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল সেলিম আল দীন বলেন, ‘কোনো প্রকার সমন্বয় বা আলোচনা ছাড়া সীমান্তের দেড়শ গজের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করলে আমরা জোর প্রতিবাদ করি। প্রয়োজনে স্থাপনা সরিয়ে নিতে বলা হয় বিএসএফ-কে। সীমান্ত রক্ষায় আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। উত্তেজনাপূর্ণ এলাকায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আমাদের সদস্যরা।’
Leave a Reply