কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
আজ সীমান্তে ফেলানী হত্যার ১৪ বছর। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে নির্মমভাবে তার মৃত্যু হয়।
সেদিন বাবার সাথে ৯৪৭ নং আন্তর্জাতিক ৩ নং সাব পিলারের পাশ দিয়ে মই বেয়ে কাটাতারের বেড়া পেড়িয়ে দেশে ফেরার সময় টহলরত ভারতের সাহেবগঞ্জ থানার অধিনে চৌধুরীহাট ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ তাকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় ১৪ বছর পরেও আজও কাঙ্খিত বিচার পায়নি তার পরিবার।
নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের দক্ষিণ রামখানা কলোনিটারী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, দিনটি ঘিরে ফেলানীর কবর পরিস্কারে ব্যাস্ত পরিবার। কথা হয় তার বাবা নূরুল ইসলাম ও মা জাহানারার সঙ্গে। তারা বলেন, ১৪ বছরেও সেদিনের দু:সহ স্মৃতির কথা ভুলতে পারিনি আমরা। আজও তার আত্মচিৎকারে গভীর রাতে আচমকা ঘুম ভেঙ্গে যায় আমাদের। দু’চোখে অশ্রæ ঝরে। মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ বহু জনের কাছে গিয়েছি কিন্তু আজও কাঙ্খিত বিচার পেলাম না।
২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট কোচবিহার জেলার বিএসএফ’র ১৮১ সদর দপ্তরে স্থাপিত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যার বিচারকার্য শুরু হয়। ৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষনা করে। রায় প্রত্যাখ্যান করে ১১ সেপ্টেম্বর ফেলানীর বাবা ভারতীয় হাই কমিশনের মাধ্যমে সে দেশের সরকারকে ন্যায় বিচারের আশায় পত্র দেন। আবারও ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুন:বিচার কার্যক্রম শুরু হলেও বিভিন্ন কারনে তা একাধিকবার স্থগিত হয়।
পরে ২০১৫ সালে আইন ও শালিস কেন্দ্র এবং ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ আরও একটি ক্ষতিপুরন মামলা করে। ৩১ আগস্ট ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সেদেশের সরকারকে ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপুরন হিসেবে ৫ লক্ষ রুপী প্রদানের অনুরোধ করেন। এর জবাবে সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামকে দায়ী করে বক্তব্য দেয়। এরপরে ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানী পিছিয়ে যায়। পরে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ শুনানীর দিন ধার্য হলেও তা আজো হয়নি।
ফেলানী হত্যা মামলার বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য মানবাধিকার কর্মী, এ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন আমরা এ হত্যাকান্ডের ন্যায় বিচার পাইনি। পেলে মানবাধিকার সুরক্ষার পখ সুগম হত।
এছাড়াও ২০১৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ফেলানী হত্যা ঘটনায় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচার এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ১ম ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট সালমা আলী ২য় বাদী হয়ে আইন ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রনালয় (ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া) এর সচিব এবং বিএসএফ এর মহাপরিচালককে বিবাদী করে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নয়াদিল্লীতে ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী একটি ফৌজদারী মামলা করেন। তারা ২০১৫ সালের ২১ জুলাই ফেলানীর বাবার জন্য অন্তবর্তীকালীন ক্ষতিপুরন চেয়ে আরও একটি আবেদন করেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট সালমা আলী মুঠোফোনে জানান, মামলাটি ভারতের সুপ্রিমকের্টে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে।
এদিকে গত কয়েক বছর থেকে ৭ জানুয়ারীকে ফেলানী দিবস ঘোষনা, হত্যার বিচার, ফেলানীর পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপুরন প্রদান ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বারিধারা পার্ক রোড এর নাম ফেলানী সরণী রাখার দাবীতে কর্মসুচী পালন করে আসছে ঢাকাস্থ নাগরিক পরিষদ।
নাগরিক পরিষদের আহবায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন জানান, এবার তারা এ বিষয়ে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় শুধু স্টিকার লাগাচ্ছেন। তিনি বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর বিশ্ব ব্যাপী সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও ৭ জানুয়ারী ফেলানী দিবস পালনের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর ২০১৫ সালে তারা একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছিলেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় এটি বাস্তবায়নের জন্য জাতিসংঘের সদস্য যে কোন রাষ্ট্রকে প্রস্তাব আনতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সে উদ্যোগের অপেক্ষায়।
Leave a Reply