1. editor1@kurigramsongbad.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
  2. sifat@kurigramsongbad.com : sifat :
  3. siteaccess@pixelsuggest.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
সাম্প্রতিক :
কুড়িগ্রাম-৪ আসনে জিয়া পরিবার থেকে নির্বাচনের দাবি যুবদল নেতা পলাশের রৌমারীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির লিফলেট বিতরণ রাজারহাটে জাতীয় বিজ্ঞান মেলার উদ্ধোধন ফুলবাড়ীর অপহৃত মেয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে উদ্ধার, গ্রেফতার- ২ কুড়িগ্রামে আ.লীগের দুই নেতা গ্রেফতার কোনো ধরনের শত্রুতা কারও পক্ষে ভালো নয়: বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের সেনাপ্রধান এইচএমপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সগুলোকে নির্দেশনা ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ে রাজারহাটের একজন গ্রেফতার  ফুলবাড়ীতে অপহৃত মাদ্রাসা ছাত্রী ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে উদ্ধার কুড়িগ্রামে চর উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয় চাই নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত

ভারতের এই শিশুটিকে যেভাবে অনলাইনে ক্রিকেট তারকা বানালেন শচীন টেন্ডুলকার

  • প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ২৪ বার পড়া হয়েছে

অনঘা পাঠক ও মোহর সিং মীনা, বিবিসি

কিছুদিন আগে পর্যন্ত ১০ বছর বয়সী সুশীলা মীনা ভারতের রাজস্থানের ছোট্ট একটি গ্রামে লোকচক্ষুর অন্তরালে খুব সাধারণ জীবনযাপন করত।

কিন্তু কিংবদন্তি ভারতীয় ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার তার ক্রিকেট খেলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করার পর থেকে, সবকিছু কেমন যেন বদলে গেল। মুহূর্তেই মিডিয়ার স্পটলাইটে চলে এলো ছোট্ট মীনা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওটির ক্যাপশনে শচীন শিশুটির বোলিং অ্যাকশনের প্রশংসা করে লেখেন, তার বোলিংয়ে প্রাক্তন ভারতীয় বোলার জহির খানের ‘ছায়া’ রয়েছে।

মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যাওয়া এই ভিডিওটিতে লাখ লাখ ভিউ হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ এটি শেয়ার করেছে।

তবে মজার ব্যাপার হলো রাজস্থানের প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাস করা মেয়েটি তাকে বিখ্যাত করে তোলা এই ক্রিকেট আইকনকেই চেনে না।

সুশীলা জানায়, তাদের বাড়িতে টিভি নেই এবং সে কোনোদিনও ক্রিকেট খেলা দেখেনি।

সে বলে, ‘তিনি (শচীন টেন্ডুলকার) কে আমি জানি না।’

তবে তার প্রতি কৃতজ্ঞ বলে জানায় সুশীলা।

শচীন টেন্ডলকার (বাঁদিকে) জানিয়েছেন, সুশীলার বোলিং অ্যাকশনে প্রাক্তন সতীর্থ জহির খানের ছায়া রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

সবাই এখন দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের সন্তান সুশীলাকে চেনে। তার প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ। দূর সম্পর্কের আত্মীয়স্বজন; এমনকি রাজনীতিবিদ থেকে সমাজকর্মী সবাই তার সঙ্গে ছবি তুলতে চান।

জীবনের এই নতুন পরিবর্তন সম্পর্কে কিছু বলার ভাষা জানা নেই ছোট্ট সুশীলার। সে শুধু হাসে আর ছবি তোলার জন্য পোজ দেয়। মনে হয়, এখনও সে তার সদ্য পাওয়া খ্যাতি নিয়ে বিভ্রান্ত।

কিন্তু যেই সে তার স্কুল ইউনিফর্ম পরে এবং হাতে একটি রাবারের বল নিয়ে মাঠে পা রাখে, মুহূর্তেই লাজুক মেয়েটি এক নির্ভীক, দৃঢ় ও একাগ্র খেলোয়াড়ে পরিণত হয়।

সুশীলা বলে, ‘একবার বল হাতে নিলে, আমি শুধু একটাই চিন্তা করি—ব্যাটসম্যানকে আউট করতে হবে।’

তার সহপাঠী আশা প্রায়ই সুশীলার বিপক্ষে ব্যাট করতে নামে।

সুশীলার করা বোলিংকে ‘কঠিন’ বলে বলে বর্ণনা করে আশা।

সে বলে, ‘তার (সুশীলার) বল অদ্ভূতভাবে ঘুরে যায় এবং হঠাৎ উইকেটে আঘাত করে।’

মেয়ের সাফল্যে গর্বিত সুশীলার মা শান্তিবাঈ।

তিনি বলেন, ‘অনেকেই সুশীলাকে একবার দেখার জন্য আগ্রহ দেখালেও, তার মানে এই যে সবাই বিষয়টিকে সমানভাবে গ্রহণ করে।’

কেউ কেউ তাদের মেয়েকে ঘরের কাজ না করে ক্রিকেট খেলতে দেওয়ায়, তার বাবা-মাকে নানা প্রশ্ন করেন।

সুশীলার মা শান্তিবাঈ বলেন, ‘আমি কখনও ওকে ক্রিকেট খেলা বন্ধ করতে বলব না।’ ছবি: অংশুল ভার্মা

ভারতের অনেক গ্রামে মানুষের এই ধরনের মনোভাব খুব সাধারণ। এখানে সবাই আশা করে মেয়েরা বাড়িতে থাকবে এবং যুগ যুগ ধরে চলে আসা চিরাচরিত নারীর ভূমিকা পালন করবে। তাই এসব জায়গায় নারীদের খেলাধুলা বা এ ধরনের কাজকে নিরুৎসাহিত করা হয়।

শান্তিবাঈ বলেন, ‘আমি ওদের কিছু বলি না, আর তারা কী বলছে তাও আমি শুনি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কখনও ওকে ক্রিকেট খেলা বন্ধ করতে বলব না।’

সুশীলার স্কুলের প্রত্যেকেই ক্রিকেট খেলে এবং এর কৃতিত্ব তাদের শিক্ষক ঈশ্বরলাল মীনার।

তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালে স্কুলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই আমি শিক্ষার্থীদের ক্রিকেট খেলতে উৎসাহিত করতে শুরু করি। স্কুলে তাদের মনোযোগ ধরে রাখার জন্য আনন্দদায়ক খেলাধূলার প্রয়োজন। তা না হলে তারা বাড়িতে বসে থাকবে।’

মি. মীনা জানান, প্রথমে তিনি এবং অন্যান্য শিক্ষকরা মিলে দল গঠন করতেন এবং ছাত্রদের তাদের সঙ্গে খেলতে বলতেন। খুব শিগগিরই শিক্ষার্থীরাও খেলায় আগ্রহী হয়ে উঠল।

তাদের কোচের দায়িত্ব পালন করলেও, মীনার কোনো আনুষ্ঠানিক ক্রিকেট প্রশিক্ষণ নেই। তিনি ইউটিউব ভিডিও দেখে নতুন কৌশল শেখেন এবং শিক্ষার্থীদের শেখান।

বেশ কয়েকজন ছাত্র হওয়ার পর, মি. মীনা তাদের ক্রিকেট প্রতিভা প্রদর্শনের জন্য একটি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছিলেন।  আস্তে আস্তে মানুষ তার ভিডিওগুলো নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করে- কেউ কেউ ফর্ম এবং কৌশল নিয়ে পরামর্শও দেন।

সুশীলা তার স্কুলের প্রথম ছাত্রী নয় যে ইন্টারনেটে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

গত বছর রেণুকা পারগি নামে আরেক ছাত্রী তার ব্যাটিং দক্ষতার জন্য ভাইরাল হয়েছিলেন। সে বর্তমানে রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে একটি বেসরকারি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি রয়েছেন। একাডেমিই তার সব খরচ বহন করছে।

সুশীলার শিক্ষিকা মীনা বলেন, ক্রিকেট তার শিক্ষার্থীদের স্কুলের প্রতি আগ্রহ ধরে রাখার করে তোলার একটি অনুষঙ্গ। ছবি: অংশুল ভার্মা

তবে এখানকার স্কুল এবং শিক্ষার্থীদের শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচিতির চেয়ে আরও অনেক কিছু প্রয়োজন। কারণ সুশীলার গ্রাম ও তার স্কুল দুটোর অবস্থাই এখনও শোচনীয়।

মি. মীনা বলেন, ‘মানুষ আসে, বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু কিছুই বদলায় না।’

তিনি আরও বলেন,স্কুলটিতে শুধু প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা দেওয়া হয়। তাই পঞ্চম শ্রেণি পার হলেই তাদের ক্রিকেট খেলা বন্ধ হয়ে যাবে।তারপর তাদের আর কোনো সুযোগ পাবে না।’

স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা জানান, গ্রামটি ও এখানকার শিক্ষার্থীদের আরও ভালো সুযোগ-সুবিধা দিতে কী করা যায় তা তারা দেখবেন।

বন দপ্তর কিছু কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছে সমীক্ষা করে স্কুলের ক্রিকেট মাঠটি বাড়ানোর জন্য কিছু জমি দেওয়া যায় কি না- তা খতিয়ে দেখতে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি।

অন্যদিকে, সুশীলার বাড়িতে উপচে পড়ছে উপহারসামগ্রী। সর্বত্র অনেকগুলো ব্যাট ছড়িয়ে আছে, যদিও সে বোলার।

তার শিক্ষক বলেছেন, কেউ এখনও সুশীলার জন্য একটি সঠিক ক্রিকেট বল কিনে দেয়নি। এই বলগুলো বর্তমানে তার প্র্যাকটিস করা রাবারের বলের চেয়ে অনেক শক্ত এবং আরও উপরের রেবেলের ক্রিকেট খেলতে এগুলো প্রয়োজন হয়।

এতগুলো ব্যাট নিয়ে কী করবে জানতে চাইলে সুশীলা লাজুক গলায় বলে, ‘আমি এগুলো ব্যবহার করার চেষ্টা করব।’

এদিকে, গ্রামবাসীর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, সুশীলার ভাইরাল খ্যাতি শেষ পর্যন্ত সেই উপহারগুলোর মতো হয়ে যাবে কি না- যাতে অনেক আগ্রহ ও উত্তেজনা থাকবে, কিন্তু তার জীবনে কোনো বাস্তব পরিবর্তন আনবে না।’

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর
Kurigram Songbad © 2024. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest
error: Content is protected !!