লেখক–মেহেবুবা রহমানঃ নতুন বছরের আগমন সবার হৃদয়কে উচ্ছ্বসিত করছে। নতুন স্বপ্ন, নতুন সংকল্প নিয়ে এগোনোর প্রতিশ্রুতি অনেকেই নিয়েছি আমরা। ২০২৪-এর ডায়রিতে সাক্ষর নিয়ে ২৪ আর ২৪-শে আমাদের জীবনের সবকিছুকে চিরবিদায় জানাব বলে ঠিক করেছি আমরা। যদি সেই তালিকায় আমি থাকি, আমাকে ক্ষমা করো। তোমরা আমাকে রেখে দিও—আমাকে বর্তমানের ভবিষ্যতে রেখে যেও।
আমি থেকে যেতে চাই, সব ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার জন্য। আমাদের পৃথিবী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে ফেলে আমরা কিভাবে এগোতে পারি? তাহলে যে আমার সৃষ্টিকর্তা আমাকে ক্ষমা করবেন না। এই বিশ্ব আমাদের প্রয়োজন। সেও চায় নতুন স্বপ্ন, নতুন সংকল্প নিয়ে এগোতে।
তুমি, আমি, আমরা সবাই প্রত্যেকটা সূর্যোদয়ের সাক্ষী। যে সূর্যোদয় সুখ, দুঃখ, বিদ্রোহ আর সহিংসতাকে পরিচয় করিয়েছে আমাদের সঙ্গে। কই, সে তো তার অবস্থান পরিবর্তন করবে না। মধুমায়ার গন্ধে ভেসে থাকা বাতাস প্রতিদিন তার বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। তাকে ফেলে নতুন বছরে আমরা কিভাবে পা রাখি? ধরিত্রীর বুক চিরে জন্ম নেয়া আমাদের জন্ম জন্মান্তরের বন্ধু তার অস্তিত্ব তো অনেক আগেই হুমকির মুখে পড়েছে, আমরা ফেলেছি। কই তাকে তো আমরা এখনো বদলাতে পারিনি। বরং প্রতিনিয়তই তার প্রতি বিবেকহীনতার পরিচয় দিয়েছি।
বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের পরিচয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আমাদের নদীগুলো। তারা ভেঙেছে, গড়েছে। তাদের ধর্মই তো এটা। কিন্তু তাদের আরও ভয়ঙ্কর করে তুলেছি আমরা। নতুন জীবনের সংকল্পে কি আমরা এই সহিংসতা কমাতে পারব?
আমরা প্রত্যেকেই মানবতার ফেরিওয়ালা। মানবতা দেখানোর নামে কত কিছু করেছি, তবে তা কেবল আলোকচিত্রের নিমিত্তে। এর আড়ালে কি ছিল, তা হয়তো আমরা জানি। আমার সৃষ্টিকর্তার সুন্দর সৃষ্টিগুলো কেন প্রতিনিয়ত অসুরের হাতে বদ হচ্ছে? আমরা এতটাই মানবিক হয়েছি যে, আমাদের মতো মানুষকেই রক্তাক্ত করেছি। প্রাণ কেড়েছি। বিভেদ করেছি সাদা-কালো, উঁচু-নিচু, ধর্ম আর জাতি দিয়ে। এমনকি নির্বোধ পশু-পাখিদেরও নিস্তার দিইনি।
এই যে এই সব কিছু, তোমরা বরং ২৪-এ ফেলে যেও। সঙ্গে আমাকেও ফেলে যেও। যতটুকু লড়ে সবকিছু ঠিক করা যায়, তত দূর পথ পাড়ি দেব। এই পথে তো সহযোদ্ধা নেই। সবাই তো নিজের জীবন গড়া নিয়ে ব্যস্ত নতুন বছরে।
তবে সৃষ্টিকর্তার সমগ্র সৃষ্টি ছাড়া কি তোমরা তোমাদের জীবনকে সম্পূর্ণ করতে পারবে? আজ কেন প্রতিজ্ঞা করছ না, ২৪-কে তোমাদের সঙ্গে নিয়ে যাবে ২৫-এর গ্রহে, তাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য? শুধু ২৪ নয়, ফেলে আসা অনেক বকেয়া রয়ে গেছে।
চলো, আমরা সবাই একসঙ্গে সবকিছুকে একত্রিত করে নতুন পথের দিকে হাটি। ২৪-এর পাওয়া ক্ষতগুলো শুকিয়ে যেতে দিলে হবে না। তাকে আমৃত্যু দগদগে রাখতে হবে।
Leave a Reply