মোঃ ফরিদুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার রাজারহাট-আনন্দবাজার সড়কের ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সংস্কার কাজ ফেলে দুই মাসের মধ্যে সাব-ঠিকাদাররা লাপাত্তা হয়ে গেছেন। ফলে চলাচলে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ১৫ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রধান ঠিকাদারকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হলেও কোনো জবাব মেলেনি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (আরসিআইপি) আওতায় এই সড়কটির সংস্কার কাজের জন্য ২০২৩ সালে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকার ব্যয় নির্ধারণ করা হলেও প্রায় ১৬ শতাংশ কম দামে ১৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকায় চুক্তি হয় রংপুরের প্রধান ঠিকাদার খায়রুল কবির রানার সঙ্গে। কাজ শেষ করার নির্ধারিত সময় ২০২৬ সালের ৩০ জানুয়ারি।
কাজের শুরুর দিকে খানিক অগ্রগতি দেখা গেলেও দুই মাস পার হতে না হতেই সাব-ঠিকাদাররা সাইট থেকে উধাও হন। বর্তমানে সড়কটির বিভিন্ন অংশ খোঁড়াখুঁড়ি অবস্থায় পড়ে আছে। রাস্তার ওপর ইট-পাথরের স্তূপ, বড় গর্ত এবং খানাখন্দের কারণে সড়কটি প্রায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
এই সড়কটি রাজারহাট উপজেলার সদর বাজার থেকে উমর মজিদ ইউনিয়নের ফরকেরহাট বাজার হয়ে উলিপুর-কুড়িগ্রাম সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত। এটি দুই উপজেলার মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। প্রতিদিন এই পথে অসংখ্য যানবাহন এবং পথচারী চলাচল করেন। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদের জানান, “সড়কটি চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে প্রতিদিন সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দ্রুত কাজ শেষ করলে জনগণ উপকৃত হবে।”
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূল ঠিকাদার খায়রুল কবির রানা এই কাজ সাব-ঠিকাদার রনিকে দিয়ে শুরু করলেও পরে তা আরেক সাব-ঠিকাদার আবু সামার হাতে তুলে দেন। এর মধ্যেই কাজ সম্পন্ন না করে সাব-ঠিকাদাররা সাইট থেকে গায়েব হয়ে যান। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি রনি ও আবু সামা।
রাজারহাট উপজেলা প্রকৌশলী সোহেল রানা জানান, “সড়কটির সংস্কার কাজ মাত্র ৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদার আবু সামা গত ১০ নভেম্বর কোনো কিছু না জানিয়েই কাজ বন্ধ করে দেন। এ বিষয়ে প্রধান ঠিকাদারকে বারবার চিঠি দেওয়া হলেও তিনি কোনো জবাব দেননি।”
তবে প্রধান ঠিকাদার খায়রুল কবির রানা অভিযোগের দায় এড়িয়ে বলেছেন, “সাব-ঠিকাদার রনির কাজ ধীরগতির হওয়ায় আমি কাজটি আবু সামার কাছে দিই। কিন্তু তিনি কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রকৌশলীর অতিরিক্ত নিয়মকানুন এবং অহেতুক হয়রানির কারণেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।”
কাজের মান এবং অগ্রগতি নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর ওপর অভিযোগ তুলেছেন প্রধান ঠিকাদার। তবে প্রকৌশলী সোহেল রানা এসব অভিযোগ নাকচ করে বলেন, “কাজের গুণগত মান বজায় রাখতে নিয়ম মেনেই তদারকি করা হয়। প্রধান ঠিকাদার এবং সাব-ঠিকাদাররা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছেন।”
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর এবং কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। তবে কাজের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজ বন্ধ থাকায় জনগণের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি এবং ঠিকাদারের দ্রুত পদক্ষেপ না হলে সড়কটির ভগ্নদশা আরও প্রকট হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
Leave a Reply