ধর্ম ডেস্ক:
কোরআন-হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী হাসি ভালো, কিন্তু বেশি হাসা ভালো না, বরং ক্ষতিকর। অতিরিক্ত হাসি নবীজি পছন্দ করতেন না। সাহাবিদেরও তা পরিহার করতে বলতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আমি যা জানি তোমরা যদি তা জানতে, তবে তোমরা খুব কমই হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে।’ (বুখারি: ৬৪৮৫; তিরমিজি: ২৩১৩)
অন্য হাদিসে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা অধিক হাসবে না। কারণ অধিক হাসি অন্তরের মৃত্যু ঘটায়। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪১৯৩)
তবে, মুচকি হাসি সুন্নত। নবীজি (স.) সবসময় মুচকি হাসতেন। মুখে হাসি নিয়ে সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনু জাজয়ি (রা.) বলেন, ‘রাসুল (স.)-এর চেয়ে বেশি মুচকি হাসি দিতে আমি আর কাউকে দেখিনি।’ (তিরমিজি: ৩৬৪১)
অনেকে মনে করেন, যত বেশি হাসা যায়, ততই ভালো। মন প্রফুল্ল রাখা বা দুঃখ ভুলে থাকার জন্য বেশি বেশি হাসতে হবে। অনেক জায়গায় হাসির রঙ্গমঞ্চও সাজানো হয়। বিভিন্ন অর্থহীন কথার মাধ্যমে মানুষকে হাসানোর চেষ্টা করা হয়। কৃত্রিম হাসির ক্লাবও রয়েছে বিভিন্ন দেশে। সেখানে হাসির অনুশীলন করানো হয়। ইসলামের দৃষ্টিতে এসবের মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই।
তিরমিজি শরিফে ‘লোকদের হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলা’ অধ্যায়ে ইমাম তিরমিজি (রহ.) আবু হুরায়রা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে লোক এমন কথাও বলে, যে প্রসঙ্গে সে মনে করে যে তাতে কোনো অসুবিধা নেই, এ জন্য সে ৭০ বছর জাহান্নামে অবস্থান করবে।’ (তিরমিজি: ২৩১৪) আরেক হাদিসে এসেছে, ‘সেই লোক ধ্বংস হোক, যে মানুষকে হাসানোর উদ্দেশ্যে কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে। সে নিপাত যাক। সে নিপাত যাক।’ (তিরমিজি: ২৩১৫)
বিভিন্ন গবেষণায়ও দেখা গেছে, অতিরিক্ত হাসি কখনও মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। মস্তিক ফেটে যাওয়া বা রুপচার্ড ব্রেইন অ্যানুরিসম হতে পারে বেশি হাসার কারণে। এর ফলে মৃত্যুও ঘটতে পারে। এছাড়াও বেশি হাসার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগ হতে পারে। বেশি হাসা থেকে জিলাস্টিক সিজার, সিনকোপ ইত্যাদি শারীরিক সমস্যা হয়। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জোরে হাসির ফলে দমবন্ধ হয়ে অজ্ঞান হওয়ার ঘটনাও রয়েছে। এমন সমস্যা লাগাতার হলে হার্টের অসুখও হতে পারে। এরকম আরও অনেক সমস্যার কথা পত্র-পত্রিকায় দেখা যায়।
পক্ষান্তরে কান্নায় রয়েছে কল্যাণ। পরকালের কথা ভেবে, আল্লাহর ভয়ে যারা কান্না করে তাদের অন্তর নরম ও সজিব হয়। হৃদয়ে প্রশান্তি আসে। দুঃখকে হালকা করে। তাছাড়া আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীকে তিনি ভালোবাসেন। গুনাহ মাফ চেয়ে ক্রন্দনকারীকে তিনি মাফ করে দেন। এমনকি তাঁর ভয়ে রোদনকারীর জন্য তিনি জান্নাতের ফয়সালা চূড়ান্ত করেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারী ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যেরুপ দোহনকৃত দুধ আবার স্তনে ফিরিয়ে নেওয়া যায় না।’ (তিরমিজি: ২৩১১)
তাই আমাদের উচিত অধিক ও অনর্থক হাসার চেয়ে আল্লাহর ভয়ে বেশি বেশি কান্নাকাটি করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Reply