আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইরানের রাজধানী তেহরানে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রামী গোষ্ঠী হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে ইসরায়েল। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক বক্তব্যে হানিয়াকে গুপ্তহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। একইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের নেতৃত্বকেও একইভাবে নিশ্চিহ্ন করা হবে।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় দ্য গার্ডিয়ান।
গত এক সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলে অন্তত দুবার আঘাত হেনেছে ইয়েমেন থেকে ছোড়া ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন। বিধ্বস্ত হয়েছে ভবন। এ অবস্থায় হুথিদের নিশ্চিহ্ন করার হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তব্য দেন ইসরায়েল কাৎজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি অনুষ্ঠানে ইসরায়েল কাৎজ বলেন, ‘আমরা হুতিদের ওপর কঠোরভাবে আঘাত হানব.. এবং তাদের নেতৃত্বকে কতল করব… যেমনটা আমরা তেহরান, গাজা ও লেবাননে হানিয়া, (ইয়াহিয়া) সিনওয়ার ও (হাসান) নাসরুল্লাহর ক্ষেত্রে করেছি, ঠিক সেটাই আমরা হোদেইদা ও সানায় করব।’
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ইসরায়েল প্রথমবারের মতো হানিয়াকে হত্যার দায় স্বীকার করল। গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য হামাসের আলোচনার প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়া হানিয়াকে গত ৩১ জুলাই তেহরানে একটি সরকারি অতিথিশালায় গুপ্ত হত্যার শিকার হন। পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ হারান তিনি। একদিন আগে, হানিয়া ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য শুরু থেকেই ইসরায়েলকে দায়ী করে আসছিল ইরান ও হামাস। তবে এত দিন তা স্বীকার করেনি ইসরায়েল।
এছাড়া ২৭ সেপ্টেম্বর বৈরুতে বোমা হামলায় নাসরাল্লাহকে হত্যা করে ইসরায়েল, যার পরে গাজায় ১৬ অক্টোবর হানিয়ার উত্তরসূরি সিনওয়ারকে হত্যা করে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলছেন যে, সিনওয়ার ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার মাস্টারমাইন্ড।
মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কাৎজ আরও বলেন, ‘যে কেউ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হাত বাড়াবে তার হাত কেটে ফেলা হবে, এবং আইডিএফের (ইসরায়েলে সামরিক বাহিনী) লম্বা হাত তাকে আঘাত করবে।’
এদিকে মঙ্গলবার দিনের প্রথম দিকে ইসরায়েলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের হুথি সমর্থিত সামরিক বাহিনী। এসময় বোম্ব শেল্টারে আশ্রয় নিতে গিয়ে অন্তত ২৫ ইসরায়েলি আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে এক নারীর অবস্থা গুরুতর।
এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ। এসময় দৌড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিতে গিয়ে অন্তত ২৫ ইসরায়েলি আহত হয়েছেন।
ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথিরা গাজা যুদ্ধের সময় ইসরায়েলে সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। এই হামলাকে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রদর্শন হিসাবে বর্ণনা করেছে তারা। গত শনিবার, একটি ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবে সরাসরি আঘাত হানে। এতে কমপক্ষে ১৬ জন আহত হন। তার আগে ১৮ ডিসেম্বর হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালায় হুথি সমর্থিত সামরিক বাহিনী।
ইসরায়েল ইতোমধ্যে ইয়েমেনে তিন দফা বিমান হামলা চালিয়েছে এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ওপর চাপ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অন্যদিকে ইয়েমেনি সামরিক বাহিনী যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বলে ঘোষণা দিয়েছে।
Leave a Reply