1. editor1@kurigramsongbad.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
  2. sifat@kurigramsongbad.com : sifat :
  3. siteaccess@pixelsuggest.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
সাম্প্রতিক :
বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি ১/১১ চাইছে: নাহিদ ইসলাম বিশ্বের প্রথম উড়ন্ত বৈদ্যুতিক বাইক উন্মোচন করা হলো যুক্তরাষ্ট্রে রৌমারী থেকে ঢাকায় পাচারকালে শেরপুর থেকে প্রায় ৯ হাজার মাধ্যমিকের বই জব্দ করেছে পুলিশ কুড়িগ্রামে ত্রৈমাসিক জেন্ডার সমতা ও জলবায়ু জোট(GECA) সভা অনুষ্ঠিত ট্রাম্প কি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইন বন্ধ করতে পারবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জয়শঙ্করের বৈঠক, বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা ১৬ বছর পর মুক্তি পেলেন ৩ বিডিআর জওয়ান, জামিন পাবেন আরও ১২৩ জন রাজারহাটে ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডায় বিপর্যস্ত জনজীবন কুড়িগ্রামে অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের মাঝে কম্বল বিতরণ উলিপুরে নকল সন্দেহে ৪১৮ বস্তা টিএসপি সার জব্দ

ক্যউপ্রু ও তার ‘জাদুকরি’ বাঁশি

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৫৯ বার পড়া হয়েছে

আসমা সুলতানা প্রভা

হেমন্তের শেষ বিকেলে চারদিকে হিমহিম ঠান্ডা বাতাস। সে বাতাসের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে যেন নদীর স্রোত বয়ে চলেছে। চনমনে সে স্রোতার ঢেউ আছড়ে পড়ছে ক্যউপ্রু মারমার দুপায়ে। হাতে তার বাঁশি। সেটায় সুর তুলেছেন:

‘ওরে নীল দরিয়া

আমায় দে রে দে ছাড়িয়া

বন্দি হইয়া মনোয়া পাখি হায়রে

এই যে বর্ণনা দিচ্ছি, তার পুরোটাই কিন্তু ভার্চুয়াল জগতের। আমার সঙ্গে এ বাঁশিওয়ালার পরিচয় মোবাইলের স্ক্রিনে। ছোটবেলায় হ্যামিলিওনের সেই বাঁশিওয়ালার গল্প পড়েছেন বা শুনেছেন নিশ্চয়! তার বাঁশির সুরে দিক হারিয়ে সবাই নাকি তার পিছু নিত। আমিও বোধহয় তাই করেছি। ঠিক হ্যামিলিওনের নয়, পিছু নিয়েছি ভার্চুয়াল জগতের এক বাঁশিওয়ালার।

এ যেমন রাতে ঘুমোতে যাবার আগে, ঘরে নিজের কাজ করার সময় ছেড়ে রাখি তার বাঁশির সুর। কোথাও পাহাড়ের গায়ে, নদীর জলে, গাছের ডালে বসে ক্যউপ্রু বাঁশিতে সুর তুলছেন। আর এদিকে শহরের ইট-পাথরের চার দেওয়ালে বসে সে সুর আমি তন্ময় হয়ে শুনছি। সে এক অদ্ভুত জাদুকরি সুর! সম্মোহনী সুর!

আমার এ পাহাড়ি বাঁশিওয়ালার পুরো নাম ক্যউপ্রু মারমা। জন্ম ও বেড়ে ওঠা বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার থানাপাড়ায়। জন্মের দুই বছর পরেই হারিয়ে ফেলেন জুমচাষী বাবা উমিংমং মারমাকে। বাবা-হীন সংসারে অভাব তখন নিত্যসঙ্গী। ছেলের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে মা মামুইনু মারমা শিশু ক্যউপ্রুকে রেখে আসেন একটি অনাথালয়ে।

ক্যউপ্রুর শৈশব-কৈশোরের অনেকটা সময় কেটে যায় সেখানে। ক্যউপ্রুর মা মামুইনুও একজন জুমচাষি। তার আয়েই চলে মা-ছেলের ছোট্ট সংসার। ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কখনো কখনো দিনমজুরের কাজ করেন।

ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক কাজে যুক্ত থেকেছেন ক্যউপ্রু। জীবনের প্রতিটি সময়েই লড়ে গেছেন নিজের সঙ্গে। তবুও কঠিন থেকে কঠিন সময়েও থেমে যাননি ক্যউপ্রু। তীব্র টানাপোড়েনের মাঝেও চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা।

সে সূত্র ধরে বিশ্ববিদ্যালয় গণ্ডিতে তার পদার্পণ। অধ্যয়ন করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের ছোট-বড় সকলের কাছেই যে বেশ নামডাক ক্যউপ্রুর। অবশ্য জনপ্রিয় হওয়ার কারণও যে জুতসই। সুরের বাঁধনে আগলে রেখেছেন সবাইকে। নতুন করে সে যাত্রায় যুক্ত হয় দেশের লাখো মানুষ!

শুধু সুরের যে এত শক্তি, তা হয়তো ক্যউপ্রুও ভাবেনি কখনো। মানুষ তাকে বুকভরা ভালোবাসা দিয়েছে সুরের মায়ায় পড়ে। শব্দের মায়াজাল এখানে না-ই বা থাকলো!

ক্যউপ্রুর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আগে তার একটি ফেসবুক পোস্ট মনে ধরে যায় খুব। কবিগুরুর লেখা একটি কবিতার কিছু লাইন উদ্ধৃত করা ছিল সেখানে।

ছবি: সৌজন্যে

‘তবু মনে রেখো, যদি মাঝেমাঝে উদাস বিষাদভরে কাটে সন্ধ্যাবেলা,

অথবা শারদ প্রাতে বাধা পড় কাজে, অথবা বসন্তরাতে থেমে যায় খেলা।

তবু মনে রেখো, যদি মনে পড়ে আর আঁখিপ্রান্তে দেখা নাহি দেয় অশ্রুধারা।’

পৃথিবী থেকে কবিগুরুর চলে যাওয়ার কত বছর অতিক্রান্ত হলো। তবুও তিনি বেঁচে আছেন আগের মতো করে। বেঁচে আছেন তার গানে, সুরে, কবিতায়, গল্পে বা উপন্যাসে। তার এ কবিতার মতো করে এমনভাবে বেঁচে থাকার আকুতি আরও কত শত মানুষের।

গল্পের ছলে এ নিয়ে জানার আগ্রহ দমন করতে পারিনি সেদিন। জিজ্ঞেস করতেই ক্যউপ্রুর সহজ স্বীকারোক্তি, তারও এমন আকুতি মানুষের কাছে। তার ফেসবুক পোস্টে এ কবিতার মধ্য দিয়ে সে আশাই ব্যক্ত করেছেন। সুরের মায়াজালে বাঁধতে চান সবাইকে। বেঁচে থাকতে চান মানুষের মনে। তার ভাষ্য এ, পৃথিবীর কোনো প্রান্তে যখন নতুন সুরের দেখা মিলবে, সে সুরেই কেউ যেন খুঁজে নেয় তাকে।

তবে ক্যউপ্রুর আজকের যে পরিচিতি বা লাখো মানুষের কাছে তার বাঁশির জাদুকরি সুর ছড়িয়ে পড়া, সেটিও একটা গল্পের মতোই।

কুয়াশার চাদরে ঢাকা এক ভোরে মাকে নিয়ে নৌকোয় করে পাড়ি দিচ্ছিলেন নদী। এপার থেকে ওপারে যাবেন বলে অপেক্ষা করছিলেন পাড়ে। সে অলস সময়ে মাকে বাঁশি বাজিয়ে শোনানোর একটি ভিডিও করে বসেন তিনি। উৎসুক মন নিয়ে ফেসবুকে আপলোডও করে বসেন সেটি। ব্যস! অল্প সময়েই ১০ লাখের বেশিবার দেখে ফেলেন মানুষ! নেট দুনিয়ায় তার বাঁশির সুর ছড়িয়ে পড়ে দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত।

ফেসবুক বন্ধুর কল্যাণে সে বাঁশির সুর শোনার সৌভাগ্য হয় আমারও। মাকে পাশে নিয়ে বাঁশি বাজানোর সে ভিডিও দেখেই প্রথম মনে ধরে যায় আমার। এরপর সুরের টানে প্রায়ই নিয়ম করে ঢু মারি তার পেজে, একথা ঠিক।

কিন্তু শুধু কি সুরের টানেই আসি বারবার? না, ঠিক তা নয়। তার চারপাশের পাহাড়ঘেরা সবুজ সতেজ পরিবেশ, ভিডিওগ্রাফি, দৃশ্যগুলোও টানে প্রবলভাবে।

কখনো উঁচু পাহাড়ের কোলে, কখনো নদীর তীরে, কখনো কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে, কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টির বিকেলে, কখনো আবার বাড়ির সামনে বসে বাঁশি বাজান ক্যউপ্রু। তখন পেছন থেকে শোনা যায় জুম পাহাড়ের ঢালু ধরে বয়ে চলা ছোট ঝিরির কলকল শব্দ, পাহাড়ি হাওয়া, পাখির কিচিরমিচির ও বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ। সে এক জীবন্ত দৃশ্যপট!

ব্যস্ত জীবনের চাকায় পিষ্ট হতে হতে যখন মোবাইলের স্ক্রিনে ঐ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো দেখি, সত্যিই মনটা কেমন শান্ত হয়ে যায়! শুনতে শুনতে মনের অজান্তেই হঠাৎ বলে উঠি, ‘যদি একবার ক্যউপ্রুর পাশে, বন কিংবা পাহাড়ে, নদীর ধারে বসে স্বচক্ষে শুনতে পারতাম তার বাঁশির সুর, তবে কী দারুণ ব্যাপারটাই না হতো!’

অবশ্য তা বাস্তবিক পক্ষে হওয়া তো আর তেমন অসাধ্য কিছু নয়! দেখা গেল কোনো এক হেমন্তের বিকেল বা কুয়াশায় মোড়ানো শীতের সকালে ক্যউপ্রুর অতিথি হয়ে উড়াল দিলাম বান্দরবান।

বাঁশি বাজিয়ে আমার মতোই হাজারও মানুষের প্রশংসা ও ভালোবাসা যে পাচ্ছেন, তা ক্যউপ্রুর ভিডিওর মন্তব্যের ঘর দেখলেই বুঝি। দিনে একটিবার হলেও আমার যেমন শোনা চাই তার বাঁশির সুর, তেমনটি হয়তো অনেকের বেলায়ও তা।

বাঁশির করুণ সুরে যে আলাদা ভাষা আছে, সেথায় শান্তি খুঁজে নেন কেউ কেউ। তাতে যান্ত্রিক জীবনের সারাদিনের চিন্তা, অবসাদ, ক্ষোভ থেকে কিছুটা মুক্তি মেলে বৈকি!

শেষ বিকেলে সূর্য যখন পাহাড়ের পিছে লুকোয়, চারপাশে যখন মেঘ, সূর্য ও আকাশের লাল, নীল, সাদাসহ নানা রঙে ভরে উঠে পৃথিবী, তখনও পাহাড়ে ভেসে বেড়ায় ক্যউপ্রুর বাঁশির সুর। বয়ে চলা পাহাড়ি মৃদু ঠান্ডা বাতাস সে সুর নিয়ে যায় দূর থেকে বহুদূর।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর
Kurigram Songbad © 2025. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest
error: Content is protected !!