অনলাইন ডেস্ক:
কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
ঘটনাটি তদন্তে ও দোষীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, কুমিল্লায় আব্দুল হাই কানু নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়ন ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পূর্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তিসহ আব্দুল হাই কানুকে ধরে আনেন। লাল কটি ও পাঞ্জাবি পরা কানুর গলায় তখন জুতার মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। এসময় একজন পাশ থেকে তাকে বলছেন বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে। অপর আরেকজন বলছেন, তাকে কুমিল্লা থেকেই বের হয়ে যেতে।
এসময় আব্দুল হাই কানু আকুতি করে জানান, তিনি বাড়ি থেকে বের হবেন না। তখন তাকে পুরো গ্রামবাসীর মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন ওই ব্যক্তিরা।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, রবিবার সকালে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানু বাজার করতে বের হন। এসময় তাকে স্থানীয় কয়েকজন ধরে নিয়ে যায় কুলিয়ারা হাইস্কুলের সামনে। সেখানে তার গলায় জুতার মালা পরানো হয়। তবে এ ঘটনা পর পালিয়েছে জড়িতরা।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এটিএম আক্তারুজ্জামান বলেন, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা ওদের এলাকার। কয়েকজনের পরিচয় জানা গেছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। জড়িতদের কেউ কেউ গাজীপুর ও ঢাকায় থাকেন। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
তবে জানা গেছে, আব্দুল হাই কানু একটি হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে সর্বমোট নয়টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি মামলাই চলমান।
এ ঘটনার বিষয়ে আব্দুল হাই কানু বলেন, “আমার সাথে যা ঘটেছে তা বর্বর। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিরা গ্রেপ্তার না হলে আমি আত্মহত্যা করবো। ২০১৬ সালে আমার ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব বাতিসা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে। সেখানে সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হকের সায় ছিল না। তিনি নানাভাবে আমাদের পরিবারকে হয়রানি করেন। আমার বিরুদ্ধে ৯টি মামলা করা হয়। কারাগারেও যেতে হয়।”
তিনি বলেন, “কারাগারে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের সাথেও কয়েকদিন ছিলাম। রোববার তারই নির্বাচনী এলাকায় আমার ওপর জঘন্য আচরণ করা হয়েছে। তারা আমার গলায় ছুরি পর্যন্ত বসিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আমি গ্রামের বাড়িতে আসি। এর আগে মুজিবুল হকের রোষানলে পড়ে এলাকা ছাড়া ছিলাম। ভেবেছিলাম এবার স্বস্তিতে গ্রামে থাকতে পারব। কিন্তু ওরা পাকিস্তানি হায়েনার চেয়েও হিংস্র আচরণ করেছে আমার সাথে।”
জড়িতরা কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওদের একজন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। ২০০৬ সালে সে দুবাই চলে যায়। ৫ আগস্টের পর ফিরে এসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। আরেকজন গাজীপুরে থাকে।
Leave a Reply