তিনি আরও বলেন, “নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এটি করা সম্ভব। আমি এটি করার কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু সত্যি বলতে, আমি আগে কোভিড মোকাবিলায় ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম ছিলাম।”
তার সহযোগীরা গোপনে পরিকল্পনা করছেন, কীভাবে এটি বাস্তবায়ন করা যায়। তাদের মধ্যে কিছু প্রস্তাব হলো– অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের পাসপোর্ট না দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া এবং “জন্ম পর্যটন” বন্ধ করতে ট্যুরিস্ট ভিসার নিয়ম কঠোর করা।
তবে ট্রাম্পের মিত্ররা জানেন, যেকোনো পদক্ষেপ আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এবং শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে গড়াবে।
একটি সূত্র বলেছে, “আইনি লড়াই শুরু করার জন্য কিছু একটা করতে হবে।”
ট্রাম্পের দল এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ওয়েলকারের কাছে দেওয়া ট্রাম্পের বক্তব্যের দিকেই ইঙ্গিত করেছে।
ট্রাম্পের সমর্থকরা বলছেন, ১৪তম সংশোধনী ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী অভিভাবকদের সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য নয়।
কিছু কট্টর অভিবাসনবিরোধী যুক্তি দেন, অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রের “আইনগত অধীনস্থ” নয় এবং সংবিধান অনুযায়ী নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার রাখে না।
কানাডা, মেক্সিকো এবং দক্ষিণ আমেরিকার অনেকগুলো দেশসহ বিশ্বের প্রায় তিন ডজন দেশের ভূখণ্ডে জন্ম নিলে সরাসরি নাগরিকত্ব পাওয়া যায়।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৪ লাখ শিশু অবৈধ অভিবাসী অভিভাবকদের সঙ্গে বসবাস করছে।
একটি সূত্র বলেছে, “এটি কোনো জরুরি সমস্যা নয়। এটি প্রথম বছরেই চূড়ান্ত করতে হবে এমন নয়। তারা জানে যে এটি সুপ্রিম কোর্টে যাবে এবং তারা ধীরে ধীরে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে।”
আইনি লড়াই অনিবার্য হলেও, সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়টি গ্রহণ করবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়। যদি জন্মগত নাগরিকত্ব নিয়ে নিম্ন আদালতগুলোর মধ্যে মতবিরোধ না থাকে, তাহলে আদালত এটি গ্রহণে আগ্রহী নাও হতে পারে।
তবে যদি ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের জরুরি মামলার তালিকায় বিষয়টি নিয়ে আসে এবং নীতি বাস্তবায়নে নিম্ন আদালতের আদেশ স্থগিত করতে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চায়, তাহলে আদালতকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
যদি সুপ্রিম কোর্ট পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করে, তারা মূল সংবিধানগত প্রশ্ন এড়িয়ে আইন অনুযায়ী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রায় দিতে পারে।
সিএনএন আইনি বিশ্লেষক এবং জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি ল স্কুলের অধ্যাপক স্টিভ ভ্লাদেক বলেন, “এটি খুব সম্ভব নয়, তবে এটি একটি বিকল্প হতে পারে।”
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করার জন্য ট্রাম্প দলের পরিকল্পনার বিপরীতে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত বিরোধী পক্ষ।
এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (এসিএলইউ) ইমিগ্র্যান্টস রাইটস প্রজেক্টের উপপরিচালক কোডি ওফসি বলেন, “আমরা মামলা করব, অন্যরাও করবে। আমরা এই পরিস্থিতিতে কী করতে হবে তা নিয়ে প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা প্রস্তুত।”
জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের পক্ষে যুক্তি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে। এতে বলা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী বা নাগরিকত্ব গ্রহণকারী এবং এখানের অধীনস্থ ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।” সংবিধানের আগে থেকেই এমন একটি আইন ছিল।
এছাড়াও সুপ্রিম কোর্টের দীর্ঘদিনের রায় এই প্রচেষ্টার বড় বাধা। ১৮৯৮ সালের এক রায়ে বলা হয়, অ-নাগরিক বাবা-মায়ের সন্তান হলেও যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্মগ্রহণ করলে তাদের নাগরিকত্ব প্রযোজ্য। ১৯৮২ সালের আরেক রায়ে স্পষ্ট করা হয়, এই আইন অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ওফসি বলেন, “ইতিহাস স্পষ্ট। সংবিধানের বক্তব্য স্পষ্ট। দীর্ঘদিনের নজিরও স্পষ্ট। আমরা আত্মবিশ্বাসী, শেষ পর্যন্ত সংবিধানই জয়ী হবে এবং এখানে জন্ম নেওয়া মানুষরা নাগরিকত্ব পাবে।”
ডেমোক্র্যাটিক অ্যাটর্নি জেনারেলরাও লড়াইয়ে অংশ নিতে আগ্রহী। নিউ জার্সির অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাথিউ প্ল্যাটকিন বলেন, এই প্রস্তাব তার স্ত্রীকেও প্রভাবিত করতে পারে। ফিলাডেলফিয়ায় জন্ম নেওয়া তার স্ত্রী চীনা অভিবাসীর মেয়ে।
ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বন্টা বলেন, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য ট্রাম্পের যুক্তি “চরমপন্থি ও অস্বাভাবিক,” যা “কখনোই কার্যকর হবে না।”
তিনি সিএনএনকে বলেন, “যদি কোনো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিককে বিতাড়নের চেষ্টা করা হয়, আমরা অবশ্যই আদালতে মামলা করব।”
তবে, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বজায় থাকার বিষয়ে আইনি বিশেষজ্ঞরা আত্মবিশ্বাসী।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস স্কুল অব ল-এর ইমিগ্রেশন ও নাগরিকত্ব বিষয়ের বিশেষজ্ঞ হিরোশি মতোমুরা বলেন, ১৮৯৮ সালের জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের রায় বাতিল করা হলে এটি হবে “অন্যান্য নজির বাতিলের তুলনায় অনেক বেশি চরমপন্থি ও ভিন্ন।”
তিনি বলেন, “এটি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে কীভাবে গণতন্ত্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ১৪তম সংশোধনী এবং এর ব্যাখ্যা সেই ইতিহাস থেকে এসেছে, যেখানে একটি জাতি গঠন ও স্থায়ী করার জন্য দেশটির মাটিতে জন্ম নেওয়া ব্যক্তিদের সদস্যপদ দেওয়া জরুরি ছিল।”
Leave a Reply