1. editor1@kurigramsongbad.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
  2. sifat@kurigramsongbad.com : sifat :
  3. siteaccess@pixelsuggest.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
সাম্প্রতিক :
তিস্তার ন্যায্য হিস্যার পানি ও মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে দুলুর ৪৮ ঘন্টার কর্মসূচি ঘোষনা  ইশতিয়াক-রাব্বীর নেতৃত্বে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মিউজিক অ্যাসোসিয়েশন রৌমারীতে সরকারি বই চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন রৌমারী থেকে বিনামূল্যে সরকারি বই পাচার চেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার ৩ এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধা তালিকায় ১১তম তরঙ্গকে উলিপুরে সংবর্ধনা বেরোবিতে ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত ইবিতে ‘আন্তর্জাতিক কৃষি ও আগামীর মানব সভ্যতা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত রাজারহাটে শহীদ রাউফুন বসুনিয়া পাঠাগারের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ নেতানিয়াহুকে গোপনে অস্ত্র দিতেন এরদোয়ান: ইরানের গণমাধ্যম মুলতানে হ্যাটট্রিক করে ইতিহাস গড়লেন নোমান আলী

ভাঙনের স্রোতে ভাসমান আশা

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৪১ বার পড়া হয়েছে

মোঃ ফরিদুল ইসলাম, তরুন লেখকঃ নদীর পাড়ের মানুষগুলোর জীবন যেন একেকটা ট্র্যাজিক নাটক। কিন্তু তাদের হাসি, কান্না, লড়াই—সবই যেন ছন্দে বাঁধা। এ গল্প সেই নদীভাঙা মানুষের গল্প। যে গল্পের নায়ক কুড়িগ্রামের সাদেক আলী। জীবনের নির্মম রসিকতায় যিনি আজ নদীর সঙ্গে কথোপকথন করেন, আর শূন্যতার মাঝে খুঁজে বেড়ান হারানো দিন।

সাদেক আলীর জীবন একসময় নদীর মতোই বহমান ছিল। ফসলি জমি, গরু, ছাগল আর উঠোনে লাউগাছের ছায়ায় ভরা তার বাড়ি ছিল। আকাশ ছুঁতে চাওয়া ছেলেটি ভেবেছিল, জীবন এভাবেই কাটবে। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র নদ, যার পানির ঢেউ তাকে একসময় স্বপ্ন দেখাতো, সেটাই একদিন তার সব স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিল।

এক বর্ষার রাতে নদীর স্রোত যখন পাড়ে আঘাত করল, সাদেক বুঝতে পারল, বিপদ আসন্ন। “পাঁচ বিঘা জমি তো গিলল, এখন ঘরও যাবে,” বলে সেদিন স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে একরকম অসহায়তার কথা বলেছিল সে। কিন্তু তখনো সে ভাবেনি পুরো জীবনটা এভাবে উলটপালট হয়ে যাবে।

এক রাতে নদীর গর্জন শুনে ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে এসে দেখে, বাড়ির কোণ ঘেঁষে নদীর জল। ‘এত কাছে!’ সে স্তব্ধ হয়ে যায়। সেই রাতেই একজোড়া বাঁশ আর গাছের ডাল দিয়ে ঘর সামলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পরদিন সকালে পুরো উঠোনটাই নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

সবাই যখন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছোটাছুটি করছিল, তখন সাদেক শুধু দাঁড়িয়ে ছিল। নদীর দিকে তাকিয়ে বলেছিল, ‘নদী, তুই এত কিছু নিছস। তোর আর কী লাগে?’ পাশে থাকা স্ত্রী আছিয়া বলল, ‘চলেন, এ বাড়ি আর আমাদের নাই।’

সেদিন তারা গ্রাম ছেড়ে গেল। কোথায় যাবে, কেউ জানত না। সাদেকের ছেলেটা তখন বলেছিল, ‘বাবা, আমরা কি আর খেলতে পারব না উঠানে?’ সেই প্রশ্নের কোনো উত্তর সেদিন সাদেক দিতে পারেনি।

গ্রামের লোকজনের কথা শুনে তারা পাড়ি জমায় পাশের চরে। কিন্তু সেখানে পৌঁছে দেখে, কেউ তাদের ঠাঁই দিতে রাজি নয়। ‘তোরে আমি কিভাবে ঠাঁই দিব, সাদেক? নিজেরাই খালি হাতে আছি’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল তার ছোটভাইও।

অবশেষে একটি পুরোনো মাটির ঘরে উঠতে দেয় এক অচেনা কৃষক। কিন্তু সেখানেও শান্তি ছিল না। বৃষ্টি হলে ঘরের ভেতরে পানি জমে, আর শুকনো দিনেও মনটা যেন ভিজে থাকত। সাদেকের মেয়ে একদিন বলল, ‘বাবা, আমি খেলব কই? স্কুলে যাব কীভাবে?’ সেই প্রশ্নে সাদেক চুপ হয়ে থাকে। নিজের ভেতর থেকে উত্তর খুঁজে পায় না।

রাতে বসে সাদেক নদীর দিকে তাকিয়ে কথা বলে। ‘তুই তো নিস সব, নদী। আমাদের ঘর, জমি, স্বপ্ন—সব। এখন কি তুই আমাদের বুকের ভেতরটাও কাইড়া নিবি?’ আছিয়া তার পাশে বসে বলে, ‘এই কথা কইয়া লাভ নাই। কষ্ট মাইনা নাও। আমাদের নতুন কইরা শুরু করতে হইব।’

তাদের দিন কাটতে থাকে। ছোটোখাটো কাজ করে সংসার চলে। নদীর তাণ্ডবে যে মানুষ একসময় লড়াই করার শক্তি হারিয়েছিল, সেই সাদেক আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। ‘নতুন ভিটা বানাইমু। নদী আমার মাটি নিয়া গেছে, কিন্তু মনের জোর নিতে পারে নাই।’

একদিন সকালে সাদেক তার ছেলেকে নিয়ে নতুন জমির খোঁজে বের হয়। খালি হাতে মানুষটাও যে লড়াই করতে জানে, সেটাই প্রমাণ করার অদম্য ইচ্ছা তার। নদী তাকে যতবার ধাক্কা দিয়েছে, ততবার সে উঠে দাঁড়িয়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদ যেন তার জীবনের প্রতীক। কখনো নির্মম, কখনো প্রশান্ত। সাদেক বলে, ‘নদী আমার সব নিয়া গেছে। তবু আমি নদী রে দোষ দিই না। হয়তো এটাই নিয়তি। কিন্তু আমি আবার দাঁড়ামু। তুই যতই ভাঙস, আমি ততই গড়ি।’

সাদেকের এই লড়াই শুধু তার একার নয়। এটা হাজারো নদীভাঙা মানুষের গল্প। যারা হারানোর বেদনা নিয়েও নতুন করে জীবন শুরু করে। যারা জানে, নদীর গর্জনের চেয়েও মানুষের ইচ্ছাশক্তি অনেক শক্তিশালী।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর
Kurigram Songbad © 2025. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest
error: Content is protected !!