1. editor1@kurigramsongbad.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
  2. sifat@kurigramsongbad.com : sifat :
  3. siteaccess@pixelsuggest.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
সাম্প্রতিক :
কুড়িগ্রাম-৪ আসনে জিয়া পরিবার থেকে নির্বাচনের দাবি যুবদল নেতা পলাশের রৌমারীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির লিফলেট বিতরণ রাজারহাটে জাতীয় বিজ্ঞান মেলার উদ্ধোধন ফুলবাড়ীর অপহৃত মেয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে উদ্ধার, গ্রেফতার- ২ কুড়িগ্রামে আ.লীগের দুই নেতা গ্রেফতার কোনো ধরনের শত্রুতা কারও পক্ষে ভালো নয়: বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের সেনাপ্রধান এইচএমপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সগুলোকে নির্দেশনা ডাকাতির প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ে রাজারহাটের একজন গ্রেফতার  ফুলবাড়ীতে অপহৃত মাদ্রাসা ছাত্রী ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে উদ্ধার কুড়িগ্রামে চর উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয় চাই নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত

জনপ্রশাসনের সংস্কার আদৌ সম্ভব?

  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৩৩ বার পড়া হয়েছে

শেখ আবদুল্লাহ 

জন-কেন্দ্রিক, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন তৈরিতে অন্তর্বর্তীকলীন সরকারের নেওয়া সংস্কার উদ্যোগ ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার এবং অন্য ২৫ ক্যাডারে কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্যে উপসচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় এমন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দাবি, এই পদোন্নতির শতভাগই কেবল তাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা হোক, কেননা এটি (প্রশাসন ক্যাডারের দায়দায়িত্ব) রাষ্ট্রের কল্যাণের সঙ্গে সরাসরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। অপরদিকে, অন্যান্য ক্যাডারে কর্মরতরা বিষয়টিকে বৈষম্য হিসেবে উল্লেখ করে, তা দূর করতে যোগ্যতাভিত্তিক পদোন্নতির আহ্বান জানিয়েছেন।

জনপ্রশাসনের বিভিন্ন খাতে বর্তমানে ২৬টি ক্যাডার সার্ভিস আছে। বর্তমানে উপ-সচিব পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা পদোন্নতি পান।

এর আগে, গত ১৭ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক অনুষ্ঠানে সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, পরীক্ষা ছাড়া সিভিল সার্ভিসের উপসচিব এবং যুগ্ম সচিব পর্যায়ে কেউ পদোন্নতি পাবেন না বলে সুপারিশ করা হবে। একইসঙ্গে উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে। এ সময় তিনি আরও জানান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জুডিশিয়ারি সার্ভিসের মতো আলাদা কমিশনের অধীনে নেওয়ার সুপারিশ করা হতে পারে।

মূলত সংস্কার কমিশনের প্রধানের এমন বক্তব্যের পর থেকেই বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসের মধ্যে দ্বন্দ্বের শুরু হয়। প্রশাসন ক্যাডার ও অন্যান্য কাডার কর্মকর্তারা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নেন।

প্রশাসন ক্যাডারদের সংগঠন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এই সুপারিশ তারা মানবেন না। প্রয়োজনের কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও জানান কর্মকর্তারা।

তাদের দাবি, শুধু প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরই উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিবসহ উচ্চ পদে পদোন্নতি দিতে হবে।

অন্যদিকে, প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে থাকা ২৫টি ক্যাডার নিয়ে গঠিত ‘আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ’ শনিবার এক সভা শেষে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে— সংস্কার কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আগামী ২৩ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা বিবৃতি দেওয়া, কলম বিরতি, মানববন্ধন, সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর পরে প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। এই কর্মকর্তাদের অভিযোগ, সংস্কার কমিশন দীর্ঘদিনের ‘ক্যাডার বৈষম্য’ মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে।

আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান টিবিএসকে বলেন, সংস্কার কমিশন কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। অন্যদিকে কমিশনের সুপারিশে দীর্ঘদিনের বৈষম্য নিরসনের ব্যাপারেও কোনো সুপারিশ নেই।

তিনি বলেন, “আমরা চাই বৈষম্যহীন প্রশাসন। সেজন্য যেকোনো প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত এই ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা নেবেন।”

সংস্কারে চ্যালেঞ্জ 

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া টিবিএসকে বলেন, “বিসিএস ক্যাডাররাই জনপ্রশাসন নন। ফলে জনপ্রশাসনের সংস্কার মানে ক্যাডারদের বৈষম্য দূর করা নয়। সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনসেবা নির্বিঘ্ন ও সহজ করা।”

“এর পাশাপাশি প্রজাতন্ত্রের সব পর্যায়ের কর্মীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, দুর্নীতি বন্ধ করা। প্রতিষ্ঠানের আধুনিক জনবল কাঠামো নির্ধারণ, আইনি কাঠামো ঠিক করা। কর্মকর্তারা যাতে রাজনৈতিক সরকারের লেজুড়বৃত্তি করতে না পারেন সেজন্য একটি পদ্ধতি বের করা দরকার। সংস্কার কমিশনকে এসব বিষয়ে গভীর পর্যালোচনা করে সুপারিশ করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “জনপ্রশাসনের এই কাজগুলো করা সহজ নয়। এজন্য শক্তিশালী রাজনৈতিক সরকার লাগবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অনেক দুর্বল। এই সরকার সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নেবে এবং সম্ভব হলে তার কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন শুরু করবে। যাতে পরবর্তীতে রাজনৈতিক সরকার বাকি কাজগুলো করে।”

“তবে বর্তমানে জনপ্রশাসনের কর্মীদের মানসিক পরিস্থিতি ভীতিময়। তারা রুটিন দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ অবস্থায় কর্মকর্তাদের স্বার্থের সংঘাত হয়— এমন সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে যাওয়া ঝুঁকি পূর্ণ হতে পরে, যোগ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদিক হাসান টিবিএসকে বলেন, “জনপ্রশাসন সংস্কার অনেক বড় কাজ। এটা রাজনৈতিক সরকারকে করতে হবে। বর্তমান সরকারের জন্য এ ধরনের সংস্কার বাস্তবায়ন প্রশাসনিক ও আইনগতভাবে কঠিন।”

তিনি বলেন, “সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, এটা ভালো উদ্যোগ। কমিশন পর্যালোচনা করে দেখবে, কোথায় কী সমস্যা আছে এবং সেগুলো সমাধানের সুপারিশ করবে। তবে কমিশনের সুপারিশের আগে ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তারা যে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন, তাতে বাস্তবায়ন সহজ মনে হচ্ছে না।”

জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন সরকারের সময়ে জনপ্রশাসন সংস্কারে অনেক কমিশন, কমিটি হয়েছে। কিন্তু কোনো কমিশন, কমিটির সুপারিশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি।”

“কোনো সরকারই প্রশাসনের সাথে বিরোধ সৃষ্টি করতে চায় না। প্রশাসনকে সন্তুষ্ট রেখেই কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়। যে কারণে মূল সংস্কার বিশেষ হয়নি। বিভিন্ন সময়ে কিছু বিধিবিধান হলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন বিশেষ হয়নি,” যোগ করেন তিনি।

ক্যাডার কর্মকর্তাদের এমন বৈরী মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান সরকার অন্যান্য খাতে গঠন করা সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে পারলেও জনপ্রশাসনের সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া যথেষ্ট কঠিন হবে।

যেসব বিষয় নিয়ে প্রশাসন ক্যাডার ও অন্যান্য ক্যাডারদের মধ্যে স্বার্থের দ্বন্দ্ব

ক্যাডারদের মধ্যে প্রথম ও প্রধান দ্বন্দ্ব উপ-সচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে। প্রশাসন ক্যাডারদের দাবি শতভাগ উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদোন্নতি দেওয়া দরকার। আর প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া অন্যান্য ২৫ ক্যাডার সার্ভিস কর্মকর্তাদের দাবি, এক্ষেত্রে কোটার বাইরে গিয়ে মেধারভিত্তিতে পদোন্নতি দিতে হবে।

এরপরেই অন্যান্য পদে পদোন্নতি নিয়ে মত পার্থক্য রয়েছে প্রশাসন ও অন্যান্য ক্যাডারদের মধ্যে। অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেড-১ পদে প্রশাসন ক্যাডারদের জন্য যত পদ আছে, অন্যান্য ক্যাডারদের ক্ষেত্রে নেই। এজন্য অন্যান্য ক্যাডাররা সর্বোচ্চ পদে পদোন্নতি পান খুবই কম।

এছাড়া গাড়ি কেনার ঋণ নিয়েও ক্যাডারদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। সরকার উপ-সচিবদের গাড়ি কিনতে স্বল্প সুদে ৩০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। আবার গাড়ির মেইনটেনেন্স বাবদ মাসিক দেওয়া হয় ৫০,০০০ টাকা। উপ-সচিব পদে যেহেতু প্রশাসন ক্যাডাররা বেশি পদোন্নতি পান, ফলে এই সুবিধা তারাই বেশি পাচ্ছেন। প্রশাসন ক্যাডার ছাড়া অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, এই সুবিধা উপ-সচিবদের জন্য না দিয়ে উপ-সচিব সমমর্যাদার সকল কর্মকর্তাদের দেওয়া উচিত।

ডিসি (জেলা প্রশাসক) পদায়ন, ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্ট নিয়েও প্রশাসন ক্যাডারের বাইরের ক্যাডারদের অভিযোগ রয়েছে। তারা বলছেন, ডিসি পদে শুধুমাত্র প্রশাসন ক্যাডার থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অন্যান্য ক্যাডাররা এখানে সুযোগ পান না।

এছাড়া ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রেও প্রশাসন ক্যাডারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু অন্যান্য ক্যাডারদের বক্তব্য হলো— ভেজাল ও মানহীন খাদ্য বিষয়ক ভ্রাম্যমান আদালত খাদ্য ক্যাডারদের দিয়ে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ও লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল, ডায়গনস্টিক সেন্টার বিষয়ক ভ্রাম্যমাণ আদালত স্বাস্থ্য ক্যাডারদের দিয়ে পরিচালনা করা উচিত।

জানা গেছে, ২৫টি ক্যাডার মিলে প্রশাসন ক্যাডার ও অন্যান্য ক্যাডারদের মধ্যে বৈষম্য নিরসনের আন্দোলন করলেও পররাষ্ট্র, পুলিশ, শুল্ক ও অবগারি (কাস্টম) এবং কর ক্যাডারের কর্মকর্তারা এই আন্দোলনে বিশেষ সক্রিয় নন। এসব ক্যাডারের বেশিরভাগ কর্মকর্তা প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে তাদের বিশেষ দ্বন্দ্ব আছে বলে মনে করছেন না।

কারা কী বলছে?

গত ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের কল্যাণের স্বার্থে বিভিন্ন কারণে উপসচিব/যুগ্ম সচিব/অতিরিক্ত সচিব/সচিব পদে শতভাগ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন হওয়া উচিত। পদোন্নতি প্রত্যাশী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মতামত জরিপ কিংবা সমীক্ষার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে, তার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি করা হয়নি।

একই ইস্যুতে প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের সব জেলার জেলা প্রশাসকরাও (ডিসি)। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের দপ্তরে পাঠানো প্রতিবাদলিপিতে তারা বলেছেন, ‘এ ধরনের ঘোষণা অনভিপ্রেত, আপত্তিকর ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দুর্বল করার শামিল।’

কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরাও। তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শিক্ষাখাতে অস্থিরতা তৈরি করে সরকারকে অস্থিতিশীল করার এটি কোনো ষড়যন্ত্র কি-না, তা খতিয়ে দেখা উচিত।

আর কমিশনের প্রস্তাবকে একতরফা আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে স্বাস্থ্য ক্যাডারদের সংগঠন।

দেশের জনপ্রশাসন সংস্কারের ইতিহাস

স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে প্রশাসনিক সংস্কার ও পুনর্গঠনের জন্য বেশ কয়েকটি কমিশন গঠন করা হয়। ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমান প্রশাসনিক পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে ‘সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেস্টোরেশন কমিটি’ গঠন করেন। এরপর ১৯৭২ সালে ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ রি–অর্গানাইজেশন কমিটি’ এবং ‘ন্যাশনাল পে–স্কেল কমিশন’ গঠন করা হয়।

এসব কমিশনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় পুনর্গঠন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিষ্ঠা এবং একটি নতুন বেতন কাঠামো তৈরি হয়।

জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ‘পে অ্যান্ড সার্ভিস কমিশন’ গঠন করা হয়— যার লক্ষ্য ছিল প্রশাসনের পুনর্গঠন ও বেতন কাঠামো উন্নয়ন। তার পরবর্তী সময়ে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন। এগুলোর মধ্যে ‘মার্শাল ল কমিটি’, প্রশাসনিক সংস্কার ও পুনর্গঠন কমিটি (সিএআরআর), জাতীয় বেতন কমিশন ছিল।

এসব কমিশনের উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বলতে, থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা এবং নতুন বেতন কাঠামো প্রবর্তন করা হয়।

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার প্রশাসনিক পুনর্গঠনের জন্য একটি সংস্কার কমিটি গঠন করে। যদিও এই কমিটি কোনো সুপারিশ জমা দিতে ব্যর্থ হয়।

পরবর্তী সময় ১৯৯৬ ও ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রশাসন সংস্কার কমিশন (এসিআর) এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন (পিএআরসি) গঠন করে— যার লক্ষ্য ছিল স্বচ্ছ, জবাবদিহি ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

২০০৫ সালে বিএনপি সরকার ‘ট্যাক্স অমবাডসম্যান আইন’ পাস করে— যা আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়ক ছিল।

সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে ‘রেগুলেটরি রিফর্ম কমিশন’ গঠন করে এবং নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে পৃথক করার মতো সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় এসে প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য কর্মদক্ষতাভিত্তিক মূল্যায়ন পদ্ধতি (পিবিইএস) প্রবর্তনের চেষ্টা করে— যা জনগণের অংশগ্রহণ ও প্রশাসনিক কার্যকারিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল।

তবে এসব কমিশনের বেশির ভাগ প্রস্তাবনাই সরকার বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়। প্রশাসনিক সংস্কার কমিশনের ব্যর্থতার পেছনে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাব, উপনিবেশবাদী আমলাতান্ত্রিক কাঠামোর প্রভাব, ব্যবসায়ীগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা ও ক্ষমতাসীন দলের অনুগত কর্মকর্তাদের স্বার্থ বড় বাধা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর
Kurigram Songbad © 2024. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest
error: Content is protected !!