ধর্ম ডেস্ক:
পৃথিবীতে এখনও এমন অঞ্চল রয়েছে, যেখানে ঈমানের দাওয়াত পৌঁছেনি। আবার কিছু অঞ্চলে ঈমানের দাওয়াত পৌঁছেছে ঠিক, কিন্তু মানুষের গোমরাহিপূর্ণ জীবনযাপনের কারণে নবীনরা জানে না ঈমান কী, ইসলাম কী। এভাবে যারা ঈমানের দাওয়াত থেকে বঞ্চিত হয়েছে, তাদের বিচার কেয়ামতের দিন কীভাবে হবে?
এ সম্পর্কে বিভিন্ন অভিমত থাকলেও সবচেয়ে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য অভিমতটি হলো— কেয়ামতের দিন তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে। যে ব্যক্তি পরীক্ষায় পাস করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি পাস করবে না সে জাহান্নামের অধিবাসী হবে। কোনো পরীক্ষা ছাড়া তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে না। কারণ আল্লাহ তাআলা ন্যায়বিচারক। তাছাড়া তিনি পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমরা রাসুল প্রেরণ ব্যতিরেকে কাউকে শাস্তি দিই না।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ১৫)
অর্থাৎ, যাদের কাছে হেদায়েতের বাণী পৌঁছেনি, তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হবে না। হাশরের দিন তাদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে সে সম্পর্কে এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন চার ব্যক্তি ঝগড়া করবে। তারা হলো— ১. বধির ২. নির্বোধ ৩. অতিবৃদ্ধ এবং ৪. যে ইসলামের দাওয়াত পায়নি।
বধির বলবে, হে আমার প্রতিপালক! ইসলাম এসেছে, অথচ আমি কিছুই শুনতে পাইনি। নির্বোধ বলবে, ইসলাম আগমন করেছে, অথচ শিশুরা আমার দিকে পশুর বিষ্ঠা নিক্ষেপ করেছে। অতিবৃদ্ধ বলবে, ইসলাম আগমন করেছে, অথচ আমি কিছুই বুঝতে সক্ষম হইনি। আর ইসলামের দাওয়াত না পাওয়া ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! তোমার কোনো দাওয়াতদাতা আমার নিকট আসেনি।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের নিকট হতে আনুগত্যের শপথ নেবেন। এরপর তাদের নিকট একজন দূত প্রেরণ করবেন এই মর্মে যে, তোমরা আগুনে প্রবেশ করো। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যার হাতে আমার জীবন তাঁর কসম করে বলছি, যে ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে, আগুন তার কাছে ঠাণ্ডা ও শান্তিদায়ক হয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি প্রবেশ করবে না, তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’ (তাবারানি কাবির: ৮৪১; সিলসিলা সহিহাহ: ১৪৩৪)
হাদিস অনুযায়ী, আল্লাহর নির্দেশ মেনে যারা আগুনে প্রবেশ করতে দ্বিধাবোধ করবে না, তারা পরীক্ষায় পাস করবেন এবং জান্নাতলাভের উপযুক্ত হবেন। আরা যারা নির্দেশ মানবে না, তারা জাহান্নামের উপযুক্ত বিবেচিত হবে।
এই হাদিসের আলোকেই ইবনে তায়মিয়াহ, ইবনুল কাইয়িম, ইবনে কাসির, ইবনে হাজার, শায়খ উসাইমিনসহ বহু স্কলার ফতোয়া দিয়েছেন। (মাজমুউল ফতোয়া: ৪/৩০৩-৪; আহকামু আহলিল জিম্মাহ: ২/১১৪৮-৫২; ফাতহুল বারি: ৩/২৪৬; তাফসিরে ইবনে কাসির: ৫/৫৮; মাজমুউল ফতোয়া: ১২/০৭)
আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীনের ওপর আমৃত্যু অটল-অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন, দ্বীনের দাওয়াত পৃথিবীর প্রত্যেক বনি আদমের কানে কানে পৌঁছে দেওয়ার নববি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Leave a Reply