1. editor1@kurigramsongbad.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
  2. sifat@kurigramsongbad.com : sifat :
  3. siteaccess@pixelsuggest.com : কুড়িগ্রাম সংবাদ :
সাম্প্রতিক :
তিস্তার ন্যায্য হিস্যার পানি ও মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নে দুলুর ৪৮ ঘন্টার কর্মসূচি ঘোষনা  ইশতিয়াক-রাব্বীর নেতৃত্বে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মিউজিক অ্যাসোসিয়েশন রৌমারীতে সরকারি বই চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন রৌমারী থেকে বিনামূল্যে সরকারি বই পাচার চেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার ৩ এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধা তালিকায় ১১তম তরঙ্গকে উলিপুরে সংবর্ধনা বেরোবিতে ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত ইবিতে ‘আন্তর্জাতিক কৃষি ও আগামীর মানব সভ্যতা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত রাজারহাটে শহীদ রাউফুন বসুনিয়া পাঠাগারের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ নেতানিয়াহুকে গোপনে অস্ত্র দিতেন এরদোয়ান: ইরানের গণমাধ্যম মুলতানে হ্যাটট্রিক করে ইতিহাস গড়লেন নোমান আলী

শীত আসছে, গাছিরা কোথায়?

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ৪৯ বার পড়া হয়েছে

সালেহ সফিক

গাছির কাজ থেকে বাচ্চু শেখ অবসর নিয়ে নিলেন আগেভাগেই। দুই কারণে – শীত পড়ছে না বলে খেজুর গাছে রস মিলছে না, যেটুকুও পাওয়া যাচ্ছে তাতে স্বাদ হয় না ভালো। পানি মেশাতে না পারা বিষয়ক আরেকটি কারণ তিনি বললেন, ‘বাপ-দাদার কাছে শিখি নাই মানুষ ঠকানো। চার কেজি রসে ছয় কেজি পানি মিশিয়ে বিক্রি করেন অনেকে, আমি পারি না, এসব করলে অশান্তি লাগে।’

বাচ্চু শেখের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পানাম গ্রামে। বয়স এখন সাতষট্টি হলেও বেশ শক্তপোক্ত আছেন। বাড়িতে গরুর খামার গড়েছেন, কবুতর পালেন, মাঝেমধ্যে জ্বালানি কাঠের ব্যবসা করেন। পঁচিশ বছর তিনি খেজুর গাছের রসি কেটেছেন।

ওস্তাদ পেয়েছিলেন ফরিদপুরের দরগাবাজারের মনি মিয়াকে। বাচ্চুদের এলাকায় খেজুর গাছ খুব বেশি নেই। তবু মিরকাদিম, পানহাটা, হাতিমারা মিলিয়ে যা আছে তাতে চারজনের একটি দলের রোজগার কম হতো না। দশটি গাছ সমান এক গাছি। অর্থাৎ দশটি গাছ থেকে যা রস মিলত তাতে একজন গাছি খাওয়া-থাকা বাদ দিয়ে মৌসুমে ৪০-৫০ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারতেন।

অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাসকে খেজুররসের মৌসুম ধরা হয়। মনি মিয়া নিজের এলাকা থেকে একটি দল নিয়ে আসতেন কার্তিক মাসের শেষে। গাছমালিকদের সঙ্গে নগদ টাকায় চুক্তি করতেন, রসের ভাগ দিতেন না। রসের টাকার ভাগ কেবল কন্ট্রাক্টর আর গাছি পেতেন।

মনি মিয়া ওস্তাদ লোক

মনি মিয়া বছর পঁচিশ আগে যখন বাচ্চুদের এলাকায় এলেন, বাচ্চু তাকে খুব আদর আপ্যায়ন করলেন। সব সময় সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন, কাছছাড়া হন নাই। তিনি দেখতে থাকেন, মনি মিয়া প্রথমে খেজুর গাছের মাথায় চড়ে আগাছা সাফ করেন। তারপর নীচের কিছু অংশ কাঁচি দিয়ে চেঁছে যত্ন করে তুলতে থাকেন। ক্রমে একটা প্রায় বৃত্তাকার জায়গা বেরিয়ে আসে।

অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাসকে খেজুর রসের মৌসুম ধরা হয়।

এরপর বৃত্তের মাঝখানে বাঁশের মসৃণ একটি কঞ্চি গেঁথে দেন। এ কঞ্চি বেয়ে বেয়ে ফোটায় ফোটায় রস হাঁড়িতে গিয়ে জমা হয়। বাচ্চু তার অলস পড়ে থাকা একটি তিন কেজি মাপের মাটির হাঁড়ি দেখালেন। বললেন, ‘এ হাঁড়ি কেবল ফরিদপুরেই পাওয়া যায়। মাপভেদে দামের হেরফের হয় ৬০ থেকে ১০০ টাকা।’

ছয় বা সাত বছর বয়স থেকে একটি খেজুর গাছ রস দেওয়া শুরু করে আর ত্রিশ বছর পর্যন্ত দেয়। গাছের বয়স বেড়ে গেলে রস কমে যায়, তবে রস খুব মিষ্টি হয়। পরিমাণে বেশি রস পাওয়া যায় মধ্যবয়স্ক গাছ থেকে। পুরুষ গাছ বেশি রস দেয় স্ত্রী গাছের চেয়ে।

শীতের সঙ্গে রসের সম্পর্ক নিবিড়। শীত যত বেশি পড়ে, রসও তত বেশি হয় এবং স্বাদও বাড়ে। মৌসুমের এক মাসে একটি খেজুর গাছ থেকে ৪০-৫০ কেজি রস পাওয়া যায়।

খেজুরের রস মিষ্টি হওয়ার কারণ ফ্রুকটোজ। ঘনত্ব ও তাপমাত্রা দিয়ে ফ্রুকটোজ প্রভাবিত হয়। ফ্রুকটোজের ঘনত্ব যত বেশি হবে, রস ততই মিষ্টি হবে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ফ্রুকটোজ দ্রবণের মিষ্টতা ১৪৭, যেখানে ১৮ ডিগ্রিতে ১২৮।

মাটির প্রকারভেদও রসের গুণাগুণকে প্রভাবিত করে। বাচ্চু শেখ বলছিলেন, ‘ভালো রস মেলে গাজিপুর ও মধুপুর গড় এলাকায়। লাল মাটি এর কারণ।’

পানাম, পানহাটা, মিরকাদিমের প্রায় সব খেজুর গাছের বয়স ও লিঙ্গ বাচ্চু শেখের জানা। গাছ ভাড়া নেওয়ার সময় এতে দরদামে সাহায্য হয়। বাচ্চু শেখের ভাষায়, ‘বেশি শীতে গাছের শরীর জারায় (রসালো) বেশি, তাই শীত না পড়লে গাছ কেটে আরাম নেই।’

ফরিদপুর পরিস্থিতি

এবার ঘুরে আসা যাক খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত ফরিদপুরে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ফরিদপুর প্রতিনিধি সঞ্জিব দাস জানাচ্ছেন, সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের সুনীল দাসের বাড়িতে ছিল শতাধিক খেজুর গাছ। প্রতি শীত সকালে ১০ হাঁড়ি করে রস পাওয়া যেত।

খোরাকি বাদে একজন গাছির দৈনিক মজুরি ৮০০-১০০০ টাকা।

সে রস থেকে ৭-৮ কেজি মতো খেজুর গুড় তৈরি করা হতো। গেল দু-তিন দশকের ব্যবধানে সুনীল দাসের বাড়িতে এখন একটিও খেজুর গাছ নেই। গাছির সংকট এর প্রধান কারণ। দ্বিতীয় কারণ, রস থেকে গুড় উৎপাদন করতে প্রচুর জ্বালানির প্রয়োজন। তাই তারা খেজুর গাছ কেটে অন্য গাছ লাগিয়েছেন।

গঙ্গাবর্দী এলাকার কৃষি ইন্সটিটিউট এলাকার বাসিন্দা এনামুল হাসান গিয়াস খেজুর গুড়ের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি বললেন, ‘আগের চেয়ে খেজুর গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তাছাড়া গাছিও পাওয়া যায় না। রাজশাহী, যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে গাছিদের নিয়ে এসে গুড় তৈরি করতে হচ্ছে। এজন্য একজন গাছিকে দিনে ১০০০ টাকা মজুরি ও ২০০ টাকা খোরাকি দিতে হয়।’

গাছি ইয়ার আলী, জামাল শেখ ও নান্নু নভেম্বরের শুরুতে ফরিদপুরে এসেছেন রাজশাহীর বাঘা থেকে। কৃষি কলেজ ও আশপাশের ছয় শত খেজুর গাছ থেকে রস নামাচ্ছেন তারা। বললেন, ‘আমরা ছাড়া আরও ৭০-৮০ জন গাছি এ এলাকায় কাজ করছেন।’

ফরিদপুর জেলা পাট ও পেঁয়াজ বীজের সঙ্গে সঙ্গে খেজুরের গুড় তৈরির জন্যও বিখ্যাত ছিল। কোনোরকম রাসায়নিক ছাড়াই খেজুরের গুড় উৎপাদন করতেন এখানকার গাছিরা। তাই সুনাম ছড়িয়ে পড়েছিল সারাদেশে।

এখন পরিবর্তিত সময়ে বেশিরভাগ গুড় ব্যবসায়ী রাসায়নিক মিশিয়ে গুড় উৎপাদন করছেন। তাই ৫০০ টাকায় বিক্রি করা যাচ্ছে ঝোলা গুড় আর ৭০০-৮০০ টাকায় পাটালি গুড়।

নান্নু মার্কেটে কাপড় এসেছে, শীত আসেনি

শীত ঠিকমতো পড়ছে না বেশ কয়েক বছর হলো। গত বছর গরম বস্ত্র ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনেছেন। এবারও ভয় পাচ্ছেন ঢাকার মীরপুরের নান্নু মার্কেটের দোকানদারেরা।

গাছি সংকটেও খেজুরের গাছ কমে যাচ্ছে।

ডিসেম্বরের শুরুতে গিয়ে দেখা গেল, সব দোকান গরম কাপড়ে ভরপুর, কিন্তু ক্রেতা নেই বললেই চলে। তাহলে পণ্য তুললেন কেন? প্রশ্ন করলে ইনট্যাক্ট ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী আমিন বললেন, ‘এর মাধ্যমেই তো আমাদের জীবিকা। ঘর খালি রাখলে আগামীবার ব্যবসাই ছেড়ে দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শীত একটা ভালো মৌসুম। বছর দশেক আগেও দিনে আমাদের ৬০-৮০ হাজার টাকা বিক্রি ছিল। এখন বিক্রি তিন ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। শীত এখন জানুয়ারি মাসে পড়ে; ডিসেম্বরেও পড়ে, তবে সেটা ধারাবাহিক নয়। সমস্যাটা এখানেই হইছে।’

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. কামরুল হাসান একটি মজার ঘটনার কথা জানালেন। সেটা সাত-আট বছর আগের কথা। সেপ্টেম্বর নাগাদ একজন ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন, শীত এবার কেমন পড়বে।

কামরুল হাসান নিয়মমাফিক তাদের পূর্বাভাস জানালেন। শেষে লোকটির পরিচয় জানতে চাইলেন। উত্তরে ফোনদাতা বললেন, ‘আমি একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী। শীত বেশি পড়লে বেশি বিনিয়োগ করব, তাই আপনার থেকে আগেভাগে জেনে নিলাম।’

১৮৩০ সাল থেকে বৈজ্ঞানিকভাবে তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা শুরু হয় পৃথিবীতে। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তাপমাত্রার ওঠানামা যা হয়েছে, তার গড় নির্দিষ্ট মাত্রার নিচেই ছিল। ১৯৮০ সালের পর থেকে এ মাত্রা কখনোই নিচে নামেনি।

আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বললেন, ‘গেল চার দশকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার দশমিক ৪ থেকে দশমিক ৬ ডিগ্রি। ২০১০ সালের পর ঢাকার তাপমাত্রা কখনোই ৭.২ ডিগ্রির নিচে নামেনি। ২০১৯ সালে ছিল ১২ ডিগ্রি, আর ২০২২ সালে ১২.২ ডিগ্রি।’

তিনি আরও বলেন, ‘নগরায়ণের কারণে ঢাকা যদিও পরিমাপের আদর্শ স্থান নয়, তবে ধর্তব্যের বাইরেও নয়।’

আসল খেজুররস থেকে তৈরি গুড়ের কেজি ২০০০ টাকা।

কামরুল হাসান যোগ করলেন, ‘তাপমাত্রার কিছু ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়েছে। বৈশ্বিক উষ্ণতাই প্রধানত দায়ী। ৪ ডিসেম্বর ২০২৪-এর কথা ধরা যাক। ঢাকা ও টাঙ্গাইলের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারের আশপাশে। অথচ তাপমাত্রার ব্যবধান ৪ ডিগ্রি। এটা আমলে নেওয়ার মতোই ব্যাপার।’

নরওয়েতেও আনন্দ নেই!

গেল নভেম্বরে কামরুল হাসান নরওয়েতে গিয়েছিলেন। সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, শীত সেখানেও জাঁকিয়ে পড়ছে না। এতে তারা অখুশি, কারণ তাদের আইস স্পোর্টসগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

উষ্ণায়নে সারা বিশ্বই ভুক্তভোগী। পৃথিবীতে উষ্ণ ও শীত চক্র বর্তমান আদি থেকেই। প্রাকৃতিক এ চক্র রোখার সুযোগ নেই। কিন্তু মানুষ যখন তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে, তখন তা রোখার চেষ্টা করা দরকার।

শিল্পায়নের ফলে প্রচুর কার্বন বাতাসে নিঃসৃত হচ্ছে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন শিল্ড বা আবরণ তৈরি হচ্ছে। ১৭৫০ সালের শিল্প বিপ্লবের পর থেকে এর শুরু, আর ১৯০০ সাল থেকে এর ব্যাপকতা তৈরি হয়েছে।

কামরুল হাসান জানালেন, ‘শিল্ড ভেদ করে সূর্যরশ্মি পৃথিবীতে নামে ঠিকই, কিন্তু বের হতে পারে না। ফলে পৃথিবী গরম হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদি ১ ডিগ্রি বেড়ে যায়, তবে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করবে।’

বরফাচ্ছাদিত বলে মেরু অঞ্চল পুরো তাপই বায়ুমণ্ডলে ফেরত পাঠায়। যদি বরফ গলে যায়, তবে মেরু অঞ্চল তাপ শোষণ করতে শুরু করবে, আর পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়বে।

নগরায়ণ দূষণও বাড়াচ্ছে। আফগানিস্তান, দিল্লি, ঢাকা হয়ে মিয়ানমার পর্যন্ত ২৪০০ কিলোমিটারের একটি দূষণ বেল্ট তৈরি হয়ে গেছে। এর ফলে শীত পড়ছে না, কিন্তু কুয়াশা জমে যাচ্ছে।

ছয় বা সাত বছর বয়স থেকে একটি খেজুর গাছ রস দেওয়া শুরু করে।

আমাদের ভাটির দেশ বলে কুয়াশা আরও বেশি জমছে, যাকে ‘ভ্যালি ফগ’ নামে চিহ্নিত করা হয়। কুয়াশার কারণে সূর্যরশ্মি পৌঁছাতে পারছে না। ফলাফল, তাপমাত্রা না কমলেও ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।

‘কোল্ড ওয়েভ’ নয়, ‘কোল্ড ডে’

কামরুল হাসান বললেন, ‘সাধারণত তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নীচে নামলে আমরা কোল্ড ওয়েভ বা শৈত্যপ্রবাহের আগাম বার্তা দিই। আমাদের এখানে তাপমাত্রা ১০-এর নীচে নামছে না, কিন্তু ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে তেমনই, কারণ ওই কুয়াশা। আগে আমরা একে কোল্ড ওয়েভ বলেছি, এখন বলছি কোল্ড ডে।

এ যে একটা ফাঁদে আমরা পড়েছি, তাতে শীত-মুখাপেক্ষী ফসলের ক্ষতি হবে। যেমন আলুর আকার ছোট হবে বা পচন ধরবে, গমের শীষ ফুটবে না, খেজুরের রস সুস্বাদু হবে না।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (সরেজমিন) আবু জাফর আল মুনছুর অবশ্য নিরাশ নন। অভিজ্ঞতায় তিনি দেখেছেন, কৃষক এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি অভিযোজনক্ষম।

হাইব্রিড ও ইনব্রিড জাতের বীজ ব্যবহার করে কৃষক অধিক ফসল ফলাতে সক্ষম হচ্ছেন। শীত-মুখাপেক্ষী নয় এমন অনেক জাতের ফসল ফলানো এখন সম্ভব হচ্ছে। যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপির জন্য ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রাই যথেষ্ট।

শিমকে তাপমাত্রা অসংবেদনশীল করে তোলা হয়েছে। টমেটোর জন্য এখন তাপমাত্রা কম হলেই বরং খারাপ। তাই তিনি ভাবছেন, আগামীতে এসব ক্ষেত্রে আরো উন্নতি সাধন হবে।

মুন্সিগঞ্জে কি আলুর ফলন আগের তুলনায় কমে গেছে? আল মুনছুর বললেন, ‘আমরা উত্তরবঙ্গ থেকে এখন বেশি আলু পাচ্ছি, সত্যি। কিন্তু মুন্সিগঞ্জে আলু কমে যাওয়ার কারণ শীতের তীব্রতা বা দৈর্ঘ্য কমে যাওয়া নয়।

খেজুররস থেকে গুড় তৈরি করতে অনেক জ্বালানির প্রয়োজন হয়।

বরং সেখানে প্রচুর বসতি হচ্ছে, শিল্পায়ন হচ্ছে, ফলে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। একটা সময় ছিল, মুন্সিগঞ্জের কৃষক আলুর ওপরই সারাবছর নির্ভর করত। এখন নির্ভরতা বিভিন্ন দিকে সরে গেছে।

শ্রীমঙ্গল হলো খাড়ির মতো

২০১০ সালের পরের কিছু হিসাব অনুযায়ী, দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা (২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায় ২০১৮ সালে। সৈয়দপুরে ২০১৩ সালে রেকর্ড করা হয়েছিল ৩ ডিগ্রি, শ্রীমঙ্গলে ২০২৩ সালে ৫.৬ ডিগ্রি, ২০১৪ সালে ঈশ্বরদিতে ৬ ডিগ্রি, ২০২১ সালে নওগাঁর বদলগাছিতে ৬.৫ ডিগ্রি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলাম, উত্তরাঞ্চলে কেন তাপমাত্রা বেশি নামে? কামরুল হাসান বললেন, ‘কারণ একাধিক। শীতকালে সূর্য দক্ষিণে হেলে যায় সাড়ে ২৩ ডিগ্রি। তাই উত্তরাঞ্চল সূর্যের তাপ কম পায়।

তার ওপর উত্তরাঞ্চল হিমালয়ের কাছে, বিশেষ করে তেঁতুলিয়া। রাজশাহী অঞ্চলেও তাপ নেমে যাওয়ার রেকর্ড আছে। এখানে মরু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যের কারণে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত গরম হয়, আবার দ্রুতই ঠান্ডা হয়। তাই বদলগাছিতে ওই রেকর্ড তাপমাত্রা দেখা গেছে।’

শ্রীমঙ্গলের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ভিন্ন। সিলেটে কিন্তু সর্বনিম্ন তাপমাত্রার কোনো রেকর্ড নেই, অথচ শ্রীমঙ্গলে একাধিকবার রয়েছে। এর কারণ এটি একটি হাই প্রেশার জোন।

অনেকটা সমুদ্র উপকূলের খাড়ির মতো। আশপাশ প্লাবিত হয় না, কিন্তু খাড়ির গভীরতা পানি টেনে জমিয়ে রাখে। শ্রীমঙ্গলও উপত্যকা হওয়ায় আশপাশ থেকে ঠান্ডা টেনে এনে জমিয়ে রাখে।

‘জরিমানা দিতে হবে খেজুরের রসের জন্যও’

শীত যত বেশি পড়ে, রসও তত বেশি হয় এবং স্বাদও বাড়ে।

কামরুল হাসান খেজুরের রসের ঘাটতিতে বিশেষ চিন্তিত। তার বালক বয়সে খেজুরের গুড় ছিল লোভনীয় খাবার। তখনকার গ্রামবাংলা নবান্নে নতুন সুগন্ধি চাল আর খেজুরের গুড়ে মাতোয়ারা ছিল।

পুষ্টিবিজ্ঞান সাক্ষ্য দেয়, খেজুরের গুড় চিনির চেয়ে ভালো। কিন্তু আসল খেজুরের গুড়ের দাম এখন চিনির চেয়ে ১৫ গুণ বেশি।

দিনকয় আগে বয়স্যদের সঙ্গে বাচ্চু শেখের ঝগড়া হয়েছিল মিরকাদিম বাজারে। একজন বলছিলেন, ৫০০ টাকায় আসল গুড় পাওয়া যায়। বাচ্চু শেখ বলছিলেন, ১০০০ টাকা দেব, এনে দাও।

তিনি হিসাব করে দেখিয়েছিলেন, ২০০০ টাকার কমে এক কেজি আসল গুড় উৎপাদন সম্ভব নয়। কারণ ভেজালমুক্ত এক কেজি খেজুরের রসের দাম ২০০ টাকা। ৮ কেজি রস পোড়ালে ১ কেজি গুড় হয়।

পোড়াতে জ্বালানি লাগে আরও ২০০ টাকার। সাকল্যে হিসাবটি ২০০০ টাকায় গিয়েই দাঁড়ায়।

বর্ষার চেয়ে শীত বন্দনা গানে-কবিতায় কম, কিন্তু শীতে পরব বেশি। এ সময় পিঠা খাওয়ার, বেড়াতে যাওয়ার ধুম পড়ে যায়। হাঁসের মাংস দিয়ে ছিটা রুটি খেতে সারা বছর লোকে শীতের অপেক্ষা করে।

আরাম করে ঘুমানোর জন্য লেপ তুলে রাখে দেরাজে। বিয়ের অনুষ্ঠানের তারিখও শীতে ফেলা হয়। কবিগানের আসরও বেশি আয়োজিত হয় এ সময়ে।

এখন যদি শীত না পড়ে, তবে কী হবে?

কামরুল হাসান বললেন, ‘বদলে যাবে ঐতিহ্য। সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠানে বদল আসবে। সংস্কৃতি ধ্বংসের দায়ে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জরিমানা দেওয়া দরকার। খেজুরের রসের ঘ্রাণ বিলীন করার জন্যও তাদের দায়ী করতে হবে।’

দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ড

 

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটেগরিতে আরো খবর
Kurigram Songbad © 2025. All Rights Reserved.
Built with care by Pixel Suggest
error: Content is protected !!